ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

যানজট ও সময় জ্ঞান

প্রকাশিত: ০৬:২৬, ৯ নভেম্বর ২০১৫

যানজট ও সময় জ্ঞান

জীবন ছোট। এতটুকু আগে অনুধাবন করতে হবে। কতটুকু ছোট, বুঝতে হবে। প্রতিটি জীবন মূল্যবান, সবার নিজের নিজের জন্য। আমাদের জীবন আমাদের সবার কাছে সবচেয়ে মূল্যবান। এটা ভাবার কোন কারণই নেই যে, আমরা কেউ নিজের জীবনের চেয়ে অন্য কারও যে কোন প্রয়োজনকে বেশি গুরুত্ব দিব। গতকালকে ১৬.১০.২০১৫ তাং উত্তরা থেকে ধানম-ি যেতে ৩ ঘণ্টা সময় লাগল। আজকে রাস্তায় যেতে যেতে দেখলাম একটি বাসে লেখা দোয়ারিবাজার-সদরঘাট। বাসের জানালা দিয়ে যাত্রীদের মলিন মুখগুলো দেখে মনে হলো যাত্রীরা কি অসহায়! কতক্ষণ লাগবে? হতে পারে ৪-৫ ঘণ্টা। ধুলোবালি ভরা রাস্তা, উপরে সূর্যতাপ। চারদিকে হর্নের বিকট আওয়াজ। এরই মাঝে অ-প্রয়োজনীয় ৪-৫ ঘণ্টা রাস্তায় বসে থাকলে কর্ম-উদ্দমতা, মানসিক বিকাশ, মানুষ মানুষের তড়ে এতটুকু ভাবার মতো মানসিকতা শূন্যের কোটায় চলে আসবে। যার কিছু প্রতিফলন আমাদের সমাজে আমরা দেখতে পাই। সবার মাঝে একটা অসহিষ্ণুতা। বিবেকবিবর্জিত কর্মকা-ে আমরা অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছি। তাতে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছে ও হবে। এই ক্ষতি আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে বলে আর্থিক ক্ষতির চেয়ে বহু বহু গুণ বেশি। রাস্তায় যেতে যেতে দেখলাম একটা গাড়ির ড্রাইভার খুব জোরে জোরে বিকট শব্দে হর্ন দিচ্ছে অথচ সামনে একটা রিক্সায় এক মা ২/৩ বছরের ফুটফুটে চাঁদের মতো একটি বাবুকে নিয়ে বসে আছে। খেয়াল করলাম রিক্সাটারও কোনদিকে যাওয়ার সুযোগ নেই। আমার কাছে খুব বিরক্তিকর ও খারাপ লাগছিল। মনে কষ্ট হচ্ছিল। বিশেষ করে চাঁদের মতো সোনামনি বাবুটার জন্য। ড্রাইভারকে বললাম কেন হর্ন দিচ্ছো? তোমার হাতের নিচে আছে ও টিপে বিকট আওয়াজ করলে কোন জবাবদিহিতা নেই সে জন্যই তো! আসলে মূল কারণ সার্বিক পরিস্থিতিতে সবাই আমরা জীবনের মূল্যবোধগুলোও হারিয়ে ফেলছি। ঐ যে সুকান্তের কবিতার পঙ্ক্তি ‘পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি’। অভাবে মানুষ চাঁদকে ভাবে তার নিজের প্রয়োজনের মতো করে। তেমনি এই যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় ত্যক্ত-বিরক্ত মানুষ আমরা, কর্মস্থলেও অসহিষ্ণু আচরণে মেতে উঠছি। নিজের জীবনের যেখানে মূল্যবোধ নেই, মানব সৃষ্টি কষ্টের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত, তখন আমাদের কাজের মাধ্যমে যে কোন সেবা ধৈর্যের সঙ্গে দিতে পারা বা কেউ আশা করাটা যুক্তি সঙ্গত নয়। সেবা বলতে রিক্সাওয়ালা ওর সেবা, দোকানদার থেকে শুরু করে সবাই যার যার নিজের কাজ অন্যের জন্য সেবা। এটা হলো চেন রিয়েকসন। রাস্তায় ত্যক্ত-বিরক্ত, তার প্রভাবে সব জায়গায় সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে খারাপ ব্যবহারে অভ্যস্থ হয়ে যাচ্ছি। সবার মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে। সমাজে তাই অলিখিত অমানবিক অশান্তি বিরাজমান। রাস্তার জ্যাম শুধু সময় ও আর্থিক ক্ষতিই না, সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক অশান্তির বড় কারণ। সবাই যদি একটু যানজটমুক্ত রাস্তা পেত, নিজ নিজ কর্মস্থলে আসা-যাওয়া ও সর্বজায়গায় চলাচল করার, তাহলে এমনিতেই সতেজ মানসিক ও মানবিক শক্তি পেত। সবার সঙ্গে সৌজন্যমূলক ব্যবহার করার মানসিকতা তৈরি হতো। সংশ্লিষ্ট মানুষদের মমতা দিয়ে সেবা দিত। তখন যারা যারা এমন সৌজন্যমূলক ব্যবহার ও সেবা পেত তারা তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ভাল