ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বরেন্দ্রর ১২ লাখ মানুষ নিরাপদ পানি পাচ্ছেন

প্রকাশিত: ০৭:৫৪, ১২ নভেম্বর ২০১৫

বরেন্দ্রর ১২ লাখ মানুষ নিরাপদ পানি পাচ্ছেন

স্টাফ রিপোর্টার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ রোদে পোড়া উত্তপ্ত উঁচু নিচু বিস্তীর্ণ জনপদ লালমাটির বরেন্দ্র অঞ্চল। খুবই বিছিন্নভাবে এখানে সেখানে গ্রাম দেখা যাবে। এলাকার জলবায়ু অত্যন্ত রুক্ষ। অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অনেক কম। মাটির গঠন এবং ভূগর্ভস্থ পানির স্তরের কারণে এসব অঞ্চলে প্রচলিত নলকূপ দ্বারা সেচ কাজ সম্ভব ছিল না। পানিও পাওয়া যেত না। মাঝে মধ্যে পুকুর ও খাড়ির অস্তিত্ব থাকলেও এসব পানি সেচে ব্যবহার করা হলেও অত্র অঞ্চলের গ্রামগুলোর মানুষ বিশুদ্ধ পানির জন্য চেষ্টা করেও ব্যর্থ হতো। তাই তারা পুকুরের পানি খেয়ে বাঁচার চেষ্টা করলেও পানিবাহিত রোগ ছেড়ে কথা বলত না। ১৯৮৫ সালে এ অঞ্চলের তৎকালীন বিএডিসি প্রকৌশলীরা এক ধরনের গভীর নলকূপের উদ্ভাবন করে ভূগর্ভস্থ পানি সেচের সুযোগ সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে তারা বরেন্দ্রর সার্বিক উন্নয়নে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী ও নওগাঁর ১৫ উপজেলাকে সম্পৃক্ত করে বিএনডিসি বরেন্দ্র সমন্বিত এলাকা উন্নয়ন প্রকল্প (বিএইএডিপি) নামে একটি প্রজেক্ট গ্রহণ করে। প্রকল্প আওতাভুক্ত সেচ কাজের জন্য গভীর নলকূপ স্থাপন, সংস্কারের অভাবে পানি ধারণ ক্ষমতা না থাকা, মজা পুকুর ও খাল পুনর্খনন এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে সড়ক নির্মাণে হাত দেয়। প্রকল্পটিতে সাফল্য আসায় ১৯৯২ সালে বরেন্দ্রর ২৫ উপজেলাকে নিয়ে গঠন করা হয় বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। পর্যায়ক্রমে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের সকল জেলায় কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম বিস্তার লাভ করে। ভূগর্ভস্থ সেচকে বর্তমানে কিছুটা অনুৎসাহিত করে বিকল্প সেচ চালু করা হলেও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ প্রকল্পটিকে উৎসাহিত করা হয়। এ কারণে হাজার বছরের বিশুদ্ধ পানি সমস্যা বরেন্দ্র অঞ্চল হতে দূরীভূত করতে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সফল হয়েছে। ইতোপূর্বে যেমন করে সেচ সমস্যা, সড়ক সমস্যা ও অধিক গাছ লাগানো প্রকল্প বাস্তবায়িত করে বরেন্দ্রকে শহর এলাকার সঙ্গে জুড়ে দেয়া হয়েছিল। তেমনিভাবে এলাকায় নিরসন হয়েছে বিশুদ্ধ পানি সমস্যা। ওভারহেড ট্যাংক হতে বিভিন্ন স্থানে পাইপ লাইন স্থাপন করে নির্দিষ্ট স্থানে ট্যাপ স্থাপনের মাধ্যমে এলাকাভিত্তিক নিরাপদ পানীয় জল সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলে বরেন্দ্রর ১২ লাখ মানুষ নিরাপদ খাবার পানি পান করে পানিবাহিত রোগ হতে মুক্তি পেয়েছে। এখন পর্যন্ত ১০২৯ টিএ ধরনের স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে। প্রতি ঘণ্টায় তা সম্প্রসারিত হচ্ছে বরেন্দ্রর কাছাকাছি বা মধ্যে অবস্থিত উপজেলার গ্রামগুলোতে। বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তা জানান আরও যে ৫৫০টি স্থাপনা নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে তা প্রতিদিন বাস্তবায়িত হচ্ছে ও সংখ্যা বাড়ছে। বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বরেন্দ্রসহ সংশ্লিষ্ট আশপাশ এলাকার কয়েক কোটি মানুষকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের একটি মহান উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই বরেন্দ্র অঞ্চলে পানিবাহিত রোগ একেবারে কমে এসেছে।
×