ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মধ্যপাড়ার পাথরের চাহিদা ও বিক্রি বেড়েছে

প্রকাশিত: ০৪:১৬, ১৩ নভেম্বর ২০১৫

মধ্যপাড়ার পাথরের চাহিদা ও বিক্রি বেড়েছে

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর ॥ দিনাজপুরের মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনির পাথরের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতা ও বিক্রি বেড়েছে। ফলে খনিটির উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। দেশের বৃহৎ এবং একমাত্র পাথর খনি দিনাজপুরের মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড। ১৯৯৫ সাল থেকে খনিটির উন্নয়ন কাজ শুরু হয়ে ২০০৭ সালে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু থেকে খনিটি লাভের মুখ দেখতে পারেনি। এই সময়ে খনিটির প্রায় ১শ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। খনি সূত্র জানায়, সরকার দেশের নির্মাণাধীন পদ্মা বহুমুখী সেতু, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ট্যানেল নির্মাণ, ঢাকা এভিলিয়েটর এক্সপ্রেসসহ মেগা প্রকল্পগুলোতে রেলওয়েসহ সরকারী নির্মাণ কাজে মধ্যপাড়া পাথর খনির পাথর ব্যবহার বাধ্যতামূলক করায় পাথরের চাহিদা বেড়ে যায় এবং বিক্রিও বেড়ে গেছে। এছাড়া দেশের বেসরকারী নির্মাণকাজেও মধ্যপাড়ার পাথর ব্যবহার করার আগ্রহ বেড়েছে। বর্তমানে পাথর বিক্রি বেড়ে প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাড়ে ৪ থেকে ৫ হাজার মেট্রিক টন পাথর বিক্রি হচ্ছে। জানা গেছে, খনিটির উৎপাদন এবং ব্যবস্থাপনা বেসরকারী কোম্পানি জার্মানিয়া-ট্রেস্ট কনসোর্টিয়ামে (জিটিসি) এর হাতে দেয়ার পর প্রায় দেড় বছরে প্রতিদিন তিন শিফটে গড়ে ৪ হাজার মেট্রিক টন পাথর উত্তোলন হওয়ায় পাথরের মজুদ ইতোপূর্বের কয়েক বছরের উৎপাদনের রেকর্ড ভঙ্গ করে। ফলে ক্রেতারা মধ্যপাড়ার পাথর কিনতে আগ্রহী হয়ে উঠেন। পাথরের বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় প্রতিদিন খনিতে পাথর পরিবহনে প্রায় দেড়শ’ ট্রাক চলাচল করায় খনি এলাকায় ট্রাকের ড্রাইভার, হেলপারসহ ডিলারের প্রতিনিধি এবং ট্রাক বন্দোবস্তুকারী অফিসের কর্মীদের পদভারে মুখরিত এখন খনি এলাকা। এখানে যেন তৈরি হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ। খনি গেটের বাইরে অবস্থিত দোকানগুলোতে সারাদিন চলছে ক্রেতাদের ভিড়। সকল দোকানে বিক্রিও বেড়েছে। ট্রাক বন্দোবস্তুকারী অফিসগুলোর কর্মীদের ব্যস্ততা বেড়েছে। চাহিদামতো ট্রাক পাওয়া গেলে আরও ট্রাক খনিতে আসত এবং সরবরাহ আরও বাড়ত বলে ট্রাক বন্দোবস্তুকারী অফিসগুলো বলছে। খনির একটি সূত্র জানায়, পাথর খনির উন্নয়ন এবং উৎপাদন বাড়াতে ভূগর্ভে নতুন স্টোপ নির্মাণ (শিলা উৎপাদন ইউনিট) এর জন্য বিদেশী ভারী যন্ত্রপাতি এবং যন্ত্রাংশের অভাবে গত প্রায় তিন মাস ধরে খনির উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। ইতোমধ্যে সরকার খনি উন্নয়নে ১শ কোটি টাকা ঋণ বরাদ্দ দিলে বিদেশী আধুনিক যন্ত্রপাতি আামদানির জন্য খনি কর্তৃপক্ষ এলসি খুলেছে। এসব যন্ত্রপাতি খনিতে পৌঁছা মাত্রই খনির উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হবে। বর্তমানে খনিতে পাথরের যে মজুদ রয়েছে বিক্রির এ ধারা অব্যাহত থাকলেও পাথরের এই মজুদ শেষ হতে আরও ৪/৫ মাস সময় লাগবে। এই সময়ের পূর্বেই আবার পুরোদমে পাথর উত্তোলন শুরু হবে বলে তারা আশা করছেন। তাই পাথরের সঙ্কট হবে না বলেও তারা মনে করছেন। বর্তমানে খনির ইয়ার্ডে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ মেট্রিক টন পাথর মজুদ রয়েছে। সরকার মধ্যপাড়া পাথর খনিটিকে লোকসানের হাত থেকে বাঁচাতে ২০০১৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর বেলারুশ সরকারের একটি কোম্পানির সঙ্গে দেশীয় কোম্পানির যৌথভাবে প্রতিষ্ঠিত জার্মানিয়া-ট্রেস্ট কনসোর্টিয়ামে (জিটিসি) সঙ্গে ৬ বছর মেয়াদে উৎপাদন, রক্ষণাবেক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা চুক্তি করে। জিটিসি এই চুক্তির মেয়াদে ৯২ লাখ মেট্রিক টন পাথর উত্তোলনের লক্ষ্য নিয়ে গত ২০১৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি তাদের ব্যবস্থাপনায় পাথর উত্তোলন শুরু করে ৬ মাসের মধ্যে খনির আকাক্সিক্ষত তিন শিফট চালু করে প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার মেট্রিক টন পাথর উত্তোলন করে।
×