ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

চার শতাধিক ইটভাঁটির অধিকাংশই অবৈধ

প্রকাশিত: ০৪:৩১, ১২ নভেম্বর ২০১৫

চার শতাধিক ইটভাঁটির অধিকাংশই অবৈধ

আহমেদ হুমায়ুন, চট্টগ্রাম অফিস ॥ সরকারী প্রজ্ঞাপন না মেনে চট্টগ্রামে শুরু হয়েছে ইট তৈরির কাজ। এতে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে জেলার প্রাকৃতিক পরিবেশ। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ইটভাঁটিতে ১২০ ফিট উচ্চতার চিমনি ব্যবহারের নির্দেশনা থাকলেও চট্টগ্রাম জেলার ১৪টি উপজেলায় এর কোন বাস্তবায়ন নেই। উল্টো এসব উপজেলার ৩১৫টি অবৈধ ইটভাঁটিতে কয়লার পরিবর্তে অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ইট প্রস্তুতে ব্যবহার করা হচ্ছে ভূমির (টপ সয়েল) উর্বর মাটি। এতে একদিকে পরিবেশে চরম ক্ষতি সাধন হচ্ছে, অপরদিকে নির্গত কালো ধোঁয়ায় আশপাশের লোকজন হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, এ্যালার্জি, এ্যাজমা, চুলকানিসহ নানা রোগে ভুগছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রামের ১৪ উপজেলায় ৪০৭টি ইটভাঁটি রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৯২টি বৈধ। বাকি ৩১৫টি ইটভাঁটি অবৈধ, যা মোট ইটভাঁটির প্রায় ৭৮ শতাংশ। ওইসব ইটভাঁটিতে অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। পরিবেশ অধিদফতর সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের ১৪টি উপজেলায় থাকা ইটভাঁটিগুলোর মাত্র ২০ শতাংশের পরিবেশ ছাড়পত্র রয়েছে। অপর ৮০ শতাংশের পরিবেশ ছাড়পত্র নেই। অবৈধ এই ইটভাঁটিগুলোই পরিবেশের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে। এ সম্পর্কে পরিবেশ অধিদফতর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মকবুল হোসেন বলেন, ‘শীত মৌসুম আসলেই ইটভাঁটিতে ইট পোড়ানো শুরু হয়। এতে শীতকালে পরিবেশের চরম বিপর্যয় হয়। চট্টগ্রাম জেলার পাঁচ ভাগের চার ভাগ ইটভাঁটি অবৈধ। এগুলোর একটিরও পরিবেশ ছাড়পত্র নেই।’ চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ আজিজুর রহমান ছিদ্দিকী বলেন, ইটভাঁটির কালো ধোঁয়া পরিবেশে মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে। শুধু তাই নয় ইটভাঁটির কালো ধোঁয়ায় হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, এ্যালার্জি, এ্যাজমা, চুলকানি, চোখের ঘাঁ হতে পারে। ইটভাঁটির পার্শ্ববর্তী পুকুরে কার্বনের এক ধরনের প্রলেপ পড়ে। ওই পানিতে যারা গোসল করবে তারা চর্মরোগ, চোখে কর্নিয়া রোগসহ নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হবে। এদিকে পরিবেশের পাশাপাশি মানুষের ক্ষতিসাধন করলেও এসব অবৈধ ইটভাঁটি উচ্ছেদ করতে পারছে না চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। বার বার উদ্যোগ নিলেও মামলা ও আইনগত জটিলতার কারণে জেলা প্রশাসনকে পিছু হটতে হয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে অবৈধ ইটভাঁটি উচ্ছেদের মামলা আছে ৮০টি। ১০টি ইটভাঁটি উচ্ছেদে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন আদালতের নির্দেশে স্থগিত মামলার সংখ্যা ২০টি। মামলায় নোটিস ইস্যু করা হয় ৩০টির। তথ্য সংগ্রহের কার্যক্রম চলমান আছে এ রকম উচ্ছেদ মামলার সংখ্যা ২০টি। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ডেপুটি রেভিনিউ কালেক্টর (আরডিসি) মোহাম্মদ রুহুল আমীন জানান, ১০-১৫ দিন আগে এ বিষয়ে একটি সভা হয়েছে। জেলা প্রশাসক অবৈধ ইটভাঁটি উচ্ছেদের জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলার সহকারী কমিশনারগণকে (ভূমি) নির্দেশ দিয়েছেন। জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ কমিশনারদের সহযোগিতা করবেন। খুব শীঘ্রই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে। জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন বলেন, অবৈধ ইটভাঁটির বিষয়টি আমার নজরে আছে। ১০-১৫ দিন আগে এ বিষয়ে একটি সভা করেছি। সেখানে উপজেলা সহকারী কমিশনারদের অবৈধ ইটভাঁটি উচ্ছেদ করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র নেই এমন ইটভাঁটিগুলো উচ্ছেদে জেলা প্রশাসনের কঠোর অবস্থান থাকবে বলে জানান তিনি।
×