ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বেসরকারী জুটমিলগুলো তৈরি ব্যাগ নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে

পাটের বস্তা ব্যবহারে কঠোর অবস্থানে সরকার

প্রকাশিত: ০৪:২৮, ১২ নভেম্বর ২০১৫

পাটের বস্তা ব্যবহারে কঠোর অবস্থানে সরকার

কাওসার রহমান ॥ ছয়টি পণ্যে পাটের ব্যাগ ব্যবহারে সরকার কঠোর অবস্থান নিলেও সরবরাহ অর্ডার না পাওয়ায় বেসরকারী জুটমিলগুলো পাটের ব্যাগ তৈরি করে বিপাকে পড়েছে। আগামী ৩০ নবেম্বরের পর চাল, চিনি, সারসহ ৬টি পণ্য বাজারজাতকরণ কিংবা পরিবহন সবক্ষেত্রেই প্লাস্টিকের মোড়ক নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে সরকার। এ লক্ষ্যে বেসরকারী পাটকলগুলোকে ৩০ নবেম্বরের মধ্যে এক কোটি পাটের ব্যাগ তৈরি লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে মিলগুলো পাটের ব্যাগ তৈরি শুরু করলেও কোন সরবরাহ অর্ডার না পাওয়ায় তৈরি ব্যাগ নিয়ে তারা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়েছে। জানা যায়, ৩০ নবেম্বরের মধ্যে ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার ও চিনি ৬টি পণ্যের মোড়কীকরণে বাধ্যতামূলক পাট পণ্য ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রাথমিকভাবে সরকার ৪ কোটি বস্তা চেয়েছে মিলগুলোর কাছে। এর মধ্যে সরকারী মিল দেবে ৩ কোটি আর বেসরকারী মিল দেবে ১ কোটি। প্রতিটি বস্তার দাম ধরা হয়েছে হেসিয়ান (৩৬০ গ্রাম) ৫০ টাকা এবং সেকিং (৭০০ গ্রাম) ৭২ টাকা। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশন (বিজেএমসি) এবং বাংলাদেশ জুট এ্যাসোসিয়েশনের সদস্যা পাটের ব্যাগ তৈরি শুরু করেছে। বাংলাদেশ জুট মিল এ্যাসোসিয়েশন (বিজেএমএ) সূত্র জানায়, সরকারী নির্দেশে বেসরকারী খাতের জুটমিলগুলো আগ্রহ সহকারে পাটের ব্যাগ তৈরি শুরু করেছে। এ পর্যন্ত প্রায় ২০ লাখ পাটের ব্যাগ তৈরি হয়ে গেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার বা বেসরকারী কোন পক্ষ থেকে পাটের ব্যাগ ক্রয়ের ব্যাপারে কেউ কোন অর্ডার প্রদান বা আগ্রহ প্রকাশ না করায় মিলগুলোর মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিজেএমের সচিব আব্দুল বারিক খান বলেন, সরকার আমাদের ৩০ নবেম্বরের মধ্যে এক কোটি ব্যাগ দিতে বলেছে। সে লক্ষ্যে আমরা ব্যাগ উৎপাদন শুরু করেছি। এ পর্যন্ত প্রায় ২০ লাখ ব্যাগ তৈরি হয়ে গেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত পাটের ব্যাগ বিক্রির কোন অর্ডার পাইনি। ব্যাগ কেনার জন্য কেউ কোন আগ্রহও প্রকাশ করেনি। এমনকি মাল দিতে পারব কিনা সেটাও কেউ জিজ্ঞেস করছে না। সরকারের পক্ষ থেকেও মাল নেয়ার ব্যাপারে কোন নিশ্চয়তা পাচ্ছি না। ফলে আমাদের সদস্য মিলগুলো দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়েছে। তিনি বলেন, আমরা এখন কোন দিকে আগাব বুঝতে পারছি না। আমাদের ছোট ছোট মিল পাটের ব্যাগ তৈরি করছে। তাদের হাতে পর্যাপ্ত অর্থ নেই যে পাট কিনে ব্যাগ বানিয়ে মজুদ করে রাখবে। তাদের মাল বিক্রি করে সেই অর্থ দিয়ে পাট কিনে আবার ব্যাগ বানাতে হয়। ফলে তারাও অনিশ্চয়তায় পড়েছে উৎপাদিত ব্যাগ নিয়ে। শেষ পর্যন্ত ওই ব্যাগ বিক্রি না হলে তা নিয়ে তারা কী করবে? বারিক খান বলেন, এতদিন পাটের বস্তা ব্যবহার আইন-২০১০ বাস্তবায়িত না হওয়ায় স্থানীয় বাজারে ধস নেমেছে। বন্ধ হয়ে গেছে অনেক পাটকল। তাই বন্ধ পাটকলগুলো চালু করতে হলে এ আইন বাস্তবায়ন জরুরী। এতে বন্ধ পাটকলগুলোও আবার চালু করা সম্ভব হবে। উল্লেখ্য, ২০১০ সালে আইন করে দেশের বাজারে নিষিদ্ধ করা হয় সার, চিনি, চালসহ ছয়টি পণ্যে প্লাস্টিকের মোড়কের ব্যবহার। যা কার্যকর হওয়ার কথা ছিল ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে। কিন্তু বেঁধে দেয়া সময় প্রায় দেড় বছর পেরোলেও আইনটি সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে কাগজ-কলমের মধ্যেই। সরকার প্রথমে ২৫ অক্টোবর’ ২০১৫ থেকে এই আইন বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিলেও ব্যবহারকারীরা সময় চাওয়ায় তা পিছিয়ে আগামী ৩০ নবেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে। ফলে ডিসেম্বরের প্রথম দিন থেকেই ৬টি পণ্যে দেশের বাজারে প্লাস্টিকের মোড়ক নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে। আইনে নির্দিষ্ট পণ্যগুলোর ক্ষেত্রে পাঁচ কেজির বেশি মোড়কীকরণে বাধ্যতামূলকভাবে পাটের মোড়ক ব্যবহার করতে হবে। অন্যথায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে জেল-জরিমানার পাশাপাশি ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধেরও পদক্ষেপ নেবে সরকার। পাটশিল্পকে বাঁচানোর পাশাপাশি বাজারে পাটের তৈরি পণ্য আরও জনপ্রিয় করাটাই এক্ষেত্রে সরকারের মূল লক্ষ্য বলে জানালেন বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম। তিনি বলেন, আমরা এবার আটঘাট বেঁধেই আইন বাস্তবায়নে নেমেছি। আশা করছি এবার আইন পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পারব। ব্যবহারকারীদের পক্ষ থেকেই আমরা এবার ভাল সাড়া পাচ্ছি। মির্জা আজম বলেন, ‘এবার কেউ আইন না মানলে তাকে কালো তালিকাভুক্ত করা হবে, এমনকি তার এলসি ও লাইসেন্সও বাতিল হয়ে যাবে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে জেল-জরিমানার পাশাপাশি ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধেরও পদক্ষেপ নেয়া হবে।’ তিনি বলেন, ‘দেশে শতভাগ পাট পণ্য ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে বন্ধ মিলগুলো চালু হবে। বন্ধ মিলগুলোতে যে পরিমাণ শ্রমিক কাজ করত তাদের বেকারত্বও দূর হবে।’ পাট পণ্য ব্যবহার নিশ্চিত করতে পাটের বস্তা ব্যবহার আইন-২০১০ বাস্তবায়নের পাশাপাশি সর্বক্ষণিক মনিটরিং করা হবে বলে জানান তিনি।
×