ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বেনাপোল সীমান্তে হস্তান্তর

নূর হোসেনকে ফেরত দিল ভারত

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ১৩ নভেম্বর ২০১৫

নূর হোসেনকে ফেরত দিল ভারত

শংকর কুমার দে, সাজেদ রহমান ও আবুল হোসেন ॥ বৃহস্পতিবার রাতে নূর হোসেনকে হস্তান্তর করা হয়েছে। রাত ১১টা ৩৮ মিনিটে হস্তান্তর করা হয়। যশোরের বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতে আটক নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের মামলার অন্যতম অভিযুক্ত সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেনকে যশোরের বেনাপোল সীমান্তে হস্তান্তর করা হচ্ছে এ খবরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই বেনাপোল চেকপোস্ট এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। যশোর জেলা পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান, বিজিবি উপ-অধিনায়ক মেজর লিয়াকত হোসেন, শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুস সালাম, বেনাপোল পোর্ট থানার ওসি অপূর্ব হাসান এ সময় উপস্থিত ছিলেন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে ভারতের ৪০ বিজিবি কমান্ডার এসকে শুল্কা বেনাপোল বিজিবি ক্যাম্পে এসে এদেশের প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে যান। রাত ৯টার দিকে সীমান্তের ওপার পেট্রাপোলে একটি মাইক্রোবাস আসতে দেখা যায়। মাইক্রোবাসটি আসার পরই উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুস সালাম ও পোর্ট থানার ওসি অপূর্ব হাসান পেট্রাপোলে যান। এরপর রাত ১১টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুস সালাম ফিরে আসেন। ফিরে আসেন পোর্ট থানার ওসি অপূর্ব হাসানও। রাত সোয়া ১১টার দিকে পোর্ট থানার ওসি অপূর্ব হাসান একটি নীল রঙের মাইক্রোবাস নিয়ে পেট্রাপোল সীমান্তে যান। মাইক্রোবাসটি ওপারে যাবার পর তার হেড লাইট বন্ধ করে দেয়া হয়। বন্ধ করে দেয়া হয় ওপারে রাখা গাড়িটির হেড লাইট। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর ওই গাড়িতে একজনকে তোলা হয়। এরপর তাকে মাইক্রোবাসে করে নিয়ে যাওয়া হয়। বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন পুলিশের ওসি মোমিনূল ইসলাম বলেন, গত বছরের ২৭ এপ্রিল সাত খুনের ঘটনার পর নূর হোসেন সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে পালিয়ে যায়। গত বছরের ১৪ জুন কলকাতায় দু’জন সঙ্গীসহ অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে গ্রেফতার হন নূর হোসেন। ১৮ অগাস্ট তার বিরুদ্ধে কলকাতা পুলিশ চার্জশীট দেয়। পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা ও দায়রা জজ আদালত ২৭ ফেব্রুয়ারি নূর হোসেনের বিচার শুরুর নির্দেশ দেন। সেই হিসেবে ১৩ মার্চ বিচার শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বিচারক না থাকায় ২২ মার্চ দিন দেয়া হয়। ওই দিন তার বিচার শুরু হয়। এদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত ১৬ অক্টোবর কলকাতার বিচারিক আদালত বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন নূর হোসেনকে। নূর হোসেন বন্দী ছিলেন দমদম সেন্ট্রাল জেলে। নারায়ণগঞ্জে বিচারের মুখোমুখি হওয়ার ভয়ে বাংলাদেশে ফিরে আসতে চাচ্ছেন না তিনি নিজেই। আইনের মারপ্যাঁচে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কারাগারেই থাকতে চাচ্ছিলেন নূর হোসেন। তার পক্ষে আদালতে আইনজীবী অনুপ ঘোষ উপস্থিত হয়ে তার বাংলাদেশে প্রত্যার্পণ পেছাতে চেয়েছেন গত সেপ্টেম্বরে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নূর হোসেনকে ফিরিয়ে আনার সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধের প্রতি সাড়া দিয়ে ভারত সরকার তার দেশে বেআইনী অনুপ্রবেশের মামলাটি প্রত্যাহার করে ফিরিয়ে দিতে তারাও প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। বিচারিক আদালত গত