ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ

জয়া আহসান এবার নতুন বিতর্কে

প্রকাশিত: ০৭:৩৭, ১২ নভেম্বর ২০১৫

জয়া আহসান এবার নতুন বিতর্কে

ছবি মুক্তির আগে প্রচারণার কৌশল হিসেবে বলিউড ও হলিউড অভিনেতা অভিনেত্রীদের বিতর্কিত কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা পাঠকরা কম বেশি সবাই পরিচিত। সেই পথেই হাঁটলেন বাংলাদেশের মডেল-অভিনেত্রী জয়া আহসান। সম্প্রতি কলকাতায় মুক্তি পেয়েছে সেখানকার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত নির্মাতা সৃজিত মুখার্জীর সিনেমা ‘রাজকাহিনী’। ওপারে অভিনয় করতে গিয়ে দু দু’বার জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী জয়া রাজকাহিনীতে খোলামেলা অভিনয়, অরুচিকর সংলাপ এবং ইতিহাস নিয়ে একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন। ১৯৪৭ সালের দেশ ভাগ নিয়ে তাঁর মন্তব্য বিতর্কের ঝড় তুলেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে। ফেসবুক ও অনলাইন পোর্টালে জয়ার এহেন কথাবার্তায় বিরক্ত প্রকাশ করেন অনেকেই। মজার কা-টা ঘটিয়েছে কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা। কলকাতার জনপ্রিয় এই পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে জয়াকে বলা হয়েছে বাংলাদেশের সানি লিওন। গত ৭ নবেম্বর প্রকাশিত সংবাদের শিরোনাম ছিল, ‘বাংলাদেশের সানি লিওন! দেশ ছাড়ার হুমকি জয়া এহসানকে।’ দেশের মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের প্রশ্ন, জয়াকে বাংলাদেশের সানি লিওন উপাধিতে ভূষিত করেছে কে? দেশের অসংখ্য নাটক ও দর্শকনন্দিত কিছু চলচ্চিত্রে অভিনয় করা জয়াকে নিয়ে কলকাতার প্রভাবশালী এই পত্রিকার এমন সংবাদে তাজ্জব বনে গেছেন তাঁরা। ভুঁইফোড় কোন নিউজ পোর্টাল এমন নিউজ করলে না হয় মেনে নেয়া যেত। জয়ার সঙ্গে অভিনয় করেছেন এমন একজন শিল্পী জানান, ‘আনন্দবাজার পত্রিকার এমন খবরের ভিত্তিতে জয়াকে কোন প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি। বাংলাদেশ বা পশ্চিমবঙ্গের কোন পত্রিকায় তিনি উক্ত সংবাদের প্রতিবাদও করেননি। এ থেকেই কি ব্যাপারটা স্পষ্ট বোঝা যায় না যে, ‘বাংলার সানি লিওন’ উপাধির ব্যাপারে জয়ার মৌন সম্মতি আছে। আনন্দবাজার পত্রিকার উক্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘বাংলাদেশে জয়ার বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করা হয়েছে। দেশ ছাড়ার হুমকি দেয়া হয়েছে।’ মজার বিষয় হচ্ছে দেশের জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত একজন শিল্পীর বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি হয়েছে, সেটা আমাদের পড়তে হচ্ছে অন্য দেশের সংবাদ মাধ্যমে? এ যেন মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি। কে বা কারা এই ফতোয়া জারি করেছে, কারাই বা জয়াকে দেশ ছাড়ার হুমকি দিয়েছে এই বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে পারেনি আনন্দবাজার, উল্লেখ করা নেই কোন সংবাদ সূত্র। বাংলাদেশের বিনোদন সাংবাদিকদের অবাক করেছে জয়ার এই মুখে কুলুপ আঁটা। আনন্দবাজার পত্রিকা তাদের সংবাদে যা বলে- ‘ফতোয়া জারি হলো বাংলাদেশের জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী জয়া আহসানের বিরুদ্ধে। সূত্রে খবর, জয়া বাংলাদেশের সানি লিওন এই অভিযোগে তাঁকে অবিলম্বে দেশ ছাড়তে বলা হয়েছে। দেয়া হয়েছে খুনের হুমকিও।’ কলকাতার সিনেমায় জয়া অবস্থান হারাতে চান না বলেই এসব নিয়ে কথা বলছেন না, ধারণা অনেকের। উল্লেখ্য, বলিউডে ইমরান হাশমির সঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ পেয়ে টিভি উপস্থাপিকা নুসরাত ফারিয়া দিনকয়েক আগে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে বলেছিলেন, ‘দেশে চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি বলে কিছু নেই’। এতে করে একটা ধারণা সংশ্লিষ্টদের মনে বদ্ধমূল হচ্ছে যে, অন্যদেশে কাজের সুযোগ পাওয়ার বড় মাধ্যম হচ্ছে সে দেশে গিয়ে বাংলাদেশেকে নিয়ে অপমানসূচক বক্তব্য দেয়া। যাতে করে দ্রুত সে দেশের গণমাধ্যম ও নির্মাতাদের নজরে আসা যায়। রাজকাহিনী চলচ্চিত্রে টালিগঞ্জের অভিনেতা রুদ্রনীলের সঙ্গে আপত্তিকর দৃশ্যের ভিডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়েছে ইউটিউবে। অনলাইন পোর্টালগুলো ভিজিটরস বাড়াতে রসিয়ে রসিয়ে ভিডিওসহ সংবাদ পরিবেশন করেছে। এহেন চরিত্রে অভিনয়ের জন্য জয়াকে ধুয়ে দিয়ে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে দর্শক-নির্মাতারা। জয়ার কী এমন প্রয়োজন ছিল এই ধরনের চরিত্রে অভিনয়ের? এমন প্রশ্ন করতে দেখা গেছে ইউটিউবে আপলোড করা এই বিতর্কিত ভিডিওর কমেন্ট বক্সে। এমন চরিত্রে অভিনয় করে জয়া নিজেকে সস্তা প্রমাণ করছেন। ভবিষ্যতে কলকাতার আট ফিল্মে আরও খোলামেলা চরিত্রে দেখা যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করতে দেখা যায় তাঁদের। ইউটিউবে ভিডিওর নিচে দেখা যায় শিশির শিমু নামে একজন লিখেছেন- ‘হ্যাঁ আমি মানছি কথাগুলো সত্য কিন্তু এমন অভিনয় না করলেও হতো। কারণ, অভিনয় করতে গিয়ে যদি মানুষের কাছে হেয় হতে হয় তাহলে সে অভিনয় প্রাণ পায়? হ্যাঁ আমি মানছি সমাজের কিছু মানুষ খারাপ মন্তব্য করবেই। সুতরাং খারাপ অভিনয় এড়িয়ে চলুন।’ পক্ষে-বিপক্ষে নানান মন্তব্যের ভেতর একজন জয়া ভক্ত বিস্ময় প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘তুমিও নষ্ট হয়ে গেলে... জয়া আহসান?’ রাজকাহিনীতে অভিনয় প্রসঙ্গে জয়া কলকাতার পত্রিকাকে বলেন, ‘এ ছবিতে রুবিনার ভূমিকায় ছোট একটি চরিত্রে অভিনয় করেছি। আর এখানে কলকাতার গুরুত্বপূর্ণ শিল্পীরা ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয় করেছেন। কিন্তু সে তুলনায় আমার পর্দায় উপস্থিতি অন্য সবার চেয়ে বেশি। এতে অভিনয় করার মানে হচ্ছে ঐতিহাসিক একটা কাজের অংশ হয়ে থাকা। বাংলাদেশের একজন শিল্পী হিসেবে তারা সম্মান করে আমাকে নিয়ে গেছেন। আমি তাঁদের ছবিতে অভিনয় করেছি। সেটা আমার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। অভিনয়ের জায়গাও ছিল। দর্শকরা দেখলে বাকিটা বুঝতে পারবেন। উল্লেখ্য যে, জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী জয়া বর্তমানে ব্যস্ত আছেন সাইফুল ইসলাম মান্নু পরিচালিত ‘পুত্র’ সিনেমার শুটিংয়ে। মুক্তির মিছিলে রয়েছে সাফিউদ্দিন সাফি পরিচালিত ও শাকিব খানের বিপরীতে অভিনীত ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনী ২’। এছাড়া তাকে সামনে দেখা যাবে আকরাম খানের ‘খাঁচা’ ও মাহমুদ দিদারের ‘বিউটি সার্কাস’ চলচ্চিত্রে। দেশের চলচ্চিত্রে পা দিয়ে একের পর চমক দেখালেও কলকাতায় এখন পর্যন্ত মনে রাখার মতো কোন কাজ করতে পারছেন না জয়া। তাই ‘রাজকাহিনী’কে তার পড়তি ক্যারিয়ারের এসিড টেস্ট হিসেবে দেখছেন তিনি। আলোচনায় আসতে এক প্রকার চাপে পড়েই এমন কাজ করেছেন। যদিও ইতিবাচক আলোচনার চেয়ে সমালোচনাই বেশি হচ্ছে। তবু জয়া এবং তাঁর ‘গেইম’ সফল বলে মনে করছেন চলচ্চিত্র বোদ্ধারা। তবে, বিদেশে অভিনয় করতে গিয়ে তারা যদি বিদেশের সংবাদ মাধ্যমে দেশের মান সম্মান ক্ষুণœ করেন তবে সেটি সকল বাংলাদেশির জন্যই বড় লজ্জার বিষয়।
×