ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়নে এ অর্থ ব্যয় হবে

অবকাঠামো উন্নয়নে সহায়তা দিচ্ছে জাপান

প্রকাশিত: ০৪:৩৫, ১০ নভেম্বর ২০১৫

অবকাঠামো উন্নয়নে সহায়তা দিচ্ছে জাপান

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ দেশের পশ্চিমাঞ্চলের অবকাঠামো উন্নয়নে বড় ধরনের সহায়তা দিচ্ছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। এর পরিমাণ ১ হাজার ৯০৫ কোটি ১৯ লাখ টাকা। সহজ শর্তের এ ঋণে ছোট ও মাঝারি ধরনের ৬০টি (৩ হাজার ৮৮০ মিটার) সেতু এবং নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য একটি ৮৩৫ মিটার ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। এ সংক্রান্ত ওয়েস্টার্ন বাংলাদেশ ব্রিজ ইমপ্রুভমেন্ট শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের আওতায় সড়ক ও জনপথ অধিদফতর। তবে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ২ হাজার ৯১১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। জাইকার অর্থায়নের বাইরে ১ হাজার ৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে। আজ মঙ্গলবার এ প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন করা হতে পারে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠেয় সভায় সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সড়ক ও জনপথ অধিদফতর বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে সড়ক নেটওয়ার্ক উন্নয়ন কাজ করে থাকে। কিন্তু অর্থের সীমাবদ্ধতার কারণে বিদ্যমান অনেক ক্ষতিগ্রস্ত ও অনিরাপদ সেতু প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হয়নি। ট্রাফিক জ্যাম ও সড়ক দুঘর্টনার জন্য এ সব সেতু অনেকাংশেই দায়ী। এ সমস্যা দূরীকরণের জন্য জাপান সরকারের অর্থায়নে বাংলাদেশ সরকার দেশের পূর্বাঞ্চলের অবকাঠামো উন্নয়নে ইস্টার্ন বাংলাদেশ ব্রিজ ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টটি ইতোমধ্যেই বাস্তবায়িত হয়েছে। এর ব্যয় ছিল মোট ১ হাজার ১৮৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৫৭২ কোটি ৯৮ লাখ এবং জাইকার ঋণ থেকে ৬১৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছিল। দেশের পঞ্চিমাঞ্চলেও অসংখ্য সরু এবং অনিরাপদ ব্রিজের জন্য সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই নাজুক। এ পরিপ্রেক্ষিতে এবং পূর্বের প্রকল্পটির ধারাবাহিকতায় ওয়েস্টার্ন বাংলাদেশ ব্রিজ ইমপ্রুভমেন্ট প্রকল্পটির প্রস্তাব করা হয়েছে। এর আগে জাইকা বাংলাদেশের ১০৬টি সরু, অনিরাপদ ও ঝুুঁকিপূর্ণ ব্রিজের ওপর প্রিপারেটরি সার্ভে সম্পন্ন করা হয়েছে। এর মধ্য হতে প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় ৬১টি ব্রিজ নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে রংপুর জোনে ১৯টি, রাজশাহী জোনে ১৬টি, গোপালগঞ্জ জোনে ৭টি, খুলনা জোনে ৯টি, বরিশাল জোনে ৯টি এবং নরসিংদীতে নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর ওয়েস্টার্ন বাংলাদেশ ব্রিজ ইমপ্রুভমেন্ট শীর্ষক প্রকল্পটির ওপর গত ৫ আগস্ট পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য আরাস্তু খান জানান, প্রকল্পটি প্রক্রিয়াকরণ শেষ হয়েছে। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ছোট/মাঝারি ও বড় ব্রিজ নির্মাণ ও প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে দেশের পঞ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ উন্নত হবে এবং নতুন একটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের সঙ্গেও সংযোগ স্থাপিত হবে। এসব বিবেচনায় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে। যেসব জেলার ব্রিজ ও সেতু নির্মাণ এবং পুনর্নির্মাণ করা হবে সেগুলো হচ্ছে- ফরিদপুর, মাদারীপুর, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, পাবনা, নওগাঁ, রাজশাহী, বগুড়া, রংপুর, জয়পুরহাট, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, নীলফামারী, পঞ্চগড়, বাগেরহাট, যশোর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, বরিশাল, পিরোজপুর, নরসিংদী এবং নড়াইল জেলায়। প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে- ৩৩ দশমিক ২১ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ, ৪ হাজার ৭১৫ মিটার ৬১টি ব্রিজ নির্মাণ ও প্রতিস্থাপন, ৭ দশমিক ৫০ লাখ ঘনমিটার বাঁধের মাটির কাজ, ৪২ কিলোমিটার পেভমেন্ট নির্মাণ এবং পরামর্শক নিয়োগ, আউট সোসিং, এনজিও সেবা, যানবাহন ক্রয় ও আনুষাঙ্গিক কার্যক্রম করা হবে। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ সূত্র জানায়, সদ্য সমাপ্ত ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এক্সিলারেট গ্রোথ এ্যান্ড রিডিউসিং প্রভার্টির (পার্ট-২) সেক্টরাল স্ট্রাটেজিস প্রোগ্রাম এ্যান্ড পলিসিস এ সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের আওতায় ৪ হাজার ৬৭২ কিলোমিটার নতুন সড়ক নির্মাণ, ৮ হাজার ৪৩৩ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন বা পুনর্বাসন এবং ২৩ হাজার ৭৭৭ মিটার সেতু/কার্লভাট নির্মাণ, ১০ হাজার ৩৬২ মিটার সেতু পুনর্নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। এছাড়া সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়ও অবকাঠামো খাতে বিশেষ জোর দেয়া হয়েছে।
×