ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

তবু আফসোস থাকলই!

প্রকাশিত: ০৮:০৩, ১২ নভেম্বর ২০১৫

তবু আফসোস থাকলই!

মিথুন আশরাফ ॥ স্কোরবোর্ডে অনেক রানই জমা হলো। ৭৩ রান করে করা তামিম ও ইমরুলের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের সঙ্গে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ৫২ রানে ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ২৭৬ রান করল বাংলাদেশ। কিন্তু শুরুতে যে ৩০০ রানের বেশি হবে আশা করা হচ্ছিল, তা আর হলো না। তাতে আফসোস রয়েই গেল। সিরিজে প্রথমবার টস জিতল বাংলাদেশ। টস জিতেই বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেন, ‘আমরা ব্যাট করব আগে। অনেক ভাল উইকেট। আশা করছি জুটি হবে এবং ভাল স্কোর গড়তে পারব। একই দল নিয়ে খেলব।’ জিম্বাবুইয়ে অধিনায়ক এলটন চিগুম্বুরা এর আগে দুই ওয়ানডেতেই টস জিতেছেন। কিন্তু বাংলাদেশকেই আগে ব্যাট করতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এবার টস হারলেন। বাংলাদেশই আগে ব্যাট করছে। চিগুম্বুরা বলেছেন, ‘আশা করছি দিনটি অন্যরকম হবে।’ অন্যরকমই হলো। তবে বাংলাদেশের জন্য আরও ভাল হলো। আর জিম্বাবুইয়ে আরও খারাপ দিনের দেখা পেল। অন্তত দুই ওয়ানডেতে যে বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে দাপট দেখিয়েছে, প্রথম ওয়ানডেতে ১৪৫ রানের পর দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৫৮ রানে জিতেছে; এবারও দাপট বজায়ই রাখল। আফগানিস্তানের কাছে ওয়ানডে ও টি২০ সিরিজে হারের ধকল যে এখনও কাটিয়ে উঠতে পারছে না জিম্বাবুইয়ে তা বোঝা গেল। শুরুতে একটু ধীরে ধীরেই খেলেন দুই ওপেনার। ১০ ওভারে ৪৭ রান আসে। ৬০ বলের মধ্যে ৪৪ বলে কোন রান আসেনি। বাকি ১৬ বলে ৪৭ রান আসে। এর মধ্যে তামিম ৪টি চার হাঁকান। ইমরুল ২টি চার ও ২টি ছক্কা হাঁকান। ১০ ওভারের শেষ বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ২১ রান করে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ২০০০ রান করেন তামিম। দেশের মাটিতে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ২৫০০ রান করেন তামিম। যেভাবে খেলছিলেন দুই ওপেনার, মনে হচ্ছিল বাংলাদেশ ৩০০ রানের বেশি করবে। কিন্তু দুই ওপেনার তামিম-ইমরুল মিলে প্রথমবারের মতো ওয়ানডেতে শত রানের জুটি গড়ার পর ১৪৭ রানে যেতেই ৭৩ রান করা ইমরুল স্ট্যাম্পিং হয়ে যান। ৪৮ রানে স্ট্যাম্পিং থেকে বেঁচে সেই একইভাবে আউট হন ইমরুল। তবে এর আগে ২২.৫ ওভারের সময় ক্রেমারের বলে ১ রান নিয়ে ব্যাক টু ব্যাক অর্ধশতক করেন ইমরুল। আবার বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ১৫০০ রানের মাইলফলকও স্পর্শ করেন। ইমরুল আউটের পর তামিমও একই পথের পথিক হন। তিনিও ৭৩ রান করে স্ট্যাম্পিং হন। সবচেয়ে মজার বিষয়, মুশফিকুর রহীমও (২৮) স্ট্যাম্পিংই হন। বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসে এবারই প্রথম এমনটি ঘটেছে, প্রথম তিন ব্যাটসম্যানই স্ট্যাম্পিংয়ে আউট হন। মুশফিক ১৯০ রানের সময় আউট হওয়ার পর ২২৬ রানের মধ্যেই আরও ৩ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। লিটন কুমার দাস (১৭) আবারও ব্যর্থ হন। এবার সাব্বির রহমান রুম্মন (১) ও নাসির হোসেনও (০) কোন অবদান রাখতে পারেননি। এমন সময় ভয় ঢুকে যায়। যেখানে ৩০০ রান হওয়ার কথা সেখানে শেষপর্যন্ত ২৫০ রান হবে তো? ২৩৬ রানে গিয়ে যখন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও রান আউটের শিকার হন, তখন সেই শঙ্কা আরও দেখা দেয়। তবে ভাগ্য ভাল, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের আউটটি হয়নি। ৩২ রানে রান আউট হয়ে মাঠই ছেড়ে যাচ্ছিলেন মাহমুদুল্লাহ। তাকে ঠেকান মাশরাফি। কী ঘটেছে? টিভি রিপ্লেতে দেখা গেছে বল স্ট্যাম্পে লাগার আগেই উইকেটরক্ষক রেগিস চাকাবভার হাত স্ট্যাম্পে লেগে বেলস পড়ে যায়। থার্ড আম্পায়ার এনামুল হক মনি অনেকবার রিপ্লে দেখে নটআউটের সিদ্ধান্ত দেন। কিন্তু চিগুম্বুরারা তা মানতে রাজি নন। কেন? পরে আবার টিভি রিপ্লেতে দেখানো হয় মাহমুদুল্লাহ যখন সাজঘরের দিকে হাঁটা শুরু করেন, এমন সময়ে চাকাবভা বল নিয়ে স্ট্যাম্প উপড়ে ফেলেন। আগে একবার স্ট্যাম্পে বল লাগার আগে হাত লাগলে পরে স্ট্যাম্প উপরে ফেললেই আউট দেয়া হয়। চাকাবভা তাই করেন। কিন্তু ততক্ষণে বল ‘ডেড’ হয়ে যায়। আর তাই আম্পায়ারদের সঙ্গে চিগুম্বুরার আলোচনা এবং জিম্বাবুইয়ে ক্রিকেটাররা নিজেদের মধ্যে শত আলোচনা করেও কাজ হয়নি। মাহমুদুল্লাহকে আউট দেয়া হয়নি। সেই মাহমুদুল্লাহ শেষে ইনিংসের ১ বল বাকি থাকতে রান আউটই হন। তবে এর আগে ৫২ রান করেন। যা দলকে ২৭৫ রানে নিয়ে যায়। এ সময় মাহমুদুল্লাহ আউট হওয়ার আগে ২৬৩ রানে মাশরাফি (১৬) আউট হন। শেষে ১ বলে আর ১ রান যোগ হয়। বড় স্কোরই গড়ে বাংলাদেশ। তবে ৩০০ রান বা তার বেশি যে করা গেলে শুরুতে এত ভাল খেলেও, সেই আফসোস থাকলই। এ আফসোস থাকলেও অনেক সুখকর কিছুও মিলল। তামিম ইকবাল কিংবদন্তি ক্রিকেটারদের কাতারে নিজের নাম লেখালেন। কোন নির্দিষ্ট স্টেডিয়ামে ২০০০-এর বেশি রান করা ব্যাটসম্যানের সংখ্যা খুব বেশি নয়। ক্রিকেট ইতিহাসে বুধবারের আগ পর্যন্ত এই তালিকায় ছিলেন ছ’জন। তারা হলেন- সনাথ জয়সুরিয়া, ইনজামাম উল হক, সাঈদ আনোয়ার, কুমার সাঙ্গাকারা, রিকি পন্টিং ও বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান। এবার এই তালিকায় দ্বিতীয় বাংলাদেশী ক্রিকেটার হিসেবে যোগ হলেন ওপেনিং ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে এই কীর্তি গড়েন তিনি। মিরপুরে তামিমের রান এখন ২০৫৬। দ্বিতীয় সেরা সাকিব। তিনি করেছেন ২০৫০ রান। অবশ্য ম্যাচে তামিম-ইমরুল জুটি নিয়েই সবার মুখে আলোচনা। এ জুটি প্রথমবারের মতো শত রানের জুটি গড়েছেন। যে জুটিই মূলত বাংলাদেশকে শুরুতেই এগিয়ে নিয়ে গেছে। ১৪৭ রানের জুটি গড়েছেন এ দুইজন। আর মাত্র ২৪ রান দরকার ছিল। তাহলেই বাংলাদেশের হয়ে ওপেনিংয়ে সর্বোচ্চ রানের জুটি গড়ে ফেলতেন তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস। তাহলে ১৬ বছরের পুরনো শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ ও মেহরাব হোসেন অপির রেকর্ডটা ভেঙে ফেলতে পারতেন এই দুই ওপেনার। সেবার, এই জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষেই ওপেনিং জুটিতে এই দুই ব্যাটসম্যান মিলে করেছিলেন ১৭০ রান। সেটা না হলেও ১৪৭ রানের জুটি দিয়েই অনেক কিংবদন্তিদের ছাড়িয়ে ফেলেছেন তামিম-ইমরুল। মিরপুরে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডের আগে ওয়ানডেতে এক সঙ্গে মোট ১২১০ রান যোগ করেছিলেন এই দুই ব্যাটসম্যান। এবার ১৪৭ রান যোগ করে ছাড়িয়ে গেলেন নামকরা কয়েকটা ওপেনিং জুটিকে। এর মধ্যে আছেন অজয় জাদেজা-শচীন টেন্ডুলকর, কেপলার ওয়েসেলস-এ্যান্ড্রু হাডসন ও ব্র্যাড হ্যাডিন-শেন ওয়াটসনকে। তবে, ওপেনার হিসেবে এখানে সবচেয়ে বড় নাম হলো এ্যান্ডি ফ্লাওয়ার-গ্র্যান্ট ফ্লাওয়ার। ৩৩ ম্যাচ এক সঙ্গে ওপেন করে মোট ১৩৫০ রান যোগ করেন এই দুই ভাই। তামিম-ইমরুল ৪৭ ম্যাচে করলেন ১৩৫৭ রান। আর এর মধ্য দিয়ে, তামিম-ইমরুল এখন ওয়ানডে ইতিহাসের ৩৪তম সেরা ওপেনিং জুটি; আর বাংলাদেশের এক নম্বর। মজার বিষয় হলো, দিনে এই দুই ব্যাটসম্যানই আউট হয়েছেন ৭৩ রানে। আর কাকতালীয়ভাবে, দুটো আউটই স্ট্যাম্পিং! এত সুন্দর শুরু হয়েছে। অথচ দিন শেষে আরও রান স্কোরবোর্ডে জমা না হওয়ার আফসোস থেকেই গেল।
×