ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার;###;সাক্ষী সাজাহানের জবানবন্দী

নাসির ও শামসুর নেতৃত্বে রাজাকাররা বাবাসহ ১০ জনকে হত্যা করে

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১০ নভেম্বর ২০১৫

নাসির ও শামসুর নেতৃত্বে রাজাকাররা বাবাসহ ১০ জনকে হত্যা করে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের দুই সহোদর এটিএম নাসির আহম্মেদ ও শামসুদ্দিন আহম্মদসহ ৫ রাজাকারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ৬ষ্ঠ সাক্ষী মোঃ সাজাহান ও ৭ম সাক্ষী মুজিবুর রহমান মঙ্গল জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দী শেষে রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী আসামিকে জেরা করেন। পরবর্তী সাক্ষীর জন্য ১১ নবেম্বর দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। নেত্রকোনার রাজাকার ওবায়দুল হক তাহের ও আতাউর রহমান ননীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ২৩তম সাক্ষী মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোঃ সাজাহান কবির জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দী শেষে তদন্ত কর্মকর্তাকে জেরা করার জন্য ১১ নবেম্বর দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে, হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলা চেয়ারম্যান ও সাবেক মুসলীম লীগ বর্তমানে আওয়ামী লীগ নেতা লিয়াকত আলীসহ দুই রাজাকরের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ৩০ ডিসেম্বর দিন নির্ধারণ করেছেন। চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ সোমবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। ট্রাইব্যুনালে অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি মোঃ শাহীনুর ইসলাম ও বিচারপতি মোঃ সোহরাওয়ার্দী। কিশোরগঞ্জের ৫ রাজাকারের বিরুদ্ধে জবানবন্দী দিতে গিয়ে ৬ষ্ঠ সাক্ষী মোঃ সাজাহান বলেছেন , আসামি নাসির ও শামসুদ্দিনের নেতৃত্বে রাজাকার বাহিনী আক্রমণ চালিয়ে আমার বাবা আব্দুল মজিদসহ স্বাধীনতার পক্ষের ৮ থেকে ১০ জনকে হত্যা করেছে। সাক্ষ্যগ্রহণে সাহায্য করেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন ও প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন। পরে আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আব্দুস শুকুর খান সাক্ষীদের জেরা শেষ করেন। জবানবন্দীতে সাক্ষী বলেন, আমার নাম শাহজাহান। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৫৭ বছর। আমার ঠিকানা গ্রাম-আয়লা, থানা-করিমগঞ্জ, জেলা-কিশোরগঞ্জ। একাত্তরের আমার বয়স ছিল ১২-১৩ বছর। তখন আমি আয়লা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র ছিলাম। ১৯৭১ সালের ১২ নবেম্বর আনুমানিক দুপুর বেলা রাজাকাররা আমাদের আয়লা গ্রামসহ বিদ্যানগর, ফতেরগোপ, ও কিরাটন বিলপাড়ায় আক্রমণ করে। এটিএম নাসির ও শামসুদ্দিনের নেতৃত্বে ৭০-৮০ জন রাজাকার ছিল। ওই আক্রমণের কারণে গ্রামের অনেকেই ভয়ে বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে যায়। কিন্তু আমি ও আমার বাবা আব্দুল মজিদ বাড়িতে অবস্থান করি। এ সময় রাজাকার নাসির ও শামসুদ্দিন আমার বাবাকে বেঁধে ফেলে। এক পর্যায়ে আমি দেখি নাসিরের হাতে থাকা রাইফেল দিয়ে আমার বাবাকে বীজতলায় গুলি করে হত্যা করে। সাক্ষী আরও বলেন, রাজাকাররা চলে যাবার পর ওই দিন সন্ধ্যায় বীজতলায় গিয়ে আমার বাবার লাশ নিয়ে আসি। পরের দিন সকালে আমার বাবার লাশ বাড়িতেই দাফন করি। সাক্ষী আরও বলেন, একাত্তরের ১২ নবেম্বর রাজাকাররা আমাদের