ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মিরপুরের নতুন ‘রাজা’ তামিম

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১২ নভেম্বর ২০১৫

মিরপুরের নতুন ‘রাজা’ তামিম

মোঃ মামুন রশীদ ॥ বন্দরনগরী চট্টগ্রামের ছেলে। ঘরের মাঠ জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে রান করার দিক থেকে তিনিই সবার শীর্ষে। বাংলাদেশের বাঁহাতি ওপেনার তামিম ইকবাল এবার দেশের ‘হোম অব ক্রিকেট’ মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামেরও সেরা হয়ে গেলেন। বুধবার জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে ৭৩ রানের একটি ঝকঝকে ইনিংস খেলে এ মাঠে রান করার দিক থেকে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন। মিরপুরে ২ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন এ বাঁহাতি। এখন তার এ ভেন্যুতে রান ৬৬ ম্যাচে ৩২.১২ গড়ে ২০৫৬। এতদিন মিরপুরে রান করার দিক থেকে সবার ওপরে ছিলেন তামিমের বন্ধু ও সতীর্থ সাকিব আল হাসান। সাকিবের রান ৬৮ ম্যাচে ৩৯.৪২ গড়ে ২০৫০। এছাড়া প্রথম বাংলাদেশী ব্যাটসম্যান হিসেবে দেশের মাটিতে তামিম ছুঁয়ে ফেলেছেন আড়াই হাজার রানের মাইলফলক। দেশের মাটিতে তার রান এখন ৩৩.৩৮ গড়ে ২৫৭১। তিনি ব্যাটিংয়ে মিরপুরের ‘রাজা’ হওয়ার দিনে দলকে উড়ন্ত এক সূচনা দিয়েছেন। সিরিজে প্রথমবারের মতো উদ্বোধনী জুটিতে শতরানের জুটি পেয়েছে বাংলাদেশ দল এবং সে কারণেই চলতি সিরিজে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ পেয়েছে টাইগাররা। তামিমের ওপেনিং সঙ্গী ইমরুল কায়েস ছিলেন আরও দাপুটে। তিনি ৬ চার ও ৪ ছক্কায় সমান ৭৩ রানের ইনিংস উপহার দেন। তামিমের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি ইনিংস উদ্বোধন করেছেন ইমরুল। তবে এই প্রথম দু’জনের মধ্যে শতরানের জুটি হলো। ১৪৭ রানের জুটিটি মিরপুরে বাংলাদেশের পক্ষে দ্বিতীয় সেরা এবং জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে তৃতীয় সেরা। তামিম একজন ইন্টারটেইনার, তামিম উইকেটে থাকা মানেই প্রতিপক্ষের জন্য তা ভীতিকর। কারণ তার বিধ্বংসী মনোভাবের অতীত পরিসংখ্যান। অনেক প্রতিপক্ষ বোলারকেই ক্যারিয়ারে আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে বিপর্যস্ত করেছেন। সে কারণে তামিম রানের মধ্যে থাকুন আর নাই থাকুন তাকে নিয়ে সবসময়ই প্রতিপক্ষদের বাড়তি একটি পরিকল্পনা আঁটতে হয় বাংলাদেশকে মোকাবেলার জন্য নামার আগে। তবে যে দিনটা তামিমের, সেই দিনটায় সব পরিকল্পনায় অকেজো হয়ে যায়। বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমী মানুষও তামিমের ব্যাট হেসে উঠলে হেসে ওঠেন আবার বাংলাদেশ দলের অবস্থানও দৃঢ় হয়ে যায়। সবাই বড় ইনিংস দেখতে চায় তামিমের ব্যাটে। সেটা না হলেই বিপত্তি, বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে সেরা ওপেনার হয়েও সইতে হয় সমালোচনা। এবার বিশ্বকাপের পর টানা কয়েকটি ম্যাচে বড় রান করতে না পেরে সেই সমালোচনার তীরে বিদ্ধ হতে হয়েছিল। গত এপ্রিলে পাকিস্তানের বিপক্ষে একটি শতক হাঁকিয়ে সব সমালোচকদের মুখ বন্ধ করে দিয়ে ব্যর্থতাকে কবর দিয়েছিলেন। কিন্তু তার নাম তামিম, ওয়ানডে ও টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বাধিক রান ও সেঞ্চুরির মালিক। সে কারণে প্রত্যাশা কমেনি বিন্দুমাত্র। দর্শকরা মাঠে আসেন তামিমের ব্যাটে সেঞ্চুরি দেখার জন্য! সেটা এ বাঁহাতি খুব ভাল করেই জানেন। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে এবার প্রথম ওয়ানডেতে দারুণ খেলছিলেন, কিন্তু ৪০ রান করে বিদায় নেন। দ্বিতীয় ওয়ানডের আগে তামিম প্রত্যয় জানিয়ে বলেছিলেন, ‘আমি আরও বড় ইনিংস খেলতে চাই।’ সেটা হয়নি দ্বিতীয় ওয়ানডেতে। মাত্র ২১ রান করেই ফিরে গিয়েছিলেন। তৃতীয় ওয়ানডেতে যখন ব্যাট হাতে নামলেন তখন মিরপুরে দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ২ হাজার রান পূর্ণ করা থেকে মাত্র ১৭ রান দূরে ছিলেন তামিম। শুরু থেকেই দুর্দান্ত খেলেছেন এদিন। যদিও এদিন প্রথম থেকে কিছুটা ধীরগতিতে শুরু করেছিলেন তামিম-ইমরুল। পরে অবশ্য ইমরুল কিছুটা আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন। দেখেশুনে তিনি সুযোগ পেলেই চড়াও হয়ে চার-ছক্কা হাঁকিয়েছেন। তামিমের আগেই ক্যারিয়ারের ১২তম অর্ধশতক হাঁকান তিনি ৪ চার ও ৩ ছক্কা হাঁকিয়ে। তামিম বল উড়িয়ে মারার দিকে মনোযোগী না হয়ে বড় ইনিংস খেলার দিকেই বেশি দৃষ্টি দিয়েছেন এমনটাই বোলা যাচ্ছিল তার সুস্থির ব্যাটিং দেখে। তবে রানের গতি মন্থর করেননি। ৭০ বলে ৫ চারে ক্যারিয়ারের ৩২তম ফিফটি পেয়ে যান তামিম। এর অনেক আগেই মিরপুরে ২ হাজার রান করা দ্বিতীয় ব্যাটসম্যানে পরিণত হন তিনি। ইনিংসের দশম ওভারের দ্বিতীয় বলে লুক জঙ্গেকে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে সাকিবের পর বিশ্বের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে মিরপুরের উইকেটে এ মাইলফল স্পর্শ করেন তিনি। তামিম-ইমরুলকে এরপরও থামাতে পারেনি জিম্বাবুইয়ে বোলাররা। অবশ্য প্রথম ভুলটা আবারও করলেন টানা দ্বিতীয় অর্ধশতক হাঁকানো ইমরুল। আগের ম্যাচে করেছিলেন ৭৬ রান। এবার ৯৫ বলে ৬ চার ও ৪ ছক্কায় ৭৩ রানে ফিরে যান সাজঘরে। ততক্ষণে ১৪৭ রানের বড় জুটি হয়ে গেছে দু’জনের মধ্যে। এটি সার্বিকভাবে বাংলাদেশের পক্ষে পঞ্চম সেরা এবং মিরপুরে দ্বিতীয় সেরা ওপেনিং জুটি। মিরপুরে সর্বোচ্চ উদ্বোধনী জুটি ১৫০ রানের। সেটি করেছিলেন ইমরুল-এনামুল হক বিজয় গত বছর এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৪ মার্চ। অভিষেক হওয়ার পর থেকে মোট ১৩ জনকে উদ্বোধনী জুটিতে পেয়েছেন তামিম। এর মধ্যে ইমরুলের সঙ্গেই সর্বাধিক ৪৭ ইনিংসে ওপেনিং করেছেন তামিম। দু’জন মিলে এদিন পর্যন্ত ১ সেঞ্চুরি ও ৮ হাফসেঞ্চুরিসহ করেছেন ২৮.৮৭ গড়ে সর্বাধিক ১৩৫৭ রান। বাংলাদেশের পক্ষে আর কোন ওপেনিং জুটি এত রান করতে পারেনি। অবশ্য দ্বিতীয় উইকেটেও দু’জন জুটি বেঁধেছেন। সেক্ষেত্রে তামিম-ইমরুল জুটিবদ্ধ হয়েছেন ৫১ ইনিংসে। রান করেছেন ২৭.৯৬ গড়ে ১৪২৬। তবে এই প্রথম শতরানের জুটি হলো এ দুই ওপেনারের মধ্যে। এর আগে দু’জনের সেরা জুটি ছিল ৮০ রানের। ২০১০ সালের ৭ জানুয়ারি ভারতের বিপক্ষে ওই জুটি গড়েছিলেন তামিম-ইমরুল। ইমরুল বিদায় নেয়ার পর অবশ্য বেশিক্ষণ উইকেটে থাকতে পারেননি তামিম। তিনিও ফিরে গেছেন ৭৩ রান করে। খেলেছেন ৯৮ বল, হাঁকিয়েছেন ৭ চার ও ১ ছক্কা। তামিম যতক্ষণ উইকেটে ছিলেন মনে হচ্ছিল ৩ শতাধিক রান করে ফেলবে বাংলাদেশ। আর আবারও তামিম ব্যাট হাতে জ্বলে ওঠায় মিরপুরে কানায় কানায় ভরা দর্শকরাও দারুণ উপভোগ করেছেন বাংলাদেশের ব্যাটিং। আউট হয়ে যাওয়ার আগেই মিরপুরের সেরা ব্যাটসম্যান হয়ে গেছেন তামিম (২০৫৬)। ছাড়িয়ে গেছেন আগের সেরা সাকিবকে (২০৫০) রান করার দিক থেকে। অবশ্য এই মাঠে সর্বাধিক সেঞ্চুরি (৪টি) তামিমের হলেও সর্বাধিক অর্ধশতক সাকিবের (১৭টি)। মিরপুরে তামিমের হাফসেঞ্চুরি ১২টি। অবশ্য নিজের ঘরের মাঠ সাগরিকায় ১৩ ইনিংসে ৪৫২ রান করে ওই ভেন্যুতেও সেরা তামিম। দেশের অন্যতম দুই ভেন্যুরই এখন সেরা ব্যাটসম্যান এ বাঁহাতি। ঘরের মাটিতে বাংলাদেশের মধ্যে সর্বাধিক ২৫৭১ রান এখন তামিমের। দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন মুশফিকুর রহীম ৩৫.২১ গড়ে ২৪৩০ রান করে।
×