ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

৮০ বছর পর ফের প্রকাশিত হলো নজরুল অনূদিত রুবাইয়াৎ

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১০ নভেম্বর ২০১৫

৮০ বছর পর ফের প্রকাশিত হলো নজরুল অনূদিত রুবাইয়াৎ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পারস্যের কিংবদন্তি কবি ও কথাসাহিত্যিক ওমর খৈয়াম। তাঁর কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘রুবাইয়াৎ-ই ওমর খৈয়াম’। চতুস্পদী এই কাব্যগ্রন্থটির বাংলায় অনুবাদ করেছিলেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। ১৯৩৫ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল অনূদিত কাব্যগ্রন্থটি। ৮০ বছর পর পুনরায় প্রকাশিত হলো নজরুলের অনুবাদের গ্রন্থটি। লায়ন্স ক্লাব অব ঢাকা অনন্ত-এর সৌজন্যে বাংলাদেশে বইটির প্রথম মুদ্রণ করেছে ইমপ্রেস প্রিন্টিং লিমিটেড। নতুন প্রজন্মের সঙ্গে জাতীয় কবির প্রতিভার পরিচয় করিয়ে দিতে নব আঙ্গিকে প্রকাশিত হয়েছে ঐতিহাসিক বইটি। অনূদিত এই কাব্যগ্রন্থটির মাধ্যমে বিদেশী ভাষা ও সাহিত্যের ওপর নজরুলের অনবদ্য দক্ষতার পরিচয় মেলে । সোমবার সকালে বইটির প্রকাশনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় তেজগাঁওয়ের চ্যানেল আই স্টুডিওতে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কবির দুই নাতনি কাজী অনিন্দিতা ও খিলখিল কাজী এবং নাতি কাজী অনির্বাণ। প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন- বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। এছাড়াও অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ইকরাম আহমেদ, লায়ন্স ক্লাব অব ঢাকা অনন্ত’র প্রেসিডেন্ট ও বইটির প্রকাশক ইনামুল হক খান, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু, চ্যানেল আইয়ের পরিচালক জহির উদ্দিন মাহমুদ মামুন, লায়ন্স ক্লাবের গবর্নর স্বদেশ রঞ্জন প্রমুখ। এছাড়া সঙ্গীত পরিবেশনা, কবিতা আবৃত্তি ও নজরুলকে নিবেদিত স্মৃতিচারণ করেন শাহীন সামাদ, ফাতেমা তুজ জোহরা, শিমুল মুস্তাফা, শাহরিয়ার নাজিম জয়, কেকা ফেরদৌসি, রেজাউদ্দিন স্টালিনসহ অনেকে। কবি পরিবারের তিন সদস্যসহ অতিথিরা সবাই মিলে বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন। অনুষ্ঠানে কবি পরিবারের পক্ষ থেকে নজরুলের বর্ণময় জীবন এবং গ্রন্থটি সম্পর্কে কথা বলেন- কলকাতা থেকে আগত তাঁর নাতি ও নাতনি কাজী অনির্বাণ এবং কাজী অনিন্দিতা। কাজী অনির্বাণ বলেন, ৮০ বছর আগে প্রকাশিত পুরনো বইটি পুনরুদ্ধার বেশ কঠিন ছিল। কাজী অনিন্দিতা বলেন, প্রেম, প্রকৃতি ও নৈসর্গিক সৌন্দর্যের ফার্সি ভাষায় লিখিত ওমর খৈয়ামের কাব্যগ্রন্থটিবে চমৎকারভাবে বাংলা রূপান্তর করেছিলেন নজরুল। আর এই রূপান্তরে কোথাও কোন বিকৃতি না ঘটিয়ে সুন্দর ও সফলভাবে অনুবাদ করেছিলেন কাজী নজরুল। এর মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যের পাশাপাশি বিদেশী ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে তাঁর সুনিপুণ প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায়। