ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শেষ ওয়ানডেতে জিম্বাবুইয়ে ৬১ রানে পরাজিত

বাংলাওয়াশ

প্রকাশিত: ০৫:২০, ১২ নভেম্বর ২০১৫

বাংলাওয়াশ

মিথুন আশরাফ ॥ ওয়ানডেতে গত বছর যেভাবে শেষ করেছিল বাংলাদেশ, ঠিক একইভাবে এ বছরও শেষ করল। জিম্বাবুইয়েকে হোয়াইটওয়াশ করে গত বছর শেষ হয়েছিল। বুধবার সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে ৬১ রানে জিতে একই দলকে হোয়াইটওয়াশ করেই চলতি বছর শেষ করল বাংলাদেশ। একদিনের সিরিজে জিম্বাবুইয়েকে হোয়াইটওয়াশ করায় রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদের স্পীকার শিরিন শারমিন চৌধুরী এবং বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ পৃথক পৃথক বার্তায় বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। প্রথম দুই ম্যাচে টস হেরে ব্যাটিং করে ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ। এবার টস জিতে আগে ব্যাট করে জয় পেয়েছে মাশরাফিবাহিনী। তামিম ইকবালের ৭৩, ইমরুল কায়েসের ৭৩ ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ৫২ রানে ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ২৭৬ রান করে বাংলাদেশ। জবাবে ৪৩.৩ ওভারে ২১৫ রান করতেই গুটিয়ে যায় জিম্বাবুইয়ে। শন উইলিয়ামস সর্বোচ্চ ৬৪ রান করেন। বল হাতে মুস্তাফিজুর রহমান একাই ৫ উইকেট নেন। ম্যাচ জয়ের সঙ্গে জিম্বাবুইয়েকে টানা ৮ ম্যাচে হারানোর কৃতিত্বও দেখাল বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে দুর্দান্ত একটি বছরই কাটাল। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান সিরিজ শুরুর আগেই বলেছিলেন, ‘জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে দাপটে জিততে চাই। কর্তৃত্ব দেখিয়েই জিততে চাই।’ তাই হলো। জিম্বাবুইয়েকে শুধু হোয়াইটওয়াশই করল না বাংলাদেশ, প্রতি ম্যাচে দাপট দেখিয়েই জিতল। প্রথম ওয়ানডেতে ১৪৫ রানের বড় ব্যবধানে হারানোর পর দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৫৮ রানে জিতল বাংলাদেশ। তৃতীয় ওয়ানডেতেও দাপট অব্যাহত থাকল। এমনই দাপট দেখাল, জিম্বাবুইয়ের যখন জিততে ৪৭ বলে ৬৩ রান দরকার, মুস্তাফিজের অষ্টম ওভারে গিয়ে পাঁচ সিøপ ও তিন গালি রাখাল বাংলাদেশ! অবশ্য এমনটি হতো না, প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করার স্মৃতি দিয়ে ওয়ানডেতে বছর শেষ করতে পারত না বাংলাদেশ, যদি অস্ট্রেলিয়া দল বাংলাদেশ সফরে আসত। তাহলে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে এ সময়টিতে সিরিজই হতো না। নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে বাংলাদেশ সফর স্থগিত করে দেয় অসিরা। এরপরই জিম্বাবুইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এবং সিরিজও খেলা হয়। তাতে বাংলাদেশই বাজিমাত করে। না হলে আগস্টে যে দক্ষিণ আফ্রিকাকে সিরিজ হারিয়েছিল, সেটিই বছরের শেষ ওয়ানডে সিরিজ হয়ে থাকত। জিম্বাবুইয়ে আসাতে বছরটিতে আরও জয় যুক্ত হয়েছে। দেশের মাটিতে পাকিস্তানকে ৩-০ ব্যবধানে হারানোর পর ভারতকেও ২-১ ব্যবধানে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকাকেও ২-১ ব্যবধানে সিরিজে হারিয়ে দুর্দান্ত বছর শেষ হয়েছিল। জিম্বাবুইয়ে খেলতে আসাতে এখন এ দিয়েই বছর শেষ হচ্ছে। বাংলাদেশ অবশ্য সোমবারই জিম্বাবুইয়েকে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে হারিয়ে সিরিজ জিতে নিয়েছিল। এক ম্যাচ বাকি থাকতেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছিল। এ পর্যন্ত ৬১টি দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলে ২০ সিরিজই জিতে নিয়েছিল। দেশের মাটিতে ৩৫ সিরিজ খেলে ১৬টিতেই জয় ধরা দিয়েছিল। