ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

চিত্রশিল্পী আসমা কিবরিয়া আর নেই

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১০ নভেম্বর ২০১৫

চিত্রশিল্পী আসমা কিবরিয়া আর নেই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের নারী চিত্রশিল্পীদের মধ্যে বিশেষভাবে পরিচিত ছিলেন আসমা কিবরিয়া। আধুনিক ভাবনার সঙ্গে স্বতন্ত্র শৈলীর অঙ্কনে উদ্ভাসিত হতো তার ক্যানভাস। সেই চিত্রপট সহজেই মুগ্ধ করত শিল্পানুরাগীদের। শিল্পী পরিচয়ের বাইরে তার আরেক পরিচয় ছিল সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত শাহ এ এম এস কিবরিয়ার স্ত্রী। সোমবার সকালে থেমে গেল জ্যেষ্ঠ এই নারী শিল্পীর জীবনের পথচলা। এদিন সকালে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন (ইন্নালিল্লাহি... রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। বাদ আছর তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয় গুলশান আজাদ মসজিদে। এরপর বাদ মাগরিব বনানী কবরস্থানে দ্বিতীয় দফা জানাজা শেষে সেখানেই স্বামীর কবর তাঁকে তার লাশ দাফন করা হয়। আসমা কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়া জানান, রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার সকালে তার মায়ের হার্টএ্যাটাক হয়। এরপর ৯টা ১০ মিনিটে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতালের কমিউনিকেশন এ্যান্ড মার্কেটিং বিভাগের প্রধান সাগুফা আনোয়ার বলেন, এর আগে আসমা কিবরিয়া দীর্ঘদিন ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। শুক্রবার তাকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তীতে শনিবার তাকে পুনরায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার হৃৎপি-ে কয়েক দফায় বাইপাস সার্জারি করা হয়েছিল। তিনি স্তন ক্যান্সারে?ও ভুগছিলেন, যা তার লিভার ও হাড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল। আসমা কিবরিয়ার মৃত্যুর সংবাদে শিল্প ও সংস্কৃতি ভুবনে নেমে আসে শোকের ছায়া। বিশেষ করে চিত্রশিল্পীরা যেন হারালেন তাদের আপনজনকে। তার মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার মৃত্যুতে দেশ একজন সমাজসেবী ও গুণী শিল্পীকে হারাল। চিত্রশিল্পী আসমা কিবরিয়াকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন আরেক বরেণ্যশিল্পী রফিকুন নবী। শিল্পচর্চার সূত্র ধরে পরস্পরের মধ্যে ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। আসমা কিবরিয়া প্রসঙ্গে রফিকুন নবী জনকণ্ঠকে বলেন, আমাদের শিল্পকলা ভুবনে তিনি ছিলেন বেশ পরিচিত একজন শিল্পী। চিত্রকর্ম সৃজনে নিজস্ব একটা আঙ্গিকে কাজ করেছেন। সেটা ছিল একেবারেই স্বতন্ত্র। বিশেষ করে শিল্প সৃষ্টির ক্ষেত্রে আপন শৈলীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল তার আধুনিক চিন্তাভাবনা। তার বিভিন্ন প্রদর্শনীতে সেটার প্রমাণ মিলেছে। আঁকাআঁকির পাশাপাশি দেশের শিল্পকলা কিভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় সে বিষয়েও তার পৃথক ভাবনা ছিল। তবে স্বামী শাহ এ এম এস কিবরিয়া সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত হওয়ার পর ব্যাহত হয় তার চিত্রচর্চা। নিজে নিজে কাজ করলেও এরপর আর কখনও প্রদর্শনী করেননি। ফলে শিল্পরসিকরা এই শিল্পীর নতুন কাজ দেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। শিল্পকলায় সময় দেয়ার চেয়ে স্বামী হত্যার বিচারের জন্য অনেকটা একাই লড়ে গেছেন। ওই দুর্ঘটনা তাকে এতটাই মর্মাহত করে যে শিল্পচর্চা থেকে কিছুটা দূরে সরে যান। যদিও শেষ পর্যন্ত স্বামী হত্যার বিচারের শেষটা দেখে যেতে পারলেন না। অথচ স্বামী হত্যাকা-ের আগে পর্যন্ত দেশের জ্যেষ্ঠ নারী শিল্পী হিসেবে তিনি খুবই সক্রিয় ছিলেন। তার মৃত্যুতে আমাদের শিল্পী সমাজে অপূরণীয় ক্ষতি হলো। আমরা হারালাম একজন প্রকৃত শিল্পীকে। ১৯৩৭ সালে জন্ম নেয়া আসমা চিত্রকলা নিয়ে লেখাপড়া করেন নিউইয়র্কের উন আর্ট স্কুল ও ওয়াশিংটনের কোরকোরান স্কুলে। ওয়াশিংটনে সমসাময়িক মার্কিন শিল্পীদের সঙ্গে কাজের সূত্র ধরে বিমূর্ত ধারার চিত্রকলায় প্রভাবিত হন তিনি। তার কাজ নিয়ে ব্যাঙ্ককসহ বিভিন্ন শহরে এ পর্যন্ত দশটি একক প্রদর্শনী হয়েছে। ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদরের বৈদ্যের বাজারে এক জনসভা শেষে ফেরার সময় গ্রেনেড হামলায় নিহত হন সাবেক অর্থমন্ত্রী আওয়ামী লীগ নেতা শাহ এ এম এস কিবরিয়া। কিবরিয়া ১৯৯৬-২০০১ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী ছিলেন। স্বামীর হত্যাকা- নিয়ে পুলিশের প্রথমদিকের দেয়া তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে আপত্তি ছিল আসমা কিবরিয়ার। স্বামী হত্যার বিচারের দাবিতে ‘শান্তির জন্য নীলিমা’ শীর্ষক এক প্রতিবাদ কর্মসূচীর সূচনা করেছিলেন। ২০০৭-০৮ সালে সেনানিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ওই কর্মসূচী চালিয়ে নিতে বাধা দেয়া হয় বলেও তার অভিযোগ ছিল। গত বছর সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আসমার টিউমার অপসারণ করা হয়েছিল। শাহ এ এম এস কিবরিয়া ও আসমা কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়া একজন অর্থনীতিবিদ আর মেয়ে নাজলী কিবরিয়া বস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক।
×