ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মাহমুদা সুবর্ণা

সোনার আলোয় উদ্ভাসিত জেসিকা

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ১১ নভেম্বর ২০১৫

সোনার আলোয় উদ্ভাসিত জেসিকা

গত এক দশকের বেশি সময় ধরেই ট্র্যাক এ্যান্ড ফিল্ডের সবচেয়ে আলোচিত নাম ব্রিটেনের জেসিকা এনিস হিল। অসাধারণ পারফর্মেন্স উপহার দিয়ে নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। অলিম্পিকের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন এই হ্যাপ্টাথালন। শুধু তাই নয়, বিশ্ব হ্যাপ্টাথালনের মুকুটও তার মাথায়। বিয়ের পর সন্তানসম্ভবা হওয়ার কারণে অনেকটা সময়ই ট্র্যাকের বাইরে থাকতে হয় তাকে। তবে বেজিংয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ফিরেই নিজের জাত চেনালেন তিনি। দু’দিন আগে তার পুরস্কারও পেলেন ২৯ বছর বয়সী জেসিকা এনিস হিল। গত শুক্রবার বর্ষসেরা নারী ক্রীড়াবিদের পুরস্কার পেলেন ইংল্যান্ডের জেসিকা এনিস হিল। অলিম্পিকে হ্যাপ্টাথালন চ্যাম্পিয়ন সর্বশেষ গত আগস্টে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে বেজিংয়ে স্বর্ণ জিতেন। তারই পুরস্কার জিতলেন এই তারকা এ্যাথলেট। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে এ তালিকায় দ্বিতীয় হয়েছেন সাইকেল রেসার লিজ্জি আরমিসটেড আর তৃতীয় হয়েছেন স্কেলেটন লিজ্জে ইয়ারনোল্ড। ইংলিশ মিডিয়া সানডে টাইমস ও স্কাই স্পোর্টস এই পুরস্কারটি প্রদান করে। এদিকে ইংল্যান্ডে হকি দল বর্ষসেরা নারী দলের পুরস্কার পেয়েছে। আর ডায়না এ্যাশহার-স্মিথ জিতেছেন তরুণ ক্রীড়াবিদের পুরস্কার। ২০১২ সালে লন্ডন অলিম্পিকে হ্যাপ্টাথালন ইভেন্টে স্বর্ণপদক জিতে পাদপ্রদীপের আলোয় এসেছিলেন জেসিকা এনিস হিল। এরপর ক্রীড়াঙ্গন থেকে সাময়িক সময়ের জন্য দূরে চলে যেতে হয়েছিল ব্রিটিশ এই এ্যাথলেটিক্সে। কারণ ২০১৩ সালের মাঝামাঝিতে বিয়ে করেন তিনি। এরপরই পেয়েছেন নারী জীবনের সফলতার স্বাদ। হয়েছেন পুত্রসন্তানের মা। অন্তঃসত্ত্বার কারণে ২০১৪ সালের কমনওয়েলথ গেমসে অংশগ্রহণ করতে পারেননি তিনি। সেই জেসিকা-ই বিশ্ব এ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপের এবারের আসরে স্বপ্নের প্রত্যাবর্তন করেছেন। হ্যাপ্টাথালন জিতেছেন স্বর্ণপদক। এর চেয়ে ভালভাবে প্রত্যাবর্তন করতে পারতেন না ২৯ বছর বয়সী এই এ্যাথলেট। বেজিংয়ের ৮০০ মিটার হিটে চোখ ধাঁধানো নৈপুণ্যই দেখিয়েছেন জেসিকা। দুই মিনিট ১০.১৩ সেকেন্ড সময় নিয়ে সবাইকে ছাপিয়ে হয়েছেন প্রথম। চীনের সেই পারফর্মেন্সের ধারাবাহিকতা আসছে বছরেও ধরে রাখতে চান তিনি। বর্তমানে একেবারেই ফিট জেসিকা এনিস। নিজের দেশ লন্ডনে লংজাম্পে ৬.৩৭ মিটার স্কোর গড়েছিলেন তিনি। ২০০ মিটারে ২৩.৪৯ স্কোর গড়ে দ্বিতীয় হয়েছিলেন। আর ১০০ মিটার হার্ডলসে ফিনিশিং লাইন স্পর্শ করতে সময় নিয়েছিলেন ১২.