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ১৫ সিরিজ খেলে নবম সিরিজ জয়ও হয়েছিল। জিম্বাবুইয়েকে তৃতীয় ওয়ানডেতে হারানোয় বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসে এখন ১১ সিরিজে প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করার কৃতিত্ব যুক্ত হয়েছে। সেই কৃতিত্বে শুধু প্রথম ওয়ানডেতেই নিজের নাম যুক্ত করতে পারলেন সাকিব। যিনিই জিম্বাবুইয়েকে দাপটে হারানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন সবার আগে। কিন্তু কন্যা সন্তান হবে। তাই প্রথম ওয়ানডে খেলেই বিসিবি থেকে অনুমতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান সাকিব। এর মধ্যে বাংলাদেশ সিরিজও জিতে যায়। দেশের মাটিতে টানা পঞ্চম সিরিজ জিতে। বুধবার জিম্বাবুইয়েকে হোয়াইটওয়াশও করে দেয়। কিন্তু সিরিজ জয় এবং হোয়াইটওয়াশ করা, কোনটিতেই থাকতে পারেননি সাকিব। সাকিব না থাকলেও তার পরিবর্তে ইমরুল কায়েস দলে সুযোগ পেয়েই ‘ব্যাক টু ব্যাক’ অর্ধশতক করে দেখান। ব্যাটিংয়ে সাকিবের অভাব কোনভাবেই অনুভূত হতে দেননি। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৭৬ রান করেন। ম্যাচসেরাও হন। তৃতীয় ওয়ানডেতে ৭৩ রানের ইনিংস খেলেন। দুই ওয়ানডেতেই সুযোগ ছিল রান আরও বাড়িয়ে নেয়ার। শতক করার। কিন্তু দুই ওয়ানডেতেই ‘অহেতুক’ আউট হলেন। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ফুলটস বল খেলতে গিয়ে আউট হয়েছেন। জিম্বাবুইয়েকে হোয়াইটওয়াশ করার ম্যাচে এগিয়ে খেলতে গিয়ে স্ট্যাম্পিং হয়েছেন। তবে আউট হওয়ার আগে কয়েকটি কৃতিত্ব গড়েছেন। দলীয় ১৪৭ রানে গিয়ে আউট হয়েছেন ইমরুল। তামিম ইকবাল ও ইমরুলের উদ্বোধনী জুটি তখন ভেঙ্গে যায়। এত বড় জুটি গড়ার সঙ্গে প্রথমবারের মতো তামিমের সঙ্গে শত রানের জুটি গড়েন ইমরুল। নিজেও ১৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। ইমরুলের আউটের পর ১৭৩ রানে তামিমও স্ট্যাম্পিং হন। তিনিও অর্ধশতক করেন। এর সঙ্গে দেশের ভেন্যুতে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সাকিবের পর দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ২০০০ রান, দেশের মাটিতে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ২৫০০ রান করার কৃতিত্বও গড়েন তামিম। দুইজন দলকে এমন একটা অবস্থানে নিয়ে যান, ৩০০ রান হওয়াটা খুব স্বাভাবিক মনে হয়। কিন্তু ২২৬ রানের মধ্যে মুশফিকুর রহীম (২৮), লিটন কুমার দাস (১৭), সাব্বির রহমান রুম্মন (১) ও নাসির হোসেন (০) আউট হয়ে যান। তখন ৩০০ রানের স্বপ্ন ভেঙ্গে যায়। এমনকি শেষপর্যন্ত ২৫০ রানও হয় কিনা সেই শঙ্কাও জাগে। শেষপর্যন্ত মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ৫২ রান করায় দল ২৭৬ রানে যায়। অবশ্য ২৩৬ রানে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে ছোটখাটো নাটকও হয়। রানআউট হন মাহমুদুল্লাহ। কিন্তু পরে টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় উইকেটরক্ষক চাকাবভার হাত আগেই স্ট্যাম্পে লেগে যায়। মাহমুদুল্লাহকে আবার উইকেটে ফিরিয়ে আনা হয়। সুযোগটি পেয়ে অর্ধশতকই হাঁকিয়ে দেন মাহমুদুল্লাহ। তাতে দলও বড় স্কোরই গড়ে। জিম্বাবুইয়ে ইনিংসে বরাবরের মতো ঘটনাই ঘটে। কখনও প্রতিরোধ গড়ে। কিন্তু শেষপর্যন্ত তা আর টিকে থাকে না। শুরুতেই মুস্তাফিজুর রহমানের কাটারে চিভাভা যে বোল্ড হয়ে যান, সেখানেই বোঝা যায় আবারও জিম্বাবুইয়ের দুর্দশা শুরু হয়ে গেছে। এরপর চতুর্থ উইকেটে চিগুম্বুরা-উইলিয়ামস ৮০ রানের জুটি গড়ে ও পঞ্চম উইকেটে ওয়েলার-উইলিয়ামস মিলে ৫৯ রানের জুটি গড়ে কিছুটা প্রতিরোধ গড়েন। তাতে কোন কাজই হয় না। জিম্বাবুইয়ে ইনিংসেও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের মতো একটি কা- ঘটে। উইলিয়ামসন রানআউট হয়েই যান, কিন্তু আরাফাত সানি পা স্ট্যাম্পে আগেই লেগে যায়। শেষপর্যন্ত উইলিয়ামসনই জিম্বাবুইয়ের ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ৬৪ রান করেন। ১৮৮ রানে উইলিয়ামস আউটের আগে এলটন চিগুম্বুরা ৪৫ ও ম্যালকম ওয়েলার ৩২ রান করেন। উইলিয়ামসন আউটের পর আর কেউই ব্যাট হাতে কিছুই করতে পারেননি। মুস্তাফিজ একাই ধসে দিলেন জিম্বাবুইয়ের ইনিংস। ৪১তম ওভারের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে টানা দুই উইকেট নিয়ে হ্যাটট্রিকের আশাও জাগান মুস্তাফিজ। কিন্তু হয়নি। তবে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেরা বোলিং করেন মুস্তাফিজ। তার এ বোলিংয়ে বড় জয় মিলে বাংলাদেশের। জিম্বাবুইয়েকে হোয়াইটওয়াশই করে দেয় বাংলাদেশ। শিরোপা বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের হাত থেকে নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা।
×