বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডাঃ ইমরান এইচ সরকার বলেছেন, সন্ত্রাসী ও জঙ্গীদের সঙ্গে কোন আপোস নেই। এ লড়াইয়ে আমাদের মধ্যে কোন বিভেদ নেই। ঐক্যবদ্ধভাবে এ অপশক্তির বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। সোমবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপনের হত্যাকারী এবং প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটল, ব্লগার রণদীপম বসু ও তারেক রহিমের হত্যাচেষ্টাকারীদের গ্রেফতার বিচার ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষার দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশ শেষে একটি আলোর মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শাহবাগ থেকে যাত্রা শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি অতিক্রম করে শহীদ মিনারে যায়। সেখানে শহীদ মিনারের বেদিতে প্রজ্বলিত মোমবাতিগুলো সারি সারি সাজিয়ে রেখে তারা আবার শাহবাগে ফিরে আসেন।
মঞ্চের মুখপাত্র ডাঃ ইমরান এইচ সরকারের নেতৃত্বে এ সময় উপস্থিত ছিলেন উদীচীর সহ-সাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম, প্রকাশক রবীন খান, ভাস্কর রাশা, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি লাকী আক্তার, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি জনার্দন দত্ত নান্টু প্রমুখ।
ইমরান আরও বলেন, আমরা বারবার বলেছি, এমন একটা নিরাপদ রাষ্ট্র চাই যেখানে মানুষ স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পারবে, নিজের মত প্রকাশ করতে পারবে। কিন্তু একটি অশুভশক্তি এ দেশকে অনিরাপদ হিসেবে প্রমাণ করতে লেখক-ব্লগার-প্রকাশকদের হত্যা করছে। পুলিশ হত্যা করছে। ভিন্নধর্মের মানুষের ওপর আক্রমণ করছে এবং যারাই তাদের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছে তাদের ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চেয়েছি আমরা এই রাষ্ট্রকে একটি বিজ্ঞানমনষ্ক আধুনিক ও মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাই। কখনোই কূপম-ূক ও ধর্মান্ধ রাষ্ট্র হতে দিতে চাই না। এজন্য আমরা রাজপথে সংগ্রামে আছি। এ দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে চাইছি। আমাদের সংগ্রাম কোন ধর্ম কিংবা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নয়। আমাদের সংগ্রাম মানুষের জন্য একটি মানবিক রাষ্ট্র গঠনের জন্য।
ইমরান আরও বলেন, যারা হত্যাকারী তারা শুধু মানুষ হত্যা করে চলেছে। তারা কথা বলতে চায় না, আলোচনা চায় না। শুধু হত্যার পথ তারা বেছে নিয়েছে। তারা প্রতিবাদ করতে চায় না। তারা শুধু হত্যা করতে চায়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে ডাঃ ইমরান এইচ সরকার বলেন, গতকাল (রবিবার) প্রধানমন্ত্রী একটি বিবৃতি দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে ব্যক্তি হিসেবে ওনার বক্তব্য থাকতেই পারে। কিন্তু আপনি যখন প্রধানমন্ত্রী তখন আপনি সকলের প্রধানমন্ত্রী। এমনকি চোর ডাকাত থেকে শুরু করে ধর্ম অধর্ম কিংবা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান, পাহাড়ি কিংবা বাঙালী সকল মানুষের প্রধানমন্ত্রী। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আপনি যখন বক্তব্য দেবেন তখন আপনার মাথায় রাখতে হবে যে আপনার ব্যক্তিগত মতামতকে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য হিসেবে চালিয়ে দেবার কোন সুযোগ নেই। বরং আপনি যখন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বক্তব্য দেবেন তখন ১৬ কোটি মানুষের হিসেবে বক্তব্য দেবে। বক্তব্য যেন কোন দিকে হেলে না পড়ে সেদিকে আপনার খেয়াল রাখতে হবে।
রাজন রাকিব হত্যাকা-ের ন্যায়বিচার নিশ্চিত হওয়ায় তিনি সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, এ দুই জঘন্য হত্যাকা-ের ন্যায়বিচার আমরা যেমন পেয়েছি তেমনি করে দেশের জনগণ যদি ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে থাকি তাহলে অন্যান্য সকল হত্যাকা-ের বিচার খুব দ্রুত নিশ্চিত করা সম্ভব।
ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি লাকী আক্তার বলেন, সরকার যদি চায় তাহলে কিন্তু মুক্তমনা মানুষের ওপর যে আক্রমণ হচ্ছে সে চক্রকে গ্রেফতার করা সম্ভব। রাকিব, রাজন হত্যাকা-ের বিচার ও তার শাস্তি কিন্তু এ কথাটাই প্রমাণ করে দেয়। এদিকে চলমান আন্দোলনের কর্মসূচীর অংশ হিসেবে আগামী শুক্রবার বিকেল চারটায় শাহবাগে গণসমাবেশ করবে গণজাগরণ মঞ্চ।
