ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কিডনি বিক্রি করার হুমকি ॥ দক্ষিণ আফ্রিকায় মোটা বেতনের প্রলোভন

বরিশালে প্রবাসীর প্রতারণায় ॥ ১০ যুবক নিঃস্ব

প্রকাশিত: ০৭:৪০, ১০ নভেম্বর ২০১৫

বরিশালে প্রবাসীর প্রতারণায় ॥ ১০ যুবক নিঃস্ব

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ সাউথ আফ্রিকায় মোটা অঙ্কের টাকা বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে ১০ যুবকের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে জেলার উজিরপুর উপজেলার ধামুড়া গ্রামের প্রবাসী আদমব্যাপারী ও তার পরিবারের সদস্যরা। এর মধ্যে দু’যুবককে প্রবাসে নিয়ে চাহিদার দ্বিগুণ টাকা দাবি করে অমানবিক নির্যাতন করা হচ্ছে। দেশ থেকে চাহিদা মোতাবেক টাকা পাঠানো না হলে প্রবাসে বসেই ওই যুবকদের কিডনি বিক্রি করে টাকা আদায়ের হুমকি দেয়া হয়েছে। অপরদিকে, বিয়ের মাত্র পাঁচ মাসের মধ্যে প্রবাসী আদমব্যাপারী স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যদের প্রতারণায় অতিষ্ঠ হয়ে স্বামীকে ডির্ভোস দিয়েছেন নববধূ লিমা বেগম। ভুক্তভোগীদের অভিযোগে জানা গেছে, ধামুড়া গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সুবেদার সোহরাব হোসেন সরদারের ছেলে সানোয়ার হোসেন সুমন দীর্ঘদিন থেকে সাউথ আফ্রিকায় থাকার সুবাদে সেখানকার জোহান্সবার্গ এলাকার ডুগে রেলস্টেশনের বিপরীতপাশে এমটি বাজার নামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছেন। উপজেলার বরাকোঠা গ্রামের মৃত মাজেদ ব্যাপারীর ছেলে ফিরোজ ব্যাপারী অভিযোগ করেন, সুমনের বাবা সোহরাব হোসেনের প্রলোভনে পড়ে মোটা অঙ্কের টাকা বেতনের আশায় ৯ লাখ টাকা চুক্তিতে ২০১৪ সালের ৮ ডিসেম্বর তিনি জমিজমা বিক্রি করে সাড়ে তিন লাখ টাকা পরিশোধ করেন। বাকি টাকা সাউথ আফ্রিকায় যাওয়ার পর দেয়ার কথা বলেছিলেন প্রবাসী সুমন। টাকা নেয়ার পর থেকে তারা বিভিন্ন তালবাহানা শুরু করেন। এক পর্যায়ে তিনি টাকা ফেরত চাইতে গেলে তাকে ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়। ফিরোজ আরও অভিযোগ করেন, তার স্ত্রীর বড়ভাই মানিককাঠী গ্রামের বারেক ব্যাপারীর ছেলে আরিফ হোসেন মিলন আদমব্যাপারী সোহরাব ও তার প্রবাসী ছেলে সুমনের প্রলোভনে অতিসম্প্রতি নগদ সাড়ে নয় লাখ টাকা দিয়ে সাউথ আফ্রিকায় পাড়ি জমান। সেখানে যাওয়ার পর থেকে আরও নয় লাখ টাকার জন্য সুমন প্রবাসে বসে মিলনকে শারীরিক নির্যাতন করে। দেশ থেকে চাহিদা অনুযায়ী টাকা না পাঠালে মিলনের কিডনি বিক্রি করে টাকা আদায় করা হবে বলেও সুমন হুমকি দেয়। একইভাবে আদমব্যাপারী সোহরাব হোসেন, তার স্ত্রী হাসি বেগম, কন্যা সুমা বেগম ও প্রবাসী সুমনের প্রতারণার ফাঁদে পরে বিদেশ নামের সোনার হরিণ ধরার জন্য সহায় সম্পত্তি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে দীর্ঘদিন থেকে নিঃস্ব হয়ে পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বাবুগঞ্জ উপজেলার বাহেরচর গ্রামের মৃত আব্দুল ওয়াহেদ আলী হাওলাদারের ছেলে সোহাগ হোসেন, একই গ্রামের সুমন, ধামুড়া গ্রামের মাসুম ও শুভ্র, শোলক গ্রামের বিপুল, সানুহার গ্রামের সোহাগসহ ১০ যুবক। এক বছর ধরে প্রতারক চক্রটি তাদের সঙ্গে নানা তালবাহানা করে আসছে। টাকা চাইতে গেলে স্থানীয় প্রভাবশালী ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা প্রতারণার শিকার যুবকদের ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে তাড়িয়ে দিচ্ছে। বাহেরচর গ্রামের সোহাগ হোসেন অভিযোগ করেন, প্রবাসী সুমন ও তার পরিবারের সদস্যদের প্রলোভনে পরে অতিসম্প্রতি তাদের একই গ্রামের মিন্টু চুক্তির ৯ লাখ টাকা নগদ পরিশোধ করে সাউথ আফ্রিকায় পাড়ি জমায়। তাকে প্রতিমাসে দেড় লাখ টাকা বেতনের প্রলোভন দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর সুমন আরও নয় লাখ টাকা দাবি করে মিন্টুকে আটক করে প্রায়ই শারীরিক নির্যাতন করে আসছে। দেশ থেকে টাকা পাঠানো না হলে (মিন্টু) কিডনি বিক্রি করে টাকা আদায় করারও হুমকি দেয়া হয়। প্রতারিত ভুক্তভোগী যুবকেরা আদমব্যাপারী প্রবাসী সুমন ও তার পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে টাকা ফেরত পেতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, জনশক্তি ব্যুরো এবং ব্র্যাকের নিরাপদ অভিবাসন সহায়তা প্রকল্পসহ প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত প্রবাসী সানোয়ার হোসেন সুমনের বাবা সোহরাব হোসেন সরদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিজেদের নির্দোষ দাবি করে বলেন, যাদের কাছ থেকে টাকা নেয়া হয়েছে তাদের পর্যায়ক্রমে বিদেশ পাঠানো হবে।
×