গৌতম পাণ্ডে ॥ ‘আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়, দাদু মানুষকে অনেক কিছু দেয়ার পরও অনেক লাঞ্ছনা, অপমান সহ্য করেছেন। জীবনের শেষ কয়েকটা বছর বাংলাদেশের মানুষের কাছে তিনি যে মর্যাদা, শ্রদ্ধা এবং জাতীয় কবি হিসেবে যে স্বীকৃতি পেয়েছেন, তাতে তাঁর অতীতের সব লাঞ্ছনা-গঞ্জনা নস্যাৎ করে দিয়েছে। এখানে এসে যখন দেখি দাদুর কাজ নিয়ে গবেষণা হচ্ছে, তখন মনে হয় দাদু রয়েছেন সঙ্গে। অন্তত একটা জায়গা রয়েছে, যেখানে মানুষ তাঁকে নিয়ে ভাবে রসখানে অনেক কিছু দেয়া যায়। এমন একটা মানুষের উত্তরসূরি হয়ে, একটা দ্বায়বদ্ধতার জায়গা থেকে তাঁকে কিছু করার জন্য বার বার ছুটে আসি এখানে’ গুলশানের ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে শনিবার সন্ধ্যায় আয়োজিত ‘রবি পরিক্রমায় নজরুল’ অনুষ্ঠানে কথাগুলো বলেন, কাজী নজরুল ইসলামের পৌত্রী আবৃত্তিকার ও কণ্ঠশিল্পী অনিন্দিতা কাজী।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের মধ্যে যে সম্পর্ক ছিল, তারই ধারাবাহিকতার সূত্র ধরে ‘রবি পরিক্রমায় নজরুল’ নামের এ আয়োজনটি করে ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। কথামালা আর গান দিয়ে অনুষ্ঠানটি সাজিয়েছিলেন ভারত থেকে আগত নজরুলের পৌত্রী অনিন্দিতা কাজী। অনুষ্ঠানে তিনি নজরুল সঙ্গীত এবং শিল্পী লিলি ইসলাম রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করেন।
শুরুতে অনিন্দিতা বলেন, বাংলা সাহিত্যের দুই দিকপাল প্রতিভা, দেশ বরেণ্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। একজনের জন্ম ১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫ বৈশাখ, অন্যজনের জন্ম ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যেষ্ঠ। দু’জনের মধ্যে পরস্পর শ্রদ্ধা, একে অপরের প্রতি ভালবাসা সবই তাদের সমসাময়িকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। নজরুলের জীবনে নানা প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথের নাম যুক্ত হয়েছে। কখনও তিনি রবীন্দ্রনাথের প্রতি তাঁর অন্তরের শ্রদ্ধা ও ভালবাসার জোয়ারে নিজেকে ভাসিয়ে দিয়েছেন, কখনও কবিগুরুর প্রতি সঙ্গত-অসঙ্গ অভিমানে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথও কখনও নজরুলের প্রতি স্নেহে আপ্লুত হয়েছেন, সঙ্গত কারণেই কখনও তাঁকে স্নেহ থেকে বঞ্চিত করেছেন। দুজনের মধ্যে এই যে আলো-আঁধারের খেলা অনেকের কাছে কৌতূহল মনে হয়। দুই কবির পরস্পরের মনোভাব তাদের লেখার মধ্যে জানিয়ে গিয়েছেন। এখানে কল্পনার আশ্রয় নেয়ার কোন অবকাশ নেই। দুই কবির পরস্পর সম্পর্কের খ-িত চিত্রকে তুলে ধরতে তাই আমাদের আজকের আয়োজন ‘রবি পরিক্রমায় নজরুল’। এরপরই ‘দাঁড়িয়ে আছ তুমি আমার গানের পারে’ রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী লিলি ইসলাম। অনিন্দিতার কণ্ঠে নজরুলের ‘দারিদ্র্য’ কবিতা পাঠের পর লিলি ইসলামের কণ্ঠে পরিবেশিত হয় রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘তোমারে জানিনে হে তবু মন তোমারে ধায়’। এরপর ‘অঞ্জলি লহ মোর সঙ্গীতে‘ নজরুল সঙ্গীত পরিবেশন করেন অনিন্দিতা কাজী। এভাবে পাঠ, আবৃত্তি ও গানের মাধ্যমে চলতে থাকে অনুষ্ঠান। শ্রোতারা নিঃশব্দে, নিভৃতে উপভোগ করতে থাকে উভয়ের পরিবেশনা। নজরুল খুব ভাল রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতে পারতেন। তিনি যেসব রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতেন তারমধ্যে একটি পরিবেশন করেন শিল্পী লিলি ইসলাম। গানের কথা ‘আমার নয়ন ভুলানো এলে’। লিলি ইসলামের কণ্ঠে যে রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশিত হয়ে তা হলো-তোমার পূজার ছলে তোমায় ভুলে থাকি, আমার মাথা নত করে দাও হে তোমার চরণ ধুলার তলে, তোমার হলো শুরু আমার হলো সারা, গানগুলো মোর সৈবালের দল, আসিবে তুমি জানি প্রিয়, তুমি কেমন করে গান করো হে গুণী, যে রাতে মোর দুয়ারগুলো ভাঙল ঝড়ে, অগ্নিবীণা বাজাও তুমি কেমন করে ও আজি ঝড়ের রাতে তোমার আভিসার। শিল্পী অনিন্দিতার পরিবেশিত নজরুল সঙ্গীত হলো-মোর ঘুমঘোরে এলে মনোহর, সৃজন ছন্দে আনন্দে নাট নটবর ও ভুলি কেমনে আজ যে মনে’।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: