ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ক্যারিয়ারের ১১তম অর্ধশতক

ফিরেই ঝলক ইমরুলের

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১০ নভেম্বর ২০১৫

ফিরেই ঝলক ইমরুলের

মোঃ মামুন রশীদ ॥ সম্ভবত এমন একটি সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিলেন। তরুণ ওপেনার সৌম্য সরকারের ইনজুরি তাকে সুযোগ করে দিয়েছিল আবার বাংলাদেশের ওয়ানডে দলে। তবে প্রথম ওয়ানডেতে জায়গা হয়নি একাদশে। দ্বিতীয় ম্যাচে সদ্ব্যবহার করেছেন সুযোগের। টপঅর্ডারদের ব্যর্থতার ভিড়ে একমাত্র জ্বলজ্বলে তারা হয়ে জ্বলে উঠলেন ইমরুল কায়েস। ঘরের মাঠে যখন একের পর এক দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়ে বাংলাদেশ প্রতিপক্ষদের নাস্তানাবুদ করেছে সে সময় মাঠের বাইরে থেকেই তা অবলোকন করেছেন। আর সোমবার সফরকারী জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলার সুযোগ পেয়েই সেটা কাজে লাগালেন তিনি। হাঁকালেন ক্যারিয়ারের ১১তম অর্ধশতক। তার ৮৯ বলে ৬ চার ও ৪ ছক্কায় ৭৬ রানের ইনিংসটি এদিন বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোরই শুধু নয়, এটা বাঁচিয়ে দিয়েছে টাইগারদের আরও কম রানে ধসে পড়া থেকে। তাই দারুণভাবেই ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তন ঘটল ২৮ বছর বয়সী এ বাঁহাতি ওপেনারের। এ বছর বিশ্বকাপের আগে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে গত বছর নবেম্বরে ওয়ানডে দলে ফিরেছিলেন ইমরুল। ব্যর্থতার কারণে বাদ পড়েছিলেন। ফিরলেও সেবার জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে তেমন কিছু করতে পারেননি। পরে বিশ্বকাপ দলেও জায়গা করে নিয়েছিলেন। প্রথম কয়েকটি ম্যাচে সুযোগ হয়নি, তবে এনামুল হক বিজয়ের ইনজুরি সুযোগ করে দেয় খেলার। কিন্তু এবারও সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি, বিশেষ কিছু করতে পারেননি। শেষ তিন ম্যাচে খেলে এমনকি দুই অঙ্কের ইনিংসও খেলতে পারেননি। তারপর থেকেই দলের বাইরে ছিলেন ইমরুল। তবে এবার জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে হোমসিরিজে তরুণ ওপেনার সৌম্য সরকারের ইনজুরি আবার সুযোগ তৈরি করে দিল তাকে। প্রথম ওয়ানডেতে লিটন কুমার দাস ওপেনার ছিলেন, তাই খেলা হয়নি। কিন্তু বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান ছুটিতে চলে যাওয়ার কারণে দ্বিতীয় ম্যাচেই একাদশে ঠাঁই হয়ে গেল ইমরুলের। আর ফিরেই দলকে বিপদ থেকে টেনে তোলার মতো একটি ইনিংস উপহার দিলেন। টপঅর্ডাররা তেমন সুবিধা না করতে পারেনি। মাত্র ৭৯ রানের মধ্যেই সাজঘরে ফিরে গেছেন তিন টপঅর্ডার। ওই পরিস্থিতিতেও দেখেশুনে সাবলীল ভঙ্গিতেই খেলেছেন ইমরুল। ক্রমেই চেপে বসা জিম্বাবুইয়ে বোলারদের ওপর চড়াও হয়ে খেলেছেন। প্রথম থেকেই নিখুঁত একটি খেলা উপহার দিয়েছেন। বলে-বলে রান করে দলের রান তোলার গতিটাকেও কক্ষপথেই রেখেছেন ইমরুল। তামিম ইকবাল, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও লিটন দ্রুত ফিরে গেলেও ইমরুল কোন ভুল করেননি। বরং জিম্বাবুইয়ে বোলারদেরই চাপে রেখেছেন। অবশেষে ৫৩ বলে ক্যারিয়ারের একাদশ অর্ধশতকের দেখা পেয়ে যান তিনি। এটি ছিল ইমরুলের গত বছর ৪ মার্চ এশিয়া কাপে মিরপুরেই পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বশেষ ওয়ানডে অর্ধশতকটি হাঁকিয়েছিলেন। খেলেছিলেন ৫৯ রানের একটি দারুণ ইনিংস। এরপর দলে আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকা এ ওপেনার সর্বশেষ ৭ ইনিংসে ছিলেন চরম ব্যর্থ। কোন ম্যাচেই দুই অঙ্কে পৌঁছতে পারেননি। করেছিলেন ৯, ১, ১, ৫, ২, ২ ও ৫ রান। ৩.৫৭ গড়ে ৭ ম্যাচে ২৫! তাই পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টানা তিনটি গৌরবময় সিরিজে বাংলাদেশ দলের বাইরে থাকতে হয়েছিল। কিন্তু এবার ফিরতি ম্যাচেই অর্ধশতক হাঁকিয়ে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিলেন। অর্ধশতক হাঁকিয়েও থামেননি ইমরুল। ক্রমেই এগিয়ে যেতে থাকেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরির দিকে। চতুর্থ উইকেটে মুশফিকুর রহীমের সঙ্গে ৪৮ রানের জুটি গড়ে বিপদ কিছুটা সামলেছিলেন। মুশফিকও বিদায় নিলেন, থেকে গেলেন ইমরুল। কিন্তু ভুল একটিই করলেন। আর সেই এক ভুলেই বিদায় নিলেন। সেঞ্চুরির আশা পূর্ণ হলো না তার। শন উইলিয়ামসের ফুল টস বলকে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসে লং অফ দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে সীমানা কাছে দাঁড়ানো গ্রায়েম ক্রেমারের তালুবন্দী হন ইমরুল। ৮৯ বলে ৬ চার ও ৪ ছক্কায় করা ৭৬ রানের দারুণ একটি ইনিংসের ইতি ঘটে সেখানেই। তবে একাদশে খেলার সামর্থ্যটা প্রমাণ করে দিয়েছেন ততক্ষণে এবং বাংলাদেশ দলকেও একটা ভাল অবস্থানে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি গড়ে দিয়ে গেছেন। হাঁকিয়েছেন ১ বছর ৯ মাস পর আরেকটি অর্ধশতক!
×