গ্রামসহ অন্য গ্রাম আক্রমণ করেছিল। ওই দিন রাজাকাররা আমাদের গ্রামের আমার বাবা আব্দুর মজিদসহ আব্দুল জব্বার, হবিবুল্লা, বিদ্যানগরের আব্দুল বারেক, চান্দু শখ, মালু শেখ, সিরাজ, আফতারব উদ্দিনকে হত্যা করে। অন্যদিকে, সপ্তম সাক্ষী মুজিবুর রহমান মঙ্গল বলেছেন রাজাকাররা তার বাবা আব্দুল বারেককে গুলি করে হত্যা করেছে। ননী-তাহের ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত নেত্রকোনার রাজাকার ওবায়দুল হক তাহের ও আতাউর রহমান ননীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ২৩তম সাক্ষী মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোঃ সাজাহান কবির জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দীতে তিনি বলেন, আমি তদন্ত করে দেখেছি, আসামিরা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সময় মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে জবানবন্দী শেষে তদন্ত কর্মকর্তাকে জেরা করার জন্য ১১ নবেম্বর দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নের্তৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ সোমবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল ও প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি সাক্ষীকে জবানবন্দীতে সহায়তা করেন। সাক্ষী তদন্ত কর্মকর্তা তার জবানবন্দীতে বলেন, আমার নাম মোঃ শাহজাহান কবির। আমি একজন পুলিশ পরিদর্শক। আমি বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছি। আমি এই দুই রাজাকারের বিরুদ্ধে তদন্ত করার জন্য ঘটনাস্থল সরজমিনে পরিদর্শন করি। ঘটনা সম্পর্কে অভিহিত আছেন এমন ৩২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য লিপিবদ্ধ করি। সোর্স নিয়োগ করে তথ্য সংগ্রহ করি। সাক্ষ্য ও তদন্তে জানা যায় আসামিরা নেত্রকোনা মহকুমার বিভিন্ন থানা এলাকায় হত্যা, গণহত্যা, নির্যাতন, লুণ্ঠন, আটক, অপহরণ অগ্নিসংযোগ, দেশান্তরে বাধ্যকরণসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছেন। তদন্তে দেখা গেছে, ১৯৭১ সালের ১৭ আগস্ট মুক্তিযুদ্ধের সংঘটক মোঃ ফজলুর রহমান তালুকদারকে অপহরণ করে ত্রিমোহনী ব্রিজে নিয়ে তাকে গুলি করে হত্যা করে। ৪ অক্টোবর শহরের বারহাট্টা জিউর আখড়ায় সামনের রাস্তা থেকে ফুটবলার দবির হোসেনকে অপহরণ করে মোক্তার পড়া ব্রিজের কাছে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে। এছাড়া ১৯ অক্টোবর লাউফা গ্রাম হতে জাফর আলী তালুকদার, আব্দুল জব্বার এবং গুমুরিয়া ঝষিমিয়াকে আটক অপহরণ নির্যাতন শেষে গুলি করে হত্যা করা হয়। ১৫ নবেম্বর নেত্রকোনার সদর থানাধীন বিরামপুর বাজার হতে মুক্তিযুদ্ধের সংঘটক বদিউজ্জামন মুক্তা, আব্দুল মালেক শান্ত, শ্রী রামচন্দ্র তালুকদার লেবু, সিদ্দিকুর রহমান, ইসলাম উদ্দিন ও ইসমাইল হোসেনকে অপহরণ করে নির্যাতনের পর মোক্তারপাড়া ব্রিজের নিচে নিয়ে তাদের গুলি করে হত্যা করে। হবিগঞ্জের দুই রাজাকার ॥ একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলা চেয়ারম্যান ও সাবেক মুসলিম লীগ বর্তমানে আওয়ামী লীগ নেতা লিয়াকত আলীসহ দুই রাজাকরের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ৩০ ডিসেম্বর দিন নির্ধারণ করেছেন ট্রাইব্যুনাল। চেয়ারম্যান বিচারপতি মোঃ আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। এ সময় ট্রাইব্যুনালে শুনানি করেন- প্রসিকিউটর সুলতানা রেজিয়া পারভীন চমন, ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে লিয়াকত আলীসহ দুই রাজাকারের বিরুদ্ধে হত্যা, লুটপাট ও আটক করে নির্যাতনের মোট দুটি অভিযোগ রয়েছে।
×