ব্যবহার ও সুন্দর সেবা দেবার প্রয়োজনও বোধ করত। অর্থ্যৎ চেন রিয়েকসন। কারণ মানুষ যখন কোন কিছু সহজ ও সম্মানের সঙ্গে পায় তখন সে নিজেকেও অপরের জন্য তেমনভাবে সব কিছু দেয়ার প্রয়াস খুঁজে। আর যখন কঠিন ও অসম্মানের সঙ্গে পায় তখন সে নিজেও অপরকে সেভাবে দেয়ার মানসিকতায় অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। জীবন থেকে যে শিক্ষা তা নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করা সহজ। মানুষের জীবন ব্যবস্থায় একটু সুখ-শান্তির কিছু কিছু আবহ দেয়ার জন্য যানজট নিরসন খুব প্রয়োজন। বিশ্ব ভ্রহ্মা-ের ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন বছরের তুলনায় আমাদের ৭০-৮০ বছরের জীবন তো ‘টেন্ডস টু জিরো’ সময়। কিন্তু প্রতিদিন ৪-৫ ঘণ্টা নষ্ট হওয়া আমাদের এই ছোট জীবনের একটা বড় অংশ। সময়, অর্থ, দুটোর সঙ্গে সঙ্গে সমাজের তথা দেশের মধ্যে একটা বড় ক্ষতি হচ্ছে আর তা হলো মানুষের অসহিষ্ণুতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। ফল স্বরূপ যে বিরূপ প্রভাব সমাজে পরছে তা অনেক অনেক বেশি। আমাদের যানজটে কত ঘণ্টা নষ্ট হয়! এর হিসাব মিলান প্রয়োজন। জনগণ আমরা যদি সচেতন হয়ে সবাই মিলে কথা না বলি, আমাদের যারা কর্তৃপক্ষ তাদেরকে জানান না দেই তবে সমস্যা বাড়তেই থাকবে। যদিও জনগণের যানজট নিরসনে ভূমিকা রাখার খুব বেশি সুযোগ নেই। তবে রাস্তার কাজগুলো যদি মাস্টারপ্ল্যান করে করার ব্যবস্থা করা হয় অর্থাৎ গ্যাস পানি লাইনের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতায় দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ নিয়ে কাজ করা যায় তখন বার বার রাস্তাকাটার দরকার হয় না, এতে কিছুটা হলেও জনগণের ভোগান্তি ও লাঘব হবে আশা করা যায়। যানজটে কোটি কোটি মানুষের কোটি কোটি ঘণ্টা সময় জীবনের কোন কাজে তো আসবেই না সঙ্গে সঙ্গে কষ্ট আর ক্লেসে ভরে উঠছে। আমরা জাতিগতভাবে অধৈর্য হয়ে যাচ্ছি। প্রতিদিনে এমন কষ্টে সবাই দিশেহারা। এর ফলে মানসিক বিরূপ প্রভাব শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার মাঝে পড়ছে। মাসুল অনেক বেশি। তাতে জনজীবন অশান্ত। কি করলে কি পদক্ষেপ নিলে কিভাবে মাস্টারপ্লান করলে সম্পূর্ণ যানজট মুক্ত হওয়া যাবে, জাতি রক্ষা পাবে, তা নিয়ে আজকে এখন থেকেই কাজ শুরু করার আহ্বান জানাচ্ছি। আজকে শুরু করলেও তো দশক দশক সময় লেগে যাবে। আমাদের কত ঘণ্টা নষ্ট হয়! এর হিসাব মিলান প্রয়োজন। জনগণ আমরা যদি সচেতন হয়ে সবাই মিলে কথা না বলি, আমাদের যারা কর্তৃপক্ষ তাদেরকে জানান না দেই তবে সমস্যা বাড়তেই থাকবে। যদিও জনগণের যানজট নিরসনে ভূমিকা রাখার খুব বেশি সুযোগ নেই। তবে রাস্তার কাজগুলো যদি মাস্টার প্ল্যান করে করার ব্যবস্থা করা হয় অর্থাৎ গ্যাস পানি লাইনের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যতটুকু সম্ভব সহোযোগিতা নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ নিয়ে কাজ করা যায় তখন বার বার রাস্তা কাটা দরকার হয় না, এতে কিছুটা হলেও জনগণের ভোগান্তি ও যানজট লাঘব হবে আশা করি। যানজটে কোটি কোটি মানুষের কোটি কোটি ঘণ্টা সময় জীবনের কোন কাজে তো আসবেই না সঙ্গে সঙ্গে কষ্ট আর ক্লেশে ভরে উঠছে ও কাটছে। অসহিষ্ণুতা বেড়ে যাচ্ছে। আমরা জাতিগতভাবে অধৈর্য হয়ে যাচ্ছি। এর ফলাফল খুব খারাপ ও এর মাসুল অনেক বেশি। কি করলে, কি পদক্ষেপ নিলে, কিভাবে মাস্টার প্লান করলে সম্পূর্ণ যানজটমুক্ত হওয়া যাবে, জাতি রক্ষা পাবে, তা নিয়ে আজকে এখন থেকেই কাজ শুরু করার আহ্বান জানাচ্ছি। আজকে শুরু করলেও তো দশক দশক সময় লেগে যাবে।
×