ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঘুরে দাঁড়াতে চায় জিম্বাবুইয়ে

আজ জিতলেই সিরিজ বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ৯ নভেম্বর ২০১৫

আজ জিতলেই সিরিজ বাংলাদেশের

মিথুন আশরাফ ॥ প্রথম ওয়ানডেতে ১৪৫ রানের বড় ব্যবধানে জিতেছে বাংলাদেশ। এই জয়ের ফলে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। আজ জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডে আছে। এ ম্যাচটি জিতলেই এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ জয় নিশ্চিত করবে বাংলাদেশ। সিরিজ জিততেই নামবে মাশরাফিবাহিনী। তবে এ ম্যাচে, এমনকি পুরো সিরিজেই আর খেলবেন না সাকিব আল হাসান। সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর পাশে থাকতে প্রথম ওয়ানডে শেষেই যুক্তরাষ্ট্র গেলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। সিরিজে আর সাকিবকে পাওয়া যাবে না। সাকিব না থাকলেও সিরিজ জয়ের, দাপটে জয়ের যে মিশন তা থেকে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা পিছপা হচ্ছে না। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সিরিজে জিতলে ঘরের মাঠে টানা পঞ্চম ওয়ানডে সিরিজ জেতা হবে। বাংলাদেশের ওপেনার তামিম ইকবাল বলেছেন, ‘দেখেন, এ বছরটা বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য খুবই ইতিবাচক। সিরিজ জেতা বা রেকর্ড নিয়েও খুব চিন্তা করছি না। আমাদের চিন্তা কেবল কালকের (আজকের) ম্যাচটি নিয়ে। ওই ম্যাচটি আমরা জিততে চাই। ওইটা জিতলে সিরিজও জেতা হয়ে যাবে। আমাদের পরিকল্পনায় থাকে প্রসেসটা ঠিক রাখা।’ এ সিরিজসহ বাংলাদেশ ৬১তম দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলছে। এর আগে ১৯তম সিরিজ জয় হয়েছে। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে জিতলে ২০তম সিরিজ জয় হবে। আর জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষেই এরমধ্যে ১৫তম সিরিজ খেলছে বাংলাদেশ। সিরিজ জয় হলে ৯ম সিরিজ জয় হবে। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডের মতো এত সহজ জয় নাও মিলতে পারে বলেই জানালেন তামিম, ‘এত সহজে জিততে পারব এটা আমরা ভাবিনি। ম্যাচে আগেই আমরা একটা বিষয় জানতাম যে, এদের সঙ্গে কষ্ট করেই জিততে হবে আমাদের। আমাদের চিন্তা ছিল প্রসেসগুলোতে ঠিক থাকা, ভাবনায় সঠিক থাকা। তারপর যদি আমরা সব কাজ ভালভাবে করি, তবে যে রেজাল্ট আশা করি তা পাওয়া যাবে। মাঠে নামব, খেলব আর জিতে যাব; এ রকম কিছু আমাদের কোন খেলোয়াড়ের মাথায় ছিল না। সব সময় আমরা খুবই সিরিয়াস ছিলাম। বাকি দুই ম্যাচেও আমরা তাই থাকব। পরের দুই ম্যাচে এা সহজে আমরা নাও জিততে পারি। পরের দুই ম্যাচে খুব কষ্ট করেই জিততে হতে পারে। আমাদের কাজ হবে প্রসেসগুলো ঠিক রাখা।’ এখন বাংলাদেশের লক্ষ্য আরও বড় হয়ে গেছে। জানালেন তামিম, ‘যে কোন সিরিজের প্রথম ম্যাচটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম ম্যাচে খেলোয়াড়রা একটু দ্বিধায় থাকে, একটু নার্ভাস থাকে। প্রথম ম্যাচের ফলাফল যাদের পক্ষে যায়, তাদের আত্মবিশ্বাস স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যায়। সেই আত্মবিশ্বাস আমাদের আছে। আমরা জানি পরের দুটি ম্যাচ জিততে হলে সমানভাবে পরিশ্রম করতে হবে, শুরুটা ভাল করতে হবে; ব্যাটিং-বোলিং দুই বিভাগেই। এই প্রসেসটাই আমরা ঠিক রাখার চেষ্টা করব।’ ব্যাট হাতে কিছুই করতে পারেননি। তবে বল হাতে প্রথমবারের মতো ওয়ানডেতে পাঁচ উইকেট তুলে নিয়েছেন। সাকিবের এই অসাধারণ বোলিংয়ে জিম্বাবুইয়ে দ্রুতই গুটিয়ে যায়। ১২৮ রানেই অলআউট হয়ে যায়। সাকিব জানতেন ব্যাটিংয়ের ব্যর্থতা বোলিংয়ে পুষিয়ে দিতে পারবেন। তাই তো প্রথম ওয়ানডে শেষে এক ফাঁকে ধারাভাষ্যকারের মুখোমুখি হয়ে সাকিব জানালেন, ‘পাঁচ উইকেট নিতে পারাটা অবশ্যই স্পেশাল, এর আগে আমার এই অর্জন ছিল না। আমি দুই ভাবে দলকে সাহায্য করতে পারি। আমি জানি, ব্যাট হাতে খারাপ করলেও সেটা বল হাতে পুষিয়ে দিতে পারব। সেটাই করেছি। আমি খুশি যে, দলের উপকারে আসতে পেরেছি। দল জিতেছে। এটাই সবচেয়ে বড় পাওনা।’ কিন্তু সিরিজে আর সাকিবকে পাচ্ছে না দল। তাই যে কোন এক বিভাগে নিশ্চিত নৈপুণ্য করার মতো ক্রিকেটারও থাকছে না। তবে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফির ‘রান মেশিন’ মুশফিকুর রহীম থাকছেন। তার ওপর স্পটলাইটও থাকছে। প্রথম ওয়ানডেতে শতক করে দলকে রক্ষা করেন মুশফিক। ম্যাচসেরাও হন। ম্যাচ শেষে মুশফিক বলেন, ‘আমার এই বছর খুবই ভাল গেছে। শেষ দুই সিরিজে আমার যে প্রত্যাশা ছিল কিংবা স্ট্যান্ডার্ড ছিল সে অনুযায়ী রান করতে পারিনি। তারপরও চেষ্টা করেছি যতটুকু পারি কন্ট্রিবিউট করা। টপঅর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে সবারই দায়িত্ব থাকে বড় স্কোর করা। প্রথম ওয়ানডেতে সেই কাজটা করতে পেরেই ভাল লাগছে। এটাকে রিলিফ বলব না। এটাকে আত্মবিশ্বাসের অন্য ধরনের একটা লেভেল বলব। প্রথম ওয়ানডেতে আমাদের বড় একটা রানের দরকার ছিল। ওভারঅল সেই সুযোগটি কাজে লাগাতে পারায় আমি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাচ্ছি। চেষ্টা করব এই ধারাবাহিকতা যেন থাকে।’ তা থাকলেই হয়। না হলে সাকিব না থাকায় যে অভাব বোধ হতে পারে। আজ দ্বিতীয় ওয়ানডের আগে রবিবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত অনুশীলন করেন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। তবে সবাই অনুশীলন করেননি। ৪০ রান করা তামিম, ব্যর্থ হওয়া মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ অনুশীলন করেন। ইমরুল কায়েসও অনুশীলন করেন। বোঝাই যাচ্ছে, আজ ওপেনিংয়ে ইমরুলকে দেখা যেতে পারে। মাশরাফিও অনুশীলন করেননি। আত্মীয় মারা যাওয়ায় অনুশীলনে আসেননি। তবে আজও খেলবেন মাশরাফি। প্রথম ওয়ানডের পর বলেছিলেন, ‘নিজের শতভাগ আমি দিতে পারিনি। এখনও আমাকে অনেক পরিশ্রম করতে হবে। তবে আমি হ্যাপি যে, দল জিতেছে। আর জয়ের মধ্যে থাকা অবশ্যই আনন্দদায়ক। মুশফিক যে রান মেশিন, সেটার প্রমাণ আবারও পাওয়া গেল। ওর জন্যই রানটা এত বড় হয়েছে। আর সাকিবের বোলিং ছিল দুর্দান্ত। প্রথমবারের মতো ও পাঁচ উইকেট পেল। ওকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।’ সেই সঙ্গে দ্বিতীয় ম্যাচেও জয়ের আশা প্রকাশ করেছেন মাশরাফি। জয়টি মিলে গেলেই হয়। সিরিজ আজই নিশ্চিত হয়ে যায়। সিরিজ জিততেই আজ নামবে বাংলাদেশ।
×