ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১৩ নভেম্বর ২০১৫

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ হেমন্ত এখন। বেশ স্বস্তির এই ঋতু। গরম নেই। বৃষ্টির দিন গত হয়েছে। আসি আসি করছে শীত। এ সময়টাতে বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহর ঢাকায় উৎসব অনুষ্ঠান লেগে থাকে। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। এরই মাঝে মুখর হয়ে উঠেছে শিল্প সংস্কৃতি অঙ্গন। বৃহস্পতিবার থেকে আর্মি স্টেডিয়ামে শুরু হয়েছে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফোক ফেস্ট। তিন দিনব্যাপী লোকসঙ্গীত উৎসব উপলক্ষে জমজমাট গোটা এলাকা। প্রথম দিন বিভিন্ন বয়সী মানুষ স্রোতের মতো প্রবেশ করেছেন আর্মি স্টেডিয়ামে। মধ্যরাত পর্যন্ত গান শুনেছেন তারা। বিশাল মঞ্চে পরিবেশিত হয়েছে হাওয়া মাটি জলের গান। বাংলাদেশের শিল্পীরা গেয়েছেন। মাতিয়ে রেখেছিলেন বিদেশী তারকারাও। উদ্বোধনী দিন গান করেন বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের কয়েকজন নামকরা বাউল। বাংলাদেশের গর্ব লালনকে গানে গানে তুলে ধরেন ফরিদা পারভীন। কিরণ চন্দ্র রায় ও চন্দনা মজুমদারও বাংলার বিখ্যাত লোককবিদের গান গেয়ে শোনান। একই দিন গান শোনান রব ফকির ও শফি ম-ল। এদিন পল্লবী ডান্স গ্রুপের দলীয় পরিবেশনাও ছিল উপভোগ্য। ভারতের শিল্পীদের মধ্যে গান করেন পাপন ও তার দল দ্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। অর্ক মুখার্জীর পরিবেশনাও মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করেন শ্রোতা। নিজেদের লোাকসঙ্গীত গেয়ে শোনান পাকিস্তানের শিল্পী সাঁই জহুরও। সব মিলিয়ে প্রথম দিনই বেশ জমে ওঠে ফোক ফেস্ট। তিন দিনব্যাপী আয়োজন আগামীকাল শনিবার শেষ হবে। একই স্থানে ২৭ নবেম্বর থেকে শুরু হবে ‘বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসব বাংলাদেশ’। পাঁচ দিনব্যাপী আয়োজনের প্রস্তুতি এখন চলছে। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সবচেয়ে বড় আসর শুরু হবে প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টায়। চলবে ভোর ৫টা পর্যন্ত। এরই মাঝে ধ্রুপদী সঙ্গীত ও নৃত্যের প্রধান প্রধান শাখার উল্লেখযোগ্য শিল্পীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছেন আয়োজকরা। প্রথমবারের মতো যোগ দেবেন তবলার যাদুকর ওস্তাদ জাকির হোসেন। প-িত হরিপ্রসাদ চৌরাশিয়ার বাঁশি শোনার সৌভাগ্য হবে এবারও। আসছেন বিখ্যাত শিল্পী ওস্তাদ রাশিদ খান। প-িত শিবকুমার শর্মা, প-িত অজয় চক্রবর্তীর মতো শিল্পীরাও গাইবেন। সব ঠিক থাকলে জমজমাট হয়ে উঠবে উৎসব। উৎসব এখন প্রকৃতিতেও। শীতে ফুলে ফুলে ভরে ওঠে বাগান। তার ঠিক আগের সময়টা এখন চলছে। শহরের বিভিন্ন উদ্যান, শখের বাগান ও নার্সারিতে রঙিন ফুল ফুটতে শুরু করেছে। শাহবাগের ফুলের দোকানগুলোতেও আসতে শুরু করেছে মৌসুমি ফুল। তবে অবাক হয়ে তাকাতে হচ্ছে কৃষ্ণচূড়ার দিকে। গ্রীষ্মের ফুল অথচ এই অসময়ে দিব্যি ফুটে আছে! শাহবাগের সড়ক বিভাজকের ওপর ছোট্ট গাছ। একটু একটু করে বাড়ছে। সেই গাছে রঙিন কৃষ্ণচূড়া। শাহবাগ মোড় থেকে টিএসসির দিকে যেতে চোখে পড়বেই। কারণ ফুলসহ ডাল বিস্তৃত হয়েছে মূল সড়ক পর্যন্ত। এবার ঐশীর কথা। এই কিশোরী কারও কাছে আর অচেনা নয়। খুব চাঞ্চল্যকর খুনের মামলার আসামি। হ্যাঁ, নিজের বাবা-মাকে খুন করার অপরাধে অভিযুক্ত। ঘোরতর অপরাধ। মামলা চলছিল। আর তারপর বৃহস্পতিবার রায় শোনায় আদালত। পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমান হত্যা মামলায় নিহতদের একমাত্র মেয়েকে শোনানো হয়েছে ফাঁসির রায়। দুপুরে মামলার রায় ঘোষণা করেন ঢাকার ৩ নম্বর দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক সাঈদ আহমেদ। মুহূর্তেই খবর ছড়িয়ে পড়ে গোটা শহরে। নতুন করে শুরু হয় আলোচনা। খুনের ঘটনায় গ্রেফতারের পর থেকেই ঐশীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাওয়া হয়ে আসছিল। তবে ফাঁসির রায়ের পর এ চিত্র অনেকটাই বদলে যায়। ঢাকার বিভিন্ন অলিগলি ঘুরে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, তাদের মন ভারাক্রান্ত। অনেকেই এদিন সমস্যার আরও গভীরে যাওয়ার পরামর্শ দেন। বলেন, এই ঘটনার দায় ঐশীর একার নয়। পরিবারকেও দায় নিতে হবে। ঘরে শিশুকন্যাটির সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠার অনুকূল পরিবেশ কি ছিল? পিতা-মাতা কি বোঝার চেষ্টা করেছিলেন তাদের সন্তানকে? সময় দিয়েছিলেন? এমন নানান প্রশ্ন তোলেন সচেতন মহল। তাদের মতে, আজকের অস্থির অশান্ত উচ্চাভিলাষী সমাজ ঐশীদের সৃষ্টি করে। অসুস্থ প্রতিযোগিতা, নৈতিক অবক্ষয় রোধ করতে না পারলে আরও অসংখ্য ঐশীর সৃষ্টি হবে। সেদিকে মূল দৃষ্টি দেয়ার আহ্বান জানানো হয় অধিকাংশ আলোচনা থেকে।
×