শামীম হাসান
আমাদের গ্রামের স্কুলের পাশ দিয়ে ঝিকঝিক শব্দে ট্রেন চলে যেত। তখন অনেক ছোট ছিলাম। ক্লাস থ্রি অথবা ফোরে পড়ি। স্কুল ফাঁকি দিয়ে রেল লাইনের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম কখন ট্রেন যাবে। ট্রেন হুইসেল বাজিয়ে বাজিয়ে যখন আসত, তখন আমার খুব ভাল লাগত। ট্রেন চলে যাওয়ার পর অনেক দূর পর্যন্ত ট্রেনের পিছু পিছু দৌড়াতাম। মনে মনে ভাবতাম ট্রেনে যদি একবার চড়তে পারতাম। কিন্তু ট্রেন দেখা পর্যন্তই, চড়তে আর পারতাম না। আমাদের জেলা ফরিদপুরে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রেলের সব পাত উঠিয়ে ফেলা হয়। আমার ট্রেনে চড়ার স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়। বন্ধুরা যখন রেল ভ্রমণের গল্প শোনাত তখন ভাবতাম আমি কি কোন দিন ট্রেনে চড়তে পারব না? আমি কি আমার রেল ভ্রমণের গল্প করতে পারব না! আমার মনের ভিতরে একটা আফসোস থেকেই যায়। এক সময়ে চাকরির জন্য আমাকে ঢাকায় চলে আসতে হলো। আমার অফিস মতিঝিল, আর বাসা টঙ্গীতে। প্রথম প্রথম আমি বাসে চলাচল করতাম। কিন্তু ট্রাফিক জ্যামের কারণে ঠিক মতো অফিসে পৌঁছাতে পারতাম না। আফিস টাইম ঠিকমতো ধরার জন্য বেছে নিলাম ট্রেনে যাতায়াত। প্রতিদিন আমি বিমানবন্দর স্টেশন থেকে কমলাপুর পর্যন্ত যাই। ট্রেন সময় মতো স্টেশনে আসে না, এজন্য একটু আগেই বাড়ি থেকে বের হই। আমার ট্রেনে চড়ার স্বপ্ন পূরণ হয়।
অথচ এখন আমার আর ট্রেনে যাতায়াত করতে ভাল লাগে না। প্রায় প্রতিদিনই ট্রেনের সিটে বসে যেতে পারি না। এমনকি দাঁড়িয়ে থাকার জায়গা পর্যন্ত পাওয়া যায় না। অনেক মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে, ইঞ্জিনে, কেউ আবার দরজার পাশে ঝুলে ঝুলে যায়। এসবই যেন আমার স্বপ্নভঙ্গের বাস্তবতা।
টঙ্গী, গাজীপুর থেকে
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: