ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নজরকাড়া সোনাপাতি

কাঁচা হলুদ রঙের উৎসব, থোকা থোকা ফুলে

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ১১ নভেম্বর ২০১৫

কাঁচা হলুদ রঙের উৎসব, থোকা থোকা ফুলে

মোরসালিন মিজান ॥ হাতির ঝিলের ফুটপাথ ধরে হাঁটতে গিয়ে হঠাৎ থামতে হলো। সোনারগাঁ হোটেলের পেছনের অংশে নতুন যে রাস্তা, এর ঢালে বেশ কিছু ছড়ানো ডালপালার গাছ। গাছের জন্য নয়, ফুল দেখে সেদিকে তাকাতে হলো। অদ্ভুত হলুদ দেখতে ফুল! একটি দুটি নয়, অসংখ্য। পরস্পরের সঙ্গে দারুণ ঘনিষ্ঠ হয়ে আছে। থোকা থোকা ফুল। থোকাগুলোও কাছাকাছি দূরত্বের। হঠাৎ দেখে মনে হয়, কেউ বুঝি হলুদবাটা মাখিয়ে দিয়ে গেছে! কাঁচা হলুদ রঙের উৎসব দেখে তাই থামতে হয়। ফুলটির নাম সোনাপাতি। শুধু হাতির ঝিলে নয়, এয়ারপোর্ট রোডসহ রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন সড়কের পাশে এখন খুব দেখা যাচ্ছে। সেনাপতি শব্দটি খুব পরিচিত বটে। কিন্তু ফুলের নাম সোনাপাতি। কেন? সে ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায় না। ‘সেনাপতি’র সঙ্গে কোন সংশ্লিষ্টতা এর থাকলে থাকতেও পারে। আবার অনেকের দৃষ্টিতে এটি ঠিক হলুদ নয়, সোনারং ফুল। সোনাপাতি নামকরণের এটিও একটি কারণ হতে পারে। আর বৈজ্ঞানিক নাম টেকমা স্টানস। আরও কিছু নাম আছে। যেমন-ইয়োলো বেলস, ইয়োলো ট্রামপেট, ইয়োলো এলডার। সোনাপাতি বাগানে দেখা যায় না বললেই চলে। বাগানে যেসব ফুল হয়, এটি তা থেকে আলাদা। কিছুটা ঝোপের মতো হয়। একই গাছের আবার দুটি প্রজাতি। বড় প্রজাতির গাছে বড় ফুল। ছোটটিতে অপেক্ষাকৃত ছোট ফুল ফোটে। রঙের দিক থেকে উভয় প্রজাতি এক ও অভিন্ন। উপরের দিকে ছড়ানো গাছে সবুজ পাতা। সেই সবুজ রীতিমতো ঢেকে দেয় গাঢ় হলুদ রঙের ফুল। কাছে গিয়ে ভাল করে খেয়াল করলে পরেই এক একটি ফুলের আকৃতি অনুমান করা যায়। ফুলগুলো লম্বা মাইকের মতো দেখতে। কেউ কেউ তাই মাইক ফুল বলে চালিয়ে দিচ্ছেন! এমন বেশকিছু ‘মাইক’ নিয়ে একটি তোড়া। প্রতিটি তোড়ায় হলুদের মাখামাখি। থোকা থোকা হলুদে গোটা গাছটি বিশেষ দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। সৌন্দর্যপ্রেমীদের চোখ শুধু নয়, সাধারণ পথিকের নজর কাড়ে। সোনাপাতি ফুল হাতে নিয়ে শুঁকলে মিষ্টি কোন ঘ্রাণ নাকে আসে না। আঙুলের ডগায় কিছুটা হলুদ ওঠে আসে ঠিকই! উদ্ভিদবিদ দ্বিজেন শর্মার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সোনাপাতি ক্রান্তীয় আমেরিকান প্রজাতি। ছোট প্রজাতির গাছ ৩ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। এর সরু ডালের দুই পাশে ঘন পাতা। দল ফানেলের আকার চওড়ায় ৩ থেকে ৪ সেমি। সোনাপাতির বড় প্রজাতিটির নাম গৌরীচৌরী। এই গাছ ৪ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। একই রকম যৌগপত্র। সাধারণত বর্ষা বা শরতে ফুল ফোটে বলে জানান তিনি। অবশ্য এখন হেমন্ত। ফুলটি দিব্যি ফুটে আছে। দেখে মনে হয়, হেমন্তের ঘরের অতিথি!
×