ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বগুড়ার মানুষকে মনের চোখেও দেখলেন প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১৩ নভেম্বর ২০১৫

বগুড়ার মানুষকে মনের চোখেও দেখলেন প্রধানমন্ত্রী

সমুদ্র হক ॥ ‘চোখের দেখা হচ্ছে না, মনের চোখে দেখা হচ্ছে- মনের চোখে দেখছি’ এই উক্তি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। বৃহস্পতিবার বগুড়া শহরের আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠের জনসভায় এত মানুষের ঢল নেমেছিল যে সংলগ্ন জিলা স্কুল মাঠ ভরে গিয়েও জনসমুদ্রের ঢেউ শহরের প্রতিটি সড়কে আছড়ে পড়েছিল। সকাল থেকেই শহরে প্রতিটি কোনায় স্থাপিত প্রায় ১০০টি মাইকে বাজছিল মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোর গান। ‘শোন একটি মুজিবরের কণ্ঠ থেকে লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি প্রতিধ্বনি আকাশ বাতাসে ওঠে রণি...’ এ গানের কথাই মিলে গিয়েছিল এই দিনে। শহরের চারদিক থেকে একের পর এক মিছিল নিয়ে গণমানুষের জোয়ার বয়ে গিয়েছিল শহরময়। শহরের প্রতিটি রাস্তায় শুধু মানুষ আর মানুষ। মনে হবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি নিয়েই ছুটছে হাজারও মানুষ বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেখার জন্য। বগুড়ার ইতিহাসে এত জনসমাগম আর কখনও হয়নি- এ মন্তব্য প্রবীণদের। জনসভার সময় ছিল বেলা আড়াইটায়। প্রধানমন্ত্রী সেনানিবাস থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার সড়কপথে মোটরগাড়িতে জনসভাস্থলে পৌঁছেন পৌনে তিনটায়। এ সময় সড়ক পথের দুই ধারে মানুষের ঢল হাত নেড়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিবাদন জানায়। প্রধানমন্ত্রীর গাড়ির সামনে ও পেছনে নিরাপত্তার গাড়ি থাকার পর এই ঢলকে কোনভাবেই বাঁধ দেয়া যায়নি। যমুনার ঘূর্ণিস্রোত যেমন আটকানো যায় না, বাঁধ দিয়ে নদীর গতি হয়ত ফেরানো যায় সাগরের টান থেকে ফেরানো যায় না- তেমনই মানুষের ভালবাসার স্রোতধারা শত বাঁধ দিয়েও ফেরানো যায় না, তা ফেরানো যায়নিও। এ দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি বগুড়ার মানুষের ভালবাসার ঢেউকেও ফেরানো যায়নি। প্রধানমন্ত্রী নিজের চোখে এ দৃশ্য দেখার পর প্রায় ৫০ মিনিটের ভাষণের শেষদিকে মানুষের ভালবাসার অর্ঘ্যরে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেন না। বললেন- ‘এই মাঠে যারা আমার কথা শোনার জন্য এসেছেন আমাকে দেখার জন্য এসেছেন তারা ছাড়াও অনেক মানুষ মাঠে তিলধারণের জায়গা না থাকায় শহরের প্রতিটি রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছেন- তাদের সঙ্গে আমার চোখের দেখা হচ্ছে না, মনের চোখে দেখা হচ্ছে; মনের চোখে তাদের আমি দেখছি।’ প্রধানমন্ত্রীর এমন কথা শুনে মানুষের মধ্যে আবেগ চলে আসে, যা লক্ষ্য করা যায় শহরের রাস্তার ধারে দাঁড়ানো সাধারণ মানুষের চোখেমুখে। বগুড়া শহরের দক্ষিণে বনানী থেকে উত্তরে মাটিডালি পর্যন্ত, সাতমাথা থেকে চারমাথা পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার সড়ক ছাড়াও শহরের ভিতরে কেন্দ্রস্থল সাতমাথার চার ধারে কবি নজরুল ইসলাম সড়ক, শেরপুর সড়ক, স্টেশন রোড, গোহাইল রোড, টেম্পল রোড, নওয়াব বাড়ি রোড, মেরিনা রোডে যানবাহন চলাচলের মতো অবস্থা ছিল না। বগুড়া পরিণত হয়েছিল আনন্দের নগরীতে। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনার জন্য বাংলাদেশ ধন্য- এমন ধ্বনি ও স্লোগানে কেঁপে ওঠে শহর। এতকাল যারা মনে করত বগুড়া বিএনপির ঘাঁটি তারাও বিস্মিত হয়ে যায়। বিএনপির কয়েক সমর্থক বললেন, ভাবতেও পারেননি এত লোকের সমাগম হবে। এই জনস্রোত প্রমাণ করে বগুড়া আর বিএনপির ঘাঁটি নয় আওয়ামী লীগের ঘাঁটিতে পরিণত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাত বছর পর বগুড়া সফরে এসে তাই দেখলেন। বগুড়ার জন্য উন্নয়নের উপহারও দিয়ে গেলেন। চোখের দেখার সঙ্গে মনের চোখেও দেখে গেলেন বগুড়ার মানুষকে...।
×