৩৯ সেকেন্ড। ব্রিটিশ এই তারকার বিশ্বাস ট্র্যাকে এখনও নিজের সেরাটা ঢেলে দিতে পারবেন তিনি। বিশেষ করে বেজিংয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের পারফর্মেন্সও তার অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে বলে জানান এই তারকা এ্যাথলেট। এ বিষয়ে তার অভিমত হলো, ‘আমি এখন আগের চেয়ে অনেক উন্নতি করেছি। বিশেষ করে চীনের পারফর্মেন্সে আমি খুবই আনন্দিত।’ ক্রীড়াজগতের সবচেয়ে বড় আসর অলিম্পিক। বিশেষ করে ট্র্যাক এ্যান্ড ফিল্ডের খেলোয়াড়দের জন্য। আগামী বছর ব্রাজিলের রাজধানী রিওতে অনুষ্ঠিত হবে ক্রীড়াজগতের মহাযজ্ঞ অলিম্পিক। রিও’র সেই টুর্নামেন্টেই এখন দৃষ্টি দিচ্ছেন জেসিকা এনিস। বয়সে ঊনত্রিশকেও ছাড়িয়ে গেছেন তিনি। যে কারণে এটাই হতে পার তার ক্যারিয়ারের শেষ বড় কোন টুর্নামেন্ট। শুধু বয়স বলেই কথা নয়, সন্তান এবং স্বামীর সংসারকেও এখন যথেষ্ট সময় দিতে হয় তার। এটা স্বীকার করছেন এনিস নিজেও। তবে সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারে নিজের অসামান্য সব অর্জনে দারুণ তৃপ্ত এই ব্রিটিশ হ্যাপ্টাথালন। এ বিষয়ে তার মন্তব্য হলো, ‘এটা আমার ক্যারিয়ারের গোধূলিবেলা। তবে এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যে আমার ক্যারিয়ারটা ছিল বিস্ময়কর। ইতোমধ্যে অনেক কিছুই অর্জন করেছি আমি।’ এখন তার চোখেমুখে শুধুই রিও অলিম্পিকের ভাবনা। এ বিষয়ে বর্ষসেরা পুরস্কার জেতার পর তিনি এক সাক্ষাতকারে বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমি শুধু রিওতেই দৃষ্টি দিচ্ছি। কেননা আমি নিশ্চিতভাবেই বলতে পারি যে এটাই হতে যাচ্ছে আমার ক্যারিয়ারের শেষ অলিম্পিক আসর। এখন যেভাবে নিজেকে উপভোগ করছি ঠিক আগামী বছরেও পারফর্মেন্সের এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চাই আশা করি রিও অলিম্পিকের পরই ভবিষ্যতের কথা ভাবব। এই মুহূর্তে আমার কাছে রিও অলিম্পিকই সবকিছু। সেখানে খেলার জন্য যা কিছু করার দরকার তার সবকিছুই করব আমি।’ তবে অলিম্পিকে যদি নিজের সেরাটা দিতে পারেন তাহলে ক্যারিয়ারকে আরও লম্বা করতে পারেন জেসিকা এনিস। কেননা রিও অলিম্পিকের পরের বছরই যে, বিশ্ব এ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপ। তাও আবার নিজের দেশে। তাই লন্ডনের সেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপেও যে তার খেলার প্রবল ইচ্ছে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে পারবেন কী সে পর্যন্ত নিজেকে নিয়ে যেতে? কারণ তিনি যে এখন একজন সন্তানের মাতাও। তবে সম্প্রতি এক সাক্ষাতকারে এনিসকে প্রশ্ন করা হয়েছিল তাহলে কী আপনি সুপার মম? জবাবে এনিস বলেন, ‘এটা আমার জন্য বিশেষ এ সম্মানের। তবে আমার চেয়েও আরও সুপার মম রয়েছেন।’ এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘এটা ভেবে নিজেকে খুবই সৌভাগ্যবান বলে মনে হয় যে, আমি নিয়মিতই অনুশীলন করতে পারি। কারণ স্পোর্টস হলো আমার ভালবাসা। অতীতে ছিল বর্তমানেও আছে ভবিষ্যতেও থাকবে। প্রকৃতপক্ষে এ্যাথলেটিক্স ক্যারিয়ারে আমি যেভাবে এসেছি তাতে আমি খুবই সন্তুষ্ট-আনন্দিত।’
×