ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সব জঙ্গীকে সংগঠিত করছে একাধিক বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থা

প্রকাশিত: ০৬:১১, ১১ নভেম্বর ২০১৫

সব জঙ্গীকে সংগঠিত করছে একাধিক বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থা

শংকর কুমার দে ॥ দেশের সকল জঙ্গী সংগঠন, জামায়াত-শিবির, বিএনপির উগ্রপন্থী, দুর্ধর্ষ অপরাধীদের সংগঠিত করেছে একাধিক বিদেশী প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থা। রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী খুন, জখম, নাশকতা, নৈরাজ্য সৃষ্টির মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে সরকারের পতন ঘটানোই হচ্ছে উদেশ্য। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা, অস্ত্রাগার লুট, প্রগতিশীল ও ভিআইপি ব্যক্তিদের ওপর হামলারও ছক তৈরি করেছে তারা। এ জন্য নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন জেএমবি, হুজি, হিযবুত, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমসহ জঙ্গী সংগঠনগুলো জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে মিশে একাকার করে যে যেভাবে যেখানে পারছে হামলা, আক্রমণ করার জন্য মাঠে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। বিদেশী প্রভাবশালী একাধিক দেশের গোয়েন্দা সংস্থার অদৃশ্য হস্তক্ষেপের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ব্যাপকভাবে চেষ্টা করার পরও কোথায় যেন খেই হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ছে। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে এই ধরনের তথ্যের উল্লেখ করা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, রাজধানীর গুলশানের ইতালীয় নাগরিক সিজার তাভেলা হত্যাকা-ের পর থেকে গত তেতাল্লিশ দিনে বিদেশী, পুলিশ, প্রকাশক খুন, প্রকাশক, লেখক, ব্লগারকে কুপিয়ে জখম, তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতিতে গ্রেনেড হামলাসহ যেসব ঘটনাবলী ঘটে যাচ্ছে তা কোন স্বাভাবিক ঘটনা নয়। এর পেছনে যে বড় কোন শক্তিধর কেউ আছে তার অশুভ ইঙ্গিত বহন করছে। গত ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচন বন্ধে বিএনপি-জামায়াতের পেট্রোলবোমার আগুন দিয়ে সহিংস সন্ত্রাসের তা-বলীলা চালানো এবং প্রভাবশালী কয়েকটি বিদেশী রাষ্ট্র নির্বাচনের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করার পর থেকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অঙ্গনে কোথায় যেন একটি অদৃশ্য সুতার টানাটানি চলছিল। এখন আবার কুখ্যাত দুই যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী (সাকা চৌধুরী) এবং জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদ- রায় কার্যকর করার আগে রাজধানীসহ দেশব্যাপী নাশকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির জন্য বেপরোয়া একটি অশুভ মহল। এখন দেশে যা ঘটছে এই অশুভ মহলের নেপথ্য তৎপরতায় মনে করছে বলে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদেন উল্লেখ করা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১১ সালের ডিসেম্বরে মেজর জিয়ার নেতৃত্বে একটি ব্যর্থ অভ্যুত্থান করার চেষ্টা করা হয়। সেই ব্যর্থ অভ্যুত্থানের সঙ্গে ছিলেন লন্ডনপ্রবাসী আরেক ব্যবসায়ী ইশতিয়াক। তারা দুইজনেই অভ্যুত্থান ব্যর্থ হওয়ার পর থেকে পলাতক। তাদের অভ্যুত্থানের পরিকল্পনায় ছিল কিছু বিপথগামী সেনা সদস্যের মাধ্যমে অস্ত্রাগার লুট করে একটি প্রভাবশালী বহুল প্রচারিত সংবাদ মাধ্যমে ব্রেকিং নিউজ হিসেবে ব্যর্থ অভ্যুত্থান প্রচার করে তা বাস্তবায়ন করা। কিন্তু সেনাবাহিনী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সময়োচিত পদক্ষেপের কারণে সে সময়কার অভ্যুত্থান ব্যর্থ করা হয়। কিন্তু ব্যর্থ অভ্যুত্থানকারীরা এখনও বিদেশে বসে নেই। তাদের সঙ্গে আছে ’৭১ ও ’৭৫-এর পরাজিত শক্তিগুলো। এর মধ্যে মঙ্গলবার কচুক্ষেত সেনানিবাস এলাকায় একটি চেকপোস্টে একজন মিলিটারী পুলিশের সদস্যকে কুপিয়ে আহত করার ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এর আগে ধরা পড়েছে জঙ্গী প্রশিক্ষক চার পাকিস্তানী নাগরিক। এসব পরাজিত শক্তি এক হয়ে দেশের ভেতরে খুনোখুনি, জখম, হামলা, নাশকতার ঘটনা ঘটিয়ে দেশে একটি অস্থিতিশীল ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে একটি ভিন্ন প্রেক্ষাপট তৈরি করার চেষ্টা করে যাচ্ছে বলে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, বিদেশী খুন, প্রকাশক খুন, প্রকাশক, লেখক ও ব্লগারকে কুপিয়ে জখম, তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতি গ্রেনেড হামলা, কর্ত্যবরত পুলিশের ওপর হামলার ঘটনাগুলো রাজনৈতিক কারণে ঘটানো হচ্ছে। এসব ঘটনার মধ্যে কোন্ কোন্ ঘটনা কারা ঘটিয়েছে তার হদিস করা যাচ্ছে না। এর পেছনে কোন অদৃশ্য বড় শক্তি কাজ করার কারণে উদ্ঘাটন করা সহজ হচ্ছে না। আগে দেশে এই ধরনের ঘটনা আগে কোন সময়ে ঘটেনি। জঙ্গী গোষ্ঠীগুলো, জামায়াত-শিবির, উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠীগুলো ও বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি মিলেমিশে একাকার হয়ে এসব ঘটনা ঘটাতে মরণ কামড় দিয়েছে। এই অশুভ শক্তিকে সাহায্য ও সহযোগিতা করার জন্য একাধিক বিদেশী প্রভাবশালী রাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার হাত রয়েছে বলে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সকল ইউনিট, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সর্বশক্তি নিয়োগ করে ব্যাপক অভিযান চালানোর পরও জঙ্গী গোষ্ঠী, জামায়াত-শিবির, বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির নাশকতা, হামলা, খুনোখুনি বন্ধ করা যাচ্ছে না। একটা ঘটনা ঘটানোর পর মাঝখানে বিরতি দিয়েই আবারও আরেকটি ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কার্যক্রমের মধ্যে কোথায় যেন একটা ফাঁক রয়ে গেছে। এসব ঘটনার মধ্য দিয়ে কারা বেনিফিসিয়ারি (লাভবান) হচ্ছে আর কারা লুজার (ক্ষতিগ্রস্ত) হচ্ছে তা হিসাব-নিকাশ করলেই বোঝা যাবে কারা এসব ঘটনার নেপথ্যে আছে?
×