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বলেন, রুবাইয়াৎ-ই-ওমর খৈয়ামে বঙ্গীয় নবজাগরণকে খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে। পাশ্চাত্যের উন্নয়ন বাঙালী নবজাগরণকে ততটা প্রভাবিত করতে পারেনি, যতটা প্রভাবিত করতে পেরেছিলো নজরুলের লেখা। চলমান সময়ে চারপাশে যখন সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে তখন নজরুলের সৃষ্টিসমগ্রকে আরও বেশি আশ্রয় করতে হবে। অনুষ্ঠানে আবৃত্তি করেন শিমুল মুস্তাফা ও শাহরিয়ার নাজিম জয়। নজরুলের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত শিল্পীরা পরিবেশন করে ৬ ‘মোরা ঝঞ্ঝার মতো উদ্দাম’ শীর্ষক নজরুলসঙ্গীত। প্রসঙ্গত, সৈয়দ মুজতবা আলীর ভূমিকায় বইটির পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ করেছেন কাজী অনির্বাণ। মুদ্রণ তত্ত্বাবধান করেছেন হাবিবুল হুদা এবং গ্রাফিক্স করেছেন নুরুল ইসলাম রানা। এর আগে নজরুলের কাব্যানুবাদের বইটি কলকাতা থেকে প্রথম প্রকাশ হয়েছিল ১৯৩৫ সালে এবং দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৫০ সালে। জ্ঞানতাপস আব্দুুর রাজ্জাক বিদ্যাপীঠের উদ্বোধন ॥ জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাকের জীবনসাধনা ও চর্চার সঙ্গে মিশে ছিল প্রাত্যহিক গ্রন্থপাঠ। পাশাপাশি সমগ্র জীবন তিনি ব্যাপৃত ছিলেন শিক্ষকতায়। জ্ঞান আহরণের অন্বেষায় কত ধরনের বই যে তিনি সংগ্রহ করেছিলেন তার ইয়ত্তা নেই। বিচিত্র বিষয়ে তাঁর আগ্রহ ছিল। গ্রন্থই ছিল তাঁর জীবনসঙ্গী ও জ্ঞান আহরণের উপায়। রাষ্ট্রবিজ্ঞান, অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে তাঁর বিশেষ জ্ঞান এবং পা-িত্যের খ্যাতি সুবিদিত হলেও শিল্প ও সাহিত্যের সমকালীন গ্রন্থপাঠও তাঁর জীবনসাধনায় অঙ্গীভূত হয়েছিল। চিরায়ত সাহিত্যের তিনি ছিলেন বিশেষ অনুরাগী। আর তাঁর সেই জ্ঞান আহরণের বিষয়টি সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন। সেই লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হলো ভিন্ন আঙ্গিকের গ্রন্থাগার জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক বিদ্যাপীঠ। ধানম-ির রবীন্দ্র সরোবরের নিকটবর্তী ৭/এ সড়কের ৬০ নম্বর বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত হলো এই পাঠাগার। সোমবার সন্ধ্যায় জ্ঞানতাপস আব্দুুর রাজ্জাক বিদ্যাপীঠের উদ্বোধন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- আবুল খায়ের ও মফিদুল হক। স্বাগত বক্তব্য রাখেন- বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী। একটি নামফলক উন্মোচনের মাধ্যমে জ্ঞানতাপস আব্দুুর রাজ্জাক বিদ্যাপীঠের উদ্বোধন করা হয়। প্রধান অতিথি আবুল মাল আবদুল মুহিত তার বক্তব্য বলেন, এই গ্রন্থাগারের মাধ্যমে জ্ঞানের প্রসার এবং বিস্তৃতি ঘটবে। গভীরতম অধ্যয়ন এবং সক্রিয় গবেষণা কার্যক্রমকে উৎসাহিত করার মাধ্যমে গ্রন্থাগার সম্পর্কিত প্রচলিত ধারণার বাইরে বের হয়ে আসার উদ্দেশে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন জ্ঞানতাপস আব্দুুর রাজ্জাক বিদ্যাপীঠ প্রতিষ্ঠা করেছে। এই প্রেরণায় এর নামকরণ করা হয়েছে বিদ্যাপীঠ - যা বলতে জ্ঞানার্জন কেন্দ্র বোঝানো হচ্ছে। একনিষ্ঠ পাঠক, বিদ্বান এবং গবেষকরা এই বিদ্যাপীঠ এর মাধ্যমে জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাকের গ্রন্থের যে অনন্য সাধারণ সংগ্রহ রয়েছে তার সন্ধান লাভ করবেন। জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক ছিলেন সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমী এক মানুষ। বিদ্যানুরাগ, বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা ও কর্মপ্রেরণায় এদেশের মননজগতে তিনি হয়ে আছেন এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক। পা-িত্যে, জ্ঞানে ও দেশের মঙ্গল-আকাক্ষায় সর্বদা নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন তিনি। পঠন-পাঠনের ঈর্ষণীয় ব্যাপ্তি তাঁকে দেশ ও বিদেশের ভাবুক ও শাশ্বত সমাজে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছিল।
×