ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীতে বিস্ফোরকসহ ১১ জেএমবি গ্রেফতার

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ১১ নভেম্বর ২০১৫

রাজধানীতে বিস্ফোরকসহ ১১ জেএমবি গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন জেএমবির হামলা টার্গেট দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও ভিভিআইপিরা। দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে আল কায়েদা বা আইএসের সর্মথন পেতেই এমন টার্গেট নিয়ে মাঠে নেমেছে জঙ্গী সংগঠনটি। এমন টার্গেট বাস্তবায়ন করার অর্থের যোগানদাতাদের বিষয়েও তথ্য সংগ্রহ চলছে। প্রাথমিকভাবে জেএমবি ছিনতাই ও ডাকাতির মাধ্যমে দলীয় ফান্ড শক্তিশালী করছে। রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর থেকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরকসহ ১১ জেএমবি সদস্য গ্রেফতারের পর আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্যই জানিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেফতারকৃতদের ২ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। সোমবার দিবাগত রাত থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানাধীন আব্দুল্লাহপুরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। অভিযানে গ্রেফতার হয় জেএমবির ১১ সদস্য। তাদের থেকে জিহাদী বই, বিস্ফোরক দ্রব্য ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার হয়। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছেন- বাবু মুন্সী ওরফে মাসুদ রানা, আরিফ ইবনে খায়ের ওরফে রিফাত, খোরশেদ আলম, ওমর ফারুক, আলহাজ মিয়া, হেলাল উদ্দিন, আব্দুল বাসেত, মোহাম্মদ সুজাত, ফরহাদ হোসেন, মিজানুর রহমান ও আজহার আলী। মঙ্গলবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আনুষ্ঠানিক এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবির যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, গ্রেফতারকৃতরা নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন জামাতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্য। তারা সংগঠনের অর্থ সংগ্রহের জন্য ডাকাতি ও ছিনতাই করত। ইতোমধ্যেই তারা বেশ কয়েকটি ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের কথা স্বীকার করেছে। কুমিল্লায় তারা একটি ব্যাংক ও এনজিও কার্যালয়ে ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এসব খাত থেকে টাকা ছাড়াও বিভিন্নভাবে তাদের দলীয় ফান্ডে টাকা আসছে বলে তথ্য রয়েছে তাদের কাছে। কারা কি উদ্দেশে জেএমবিকে টাকা দিচ্ছে সে বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। অর্থদাতাদের বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। মনিরুল ইসলাম বলেন, গ্রেফতারকৃতরা জেএমবির একাংশের আমির আতাউর রহমানের অনুসারী। তারা ঢাকায় বড় ধরনের নাশকতা চালানোর পরিকল্পনা করছিল। মূলত তাদের টার্গেট রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও ভিভিআইপিরা। রাষ্ট্রের পদস্থ কাউকে হত্যা করে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করাই তাদের লক্ষ্য ছিল। যাতে আল কায়েদা বা আইএসের মতো কোন জঙ্গী সংগঠনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা বা মদদ পাওয়া সহজ হয়। যদিও জেএমবির সে ধরনের কোন সক্ষমতা নেই। আমাদের কোর্ট রিপোর্টার জানান, সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়ের করা মামলায় জেএমবির ১১ সদস্যকে দুই দিনের রিমান্ড পাঠিয়েছে ঢাকার সিএমএম আদালত। আসামিদের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক আব্দুর রাজ্জাক। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম আলমগীর কবির আসামিদের ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। প্রসঙ্গত, গত ৬ নবেম্বর রাজধানীর বিমানবন্দর থানা এলাকা থেকে জেএমবির সঙ্গে জড়িত চার পাকিস্তানী ইদ্রিস আলী (৫৭), মোঃ শাকিল (৩৯), খলিলুর রহমান (৪৯) ও ইকবাল (৩৭) এবং তাদের সহযোগী বাংলাদেশী মোঃ ফরমান (৩৫), মোঃ বাবুল খান (৪৫) ও শহীদ (৪০) গ্রেফতার হয়। তাদের ৩ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে ‘দ্বীন কায়েমের সঠিক পথ, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অবমাননার শাস্তি, আল্লাহ আমাদের বিজয়ের জন্য প্রস্তুত করেছেন, উম্মাহর মুক্তিযুদ্ধ বিজয়ের পথ, উন্মুক্ত তরবারি, বাইআ’ত, সিরাতে মুস্তাকিম নামক জিহাদমূলক বই, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের আধ্যাত্মিক নেতা মুফতি জসীমুদ্দিন রাহমানীর জুম্মার খুতবা নামক সিডি, ৪টি পাকিস্তানী ও ৩টি বাংলাদেশী পাসপোর্ট, ৭টি মোবাইল সেট ও নগদ ২৬ হাজার ৮৪১ পাকিস্তানী রুপী উদ্ধার হয়। ডিবি সূত্রে জানা গেছে, গ্রেফতারকৃতরা সরকারের পতন ঘটাতে নানা ষড়যন্ত্রমূলক কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। মারাত্মক নাশকতা চালানোর পরিকল্পনা করতেই তারা বৈঠক করছিল। বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের ব্যাপক বিস্তার ঘটাতে, জঙ্গী সংগঠনগুলোতে নতুন সদস্য সংগ্রহ করতে, জনমনে ত্রাস ও আতঙ্ক সৃষ্টির পরিকল্পনা করছিল। এছাড়া তারা বাংলাদেশে জঙ্গীদের ট্রেনিং দিত। গ্রেফতারকৃতদের সঙ্গে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও ভারতের বিভিন্ন জঙ্গী গোষ্ঠীর যোগাযোগ রয়েছে। ভারতের বর্ধমানে জেএমবির বোমা তৈরির কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনায় যোগাযোগ থাকার বিষয়টি বেরিয়ে আসে। এক প্রশ্নের জবাবে ডিবির যুগ্ম-কমিশনার বলেন, দুটি অভিযানে গ্রেফতারকৃত ১৮ জনের মধ্যে যোগাযোগ থাকার বিষয়ে গভীর তদন্ত ও কড়া জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। সংবাদ সম্মেলনে ডিবির উত্তর, পূর্ব, দক্ষিণ ও মিডিয়া বিভাগের উপ-কমিশনার শেখ নাজমুল আলম, মাহবুব আলম, মাশরুকুর রহমান খালেদ ও মুনতাসিরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
×