ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন নৌসিল্ক রুট

প্রকাশিত: ০৪:২৯, ১০ নভেম্বর ২০১৫

নতুন নৌসিল্ক রুট

বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সুসম্পর্ক অতিশয় প্রাচীন। ঢাকার অনতিদূরে মুন্সীগঞ্জের বজ্রযোগিনী গ্রামের বঙ্গসন্তান শ্রী অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞানের জ্ঞানান্বেষণের নিমিত্ত সেই হাজার-বারো শ’ বছর আগে চীন, বিশেষ করে সুদূর দুর্গম নিষিদ্ধ নগরী তিব্বত ভ্রমণের খবর রীতিমতো বিস্ময় জাগায় বৈকি! নানা ঐতিহাসিক গবেষণা ও তথ্য মতে, চীনের নানা অঞ্চল ও ঐতিহাসিক স্থানের সঙ্গে ভারত উপমহাদেশের নানা অঞ্চলের জনজীবনের অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক যোগাযোগ সেই সুপ্রাচীনকাল থেকেই প্রচলিত ছিল। তদুপরি যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে সড়ক ও সমুদ্রপথ- উভয়ই ব্যবহৃত হতো। তবে এও সত্য যে, উভয় রুটই সেই প্রাচীনকালে স্বভাবতই ছিল বিপদসঙ্কুল, সমূহ ঝুঁকিপূর্ণ, সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল। এমনকি এই পথে দক্ষিণ এশিয়া হয়ে ইউরোপে যাওয়ার পথও প্রশস্ত ছিল। মিং রাজ বংশের আমলে চীনের নৌচলাচল শিল্পের প্রভূত উন্নতি হওয়ায় নৌপথের গুরুত্ব সবিশেষ বৃদ্ধি পায়। কথিত আছে সুখ্যাত নৌপরিব্রাজক ঝেং হে সাতবার নৌবহর নিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ভারত, আরব অঞ্চল ও পূর্ব আফ্রিকা ঘুরে বেড়ান। তিনি তখন এমনকি চীনা পণ্য নিয়ে ১৪২১ ও ১৪৩১ সালে তৎকালীন বাংলার রাজধানী সোনারগাঁওয়ে আসেন। বিখ্যাত হিন্দী লেখক সুপ-িত রাহুল সাংকৃত্যায়নের বিভিন্ন রচনায় এ বিষয়ে নানা তথ্য মেলে। চীন এই নৌপথটি, যেটি নব্য নৌসিল্ক রুট হিসেবে পরিগণিত হতে পারে, পুনরুজ্জীবন ও পুনর্প্রতিষ্ঠায় সবিশেষ আগ্রহী বলে খবরে প্রকাশ। চীনের এই প্রস্তাব আপাতত ইতিবাচক হিসেবে বিবেচনা করছে বাংলাদেশ। আসন্ন ডিসেম্বরে চীনের প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফরকালে এ বিষয়ে দু’পক্ষের আনুষ্ঠানিক ঘোষণাও আসতে পারে। গত বছর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেজিং সফরকালে চীনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে এ বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা করেন। নৌসিল্ক রুটে যোগ দেয়ার ফলে এটি যে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নতুন মাত্রা যোগ করবে, এ বিষয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। চীন প্রস্তাবিত সিল্ক রুটে বিশ্বের প্রায় ৫০টি দেশকে যোগ দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ইতোমধ্যে যোগও দিয়েছে। সড়ক ও আকাশপথের প্রভূত উন্নতি সত্ত্বেও দ্বিমতের কোন অবকাশ নেই যে, সমুদ্রপথে যোগাযোগ সর্বদাই সহজ ও ব্যয়সাশ্রয়ী। প্রাথমিক পর্যায়ে বন্দর বিনির্মাণে খরচ হলেও সমুদ্রপথ সর্বদাই অবারিত। বিভিন্নমুখী ব্যবহারের উপযোগী নিরাপদ নৌযানের উন্নতিও হয়েছে প্রভূত পরিমাণে। একই সঙ্গে বিপুল পরিমাণে বিশেষ করে খাদ্য ও কৃষিপণ্য আনা-নেয়া সম্ভব বিধায় খরচ অনেক কম এবং স্বল্পমূল্যে সরবরাহ সম্ভব, নিরাপদও বটে। ফলে নৌসিল্ক রুটটি চালু হলে সংশ্লিষ্ট সব দেশই যে সবিশেষ উপকৃত হবে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি সঞ্চার হবে তা বলাই বাহুল্য। বাংলাদেশ চট্টগ্রামের অদূরে সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। চীন এ বিষয়ে সবিশেষ আগ্রহী। তারা শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা ইতোমধ্যে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করে দিয়েছে। চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরকে ঢেলে সাজানোর পাশাপাশি পটুয়াখালীর পায়রাতে সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কথাও ভাবা হচ্ছে। বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত করতে হলে সমুদ্রপথে আমদানি-রফতানি তথা বাণিজ্য সক্ষমতা বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই। সে ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চীনের নব উদ্ভাবিত ও প্রস্তাবিত নৌসিল্ক রুটে সংযুক্ত হতে পারে বাংলাদেশ।
×