মাসে তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে সরকারী আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন দে মামলাটির গুরুত্ব ব্যাখ্যা করে বলেছেন, ভারতীয় দ-বিধির ৩২১ নম্বর ধারা অনুযায়ী দায়ের করা আবেদনে সরকার বলেছে, নূর হোসেন বাংলাদেশের একজন দাগী অপরাধী। তার নামে ইন্টারপোলের রেড কর্নার নোটিস রয়েছে। বাংলাদেশে গ্রেফতার এড়াতেই তিনি ভারতে এসে বেআইনীভাবে লুকিয়ে ছিলেন। আদালতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষে সরকারী আইনজীবী তার আবেদনে বলেন, বাংলাদেশ সরকার ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নূর হোসেনকে নিজেদের দেশে ফেরত নিতে চেয়েছে। সে জন্যই অনুপ্রবেশের মামলাটি প্রত্যাহার করে নূর হোসেনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে চায় ভারত সরকার। আদালতে আবেদনের কপি রাজ্য সরকারের গোপন বিভাগেও পাঠানো হয়েছে, যারা এ ধরনের অতি গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর বিষয়গুলোর ওপরে নজর রাখে। এর পরই নূর হোসেনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর পথ প্রশস্ত হয়। স্বরাষ্ট্্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত মাসে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের মামলার আসামি নূর হোসেনসহ ভারতে আটক শতাধিক অপরাধীর নাম উল্লেখ করে একটি চিঠি পাঠায়। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চিঠি পাওয়ার পর ভারত সরকারের পক্ষ থেকেও বাংলাদেশের কাছে একটি চিঠি পাঠানো হয়। ভারতের পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, অনুপ চেটিয়াকে হস্তান্তর করার জন্য অনুরোধ করে বলা হয় এতে দুই দেশই উপকৃত হবে। বিশেষ করে ভারতের কারাগারে যেসব বাংলাদেশী অপরাধী আটক আছে তাদের ফেরত দেয়া হবে। অনুপ চেটিয়াকে হস্তান্তর করার আগে এবং হস্তান্তর করার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক উর্ধতন কর্মকর্তাদের নিয়ে বিশেষ বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বৈঠকে অনুপ চেটিয়াকে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্তের পরই নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের আসামি নূর হোসেনকে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়, যা কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়। প্রসঙ্গত, নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের মামলা দায়েরের পর নূর হোসেন আর তার দুই সঙ্গী সেলিম ও খান সুমন কলকাতা বিমানবন্দরের কাছে কৈখালী এলাকায় গ্রেফতার হয়েছিলেন গত বছর ১৪ জুন। গ্রেফতার হওয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে ফরেনার্স এ্যাক্ট আইনের ১৪ ধারায় ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বাগুইহাটি থানার মামলা নং ৩৩৯। এই মামলায় বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে উত্তর চব্বিশপরগনা জেলা আদালতে। গত ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম এবং সিনিয়র আইনজীবী চন্দন সরকার, প্রাইভেটকারের চালক জাহাঙ্গীর, শেখ রাসেল, জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের সিদ্ধিরগঞ্জ থানা কমিটির সহ-সভাপতি তাজুল ইসলাম, ৭নং ওয়ার্ড যুবলীগের কর্মী মনিরুজ্জামান স্বপন এবং বন্ধু লিটনসহ ৭ জনকে অপহরণ করা হয়। অপহরণের তিন দিন পর শীতলক্ষ্যা নদীতে ছয় জনের লাশ, পরদিন আরেক জনের লাশ পাওয়া যায়। বহুল আলোচিত অন্যতম আসামি নূর হোসেনের অনুপস্থিতিতেই চাঞ্চল্যকর নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের মামলার চার্জশীট (অভিযোগপত্র) দেয়ার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে নারায়ণগঞ্জের আদালতে। যেভাবে ঘটে ৭ খুন ॥ সেভেন মার্ডারের ঘটনায় র‌্যাব-১১ এর সাবেক কর্মকর্তা মেজর আরিফ ও কমান্ডার রানার- এই দুটি টিম কাজ করেছে। এর মধ্যে আরিফের টিম কাজ করেছে কিলিং। আর রানার টিম কাজ করেছে ব্রেক আপ। মূল পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় ছিলেন র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ। তারা যে হত্যাকা-ে জড়িত সেই বিষয়ে আদালতে ১৬৫ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়া ছাড়াও পুলিশ নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত খুনের ঘটনায় র‌্যাব-১১ এর শীর্ষ তিন কর্মকর্তাসহ ২১ জন র‌্যাব সদস্যের সম্পৃক্ততার তথ্যপ্রমাণ পায়। তাদের সবাইকে আসামি করে চার্জশীট দেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী নূর হোসেন ও তার সাত সহযোগীকেও চার্জশীটে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়েও প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পুলিশ প্রায় তিন মাসের দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে তদন্ত প্রক্রিয়া গুটিয়ে এনেছে। চার্জশীট দাখিল করতে পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্তও ইতোমধ্যেই তদন্ত সংশ্লিষ্টদের হাতে এসেছে। তবে তদন্ত কর্তৃপক্ষ ভারতে আটক নূর হোসেন দেশে ফেরা পর্যন্ত আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে চায়। আইনী জটিলতায় নূরকে দেশে এত দিন ফিরিয়ে আনা সম্ভবপর হয়নি। তার অনুপস্থিতিতেই চার্জশীট দাখিল করা হয় এবং তার অনুপস্থিতিই বিচারকার্য চলছিল। মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে অফিসে বসে দিকনির্দেশনা দেন র‌্যাব-১১ এর সাবেক অধিনায়ক লে. কর্নেল (অব) তারেক সাঈদ মোহাম্মদ। মেজর আরিফের সঙ্গে অপহরণ ও লাশ গুমে অংশ নেন আরেক কোম্পানি কমান্ডার এমএম রানাসহ র‌্যাব-১১ এর মোট ২১ জন সদস্য। অপহরণ করার জন্য অর্থ যোগান দেয়া এবং লাশ গুমের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে নূর হোসেনসহ তার সাত সহযোগীকে চিহ্নিত করা হয়েছে। লাশ গুমের কাজে ব্যবহৃত নৌকা ও মাঝির সন্ধান পাওয়া গেছে। মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে প্যানেল মেয়র নজরুলকে অপহরণ ও খুনের জন্য নূর হোসেনের সঙ্গে চুক্তি করেন র‌্যাব-১১ এর শীর্ষ তিন কর্মকর্তা। চুক্তি অনুযায়ী তারা নজরুলকে অপহরণের জন্য একাধিকবার চেষ্টা করেন। নজরুল সব সময় একাধিক সঙ্গী বেষ্টিত অবস্থায় চলাফেরা করায় তাকে অপহরণ করা সম্ভব হচ্ছিল না। এক পর্যায়ে ৪ সঙ্গীসহ ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিঙ্ক রোড থেকে নজরুল ইসলামকে তুলে নিয়ে যান মেজর আরিফ ও এমএম রানা। এ সময় র‌্যাব-১১ এর তিনটি মাইক্রোবাস ব্যবহৃত হয়। গত ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও সিনিয়র আইনজীবী চন্দন সরকারসহ ৭ জনকে অপহরণ করা হয়। এর দুদিন পর অপহৃতদের সবার হাত-পা বাঁধা লাশ শীতলক্ষ্যায় ভেসে ওঠে। চাঞ্চল্যকর এই অপহরণ ও খুনের ঘটনায় র‌্যাব-১১ এর সংশ্লিষ্টতার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তিন র‌্যাব কর্মকর্তা গ্রেফতার হন। ইতোমধ্যে তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীও দিয়েছেন। তাদের দেয়া জবানবন্দীর ভিত্তিতে সাতজনকে অপহরণ ও খুনের পর যে নৌকায় করে লাশ নদীতে ফেলা হয়েছে সেই নৌকার মাঝিকে খুঁজে বের করে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। এ ছাড়া লাশ নদীতে ফেলার পর নৌকাটি শীতলক্ষ্যায় ডুবিয়ে দেয়া হয়। সেই নৌকাটিও পাওয়া গেছে। গত ২৭ এপ্রিল সাতজনকে অপহরণের পর পরই চেতনানাশক ইঞ্জেকশন দিয়ে অচেতন করা হয়। এরপর তাদের মুখে প্লাস্টিকের প্যাকেট জড়িয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। এরপর গভীর রাতে লাশগুলো নিয়ে যাওয়া হয় মুন্সীগঞ্জের দিকে। কিন্তু সেদিকে লাশ ফেলার উপযুক্ত স্থান না পেয়ে আবারও নারায়ণগঞ্জে ফিরে আসে লাশ গুমের সঙ্গে জড়িতরা। পথে তারা একাধিকবার পুলিশের চেকপোস্টের মুখোমুখি হন। প্রতিবারই র‌্যাব পরিচয়পত্র দেখিয়ে পার পেয়ে যান জড়িত র‌্যাব সদস্যরা। এক পর্যায়ে মেজর (অব) আরিফ হোসেন নূর হোসেনকে ফোন করে শীতলক্ষ্যার তীরে তার বালুমহালের আশপাশের লোক সরিয়ে দিতে বলেন। নূর হোসেন তার বালুমহালের আশপাশ থেকে লোকজন সরিয়ে নিলে গভীর রাতে নৌকায় সাতটি লাশ নদীতে ডুবিয়ে দেয়া হয়। এর আগে র‌্যাব-১১ এর সিপিসি-১ এ নিয়ে গিয়ে প্রতিটি লাশের পেট ফুটো করে দেয়া হয়, যাতে লাশ ভেসে না ওঠে। কিন্তু ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকরা জানান, লাশের ফুটো করা অংশে চর্বি জমে যাওয়ার কারণে লাশগুলো ভেসে ওঠে। মূল পরিকল্পনায় চার্জশীটভুক্ত নূর হোসেন ॥ নিহত নজরুলের শ্বশুর শহীদ চেয়ারম্যানের দাবি অনুযায়ী ৬ কোটি টাকা দেয়ার দাবি করেছে। নূর হোসেনের কাছ থেকে মাত্র ১৮ লাখ টাকার এফডিআর এবং একটি ফ্ল্যাট পেয়েছিলেন মেজর আরিফ। অন্যদিকে প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের টাকা মাসোয়ারা পাওয়ায় লে. কর্নেল তারিক সাঈদ মোহাম্মদ ও কমান্ডার এমএম রানা দুর্বল ছিলেন নূর হোসেনের প্রতি। এ ছাড়া অভিযান সফল হলে তারেক সাঈদ ও এমএম রানাকে বড় অঙ্কের টাকা এফডিআর করে দেয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন নূর হোসেন। মেজর আরিফের সঙ্গে লে. কর্নেল তারিক সাঈদের কথা ছিল শুধু প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামকেই অপহরণ করা হবে। কিন্তু ঘটনার আকস্মিকতায় সাতজনকে অপহরণ করেন মেজর আরিফ ও কমান্ডার রানা। অপহরণ ও লাশের গুমের সময় মেজর আরিফ ও কমান্ডার এমএম রানা নিজেই উপস্থিত ছিলেন। অফিসে বসে বিশেষ একটি ল্যান্ডফোন ব্যবহার করে লাশ গুমের পুরো বিষয়টি তদারক করেন র‌্যাব-১১ এর তৎকালীন অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ। নিজেদের আড়াল করতে মেজর আরিফ ও এমএম রানা তাদের জন্য নির্ধারিত সরকারী মোবাইল নম্বর বাদ দিয়ে তারা একাধিক নিবন্ধনবিহীন নম্বর ব্যবহার করেন। এই তিন র‌্যাব কর্মকর্তা নিজেদের মধ্যে যেসব কথাবার্তা বলেছেন তা একটি বিশেষ সংস্থা রেকর্ড করে। এসব রেকর্ড সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করেছে তদন্ত কর্মকর্তা। এ ছাড়া ঘটনার সঙ্গে একজন শীর্ষ র‌্যাব কর্মকর্তার জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠার পর ওই কর্মকর্তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জ জেলা ডিবির ইন্সপেক্টর মামুনুর রশিদ। তদন্তের সার্বিক তত্ত্বাবধান করছেন নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন। সাত অপহরণের পর নিহত প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের স্ত্রী বিউটি বাদী হয়ে নূর হোসেন, শাহজালাল বাদল, আমিনুল ইসলাম রাজু, ইকবাল হোসেন, হাজী ইয়াসিন ও হাসমত আলী হাসুসহ অজ্ঞাত ১০-১২ জনকে আসামি করে মামলা করেন। স্বজনদের প্রতিক্রিয়া ॥ নারায়ণগঞ্জ থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, নারায়ণগঞ্জে সাত খুনে নিহত কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি সন্তোষ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে রাতে সাংবাদিকদের বলেন, নূর হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক। এই হত্যাকাণ্ডে তার সঙ্গে আর কারা কারা জড়িত। পরিকল্পনাকারী কারা তা বের করা হউক। আমার স্বামীর সঙ্গে র‌্যাবের কোন বিরোধ ছিল না। তাই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এই হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত পরিকল্পনাকারীদের নাম তার মুখ থেকে বের করা হউক। তদন্তকারী কর্মকর্তার অভিযোগপত্রে পরিকল্পনাকারী কে তা আসেনি। সেলিনা ইসলামের সঙ্গে একই দাবি জানিয়েছেন সাত খুনে নিহত যুবলীগ নেতা মনিরুজ্জামান স্বপনের ছোট ভাই মিজানুর রহমান রিপন। তিনি বলেন, নূর হোসেনের সঙ্গে র‌্যাবের একদিনে সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। তাই নূর হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেই হত্যাকা-ের সঙ্গে পরিকল্পনাকারী ও খুনীরা শনাক্ত হবে।
×