ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘ডি ক্যাব টক’ অনুষ্ঠানে শ্রীলঙ্কার হাইকমিশনার

সমুদ্রপথে নৌ যোগাযোগ বাড়লে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা লাভবান হবে

প্রকাশিত: ০৮:২২, ১৩ নভেম্বর ২০১৫

সমুদ্রপথে নৌ যোগাযোগ বাড়লে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা লাভবান হবে

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ ঢাকায় নিযুক্ত শ্রীলঙ্কার হাইকমিশনার জশোযা গুনাসেকারা বলেছেন, চীন ও ভারতের মতো উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তির সঙ্গে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কাসহ দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের রাষ্ট্রগুলো তাল মিলিয়ে চললে উন্নয়ন নিশ্চিত হবে। এছাড়া বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে সমুদ্রপথে নৌ-যোগাযোগ বাড়লে উভয় দেশই লাভবান হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে কূটনৈতিক প্রতিবেদকদের সংগঠন ডিক্যাব আয়োজিত ‘ডিক্যাব টক’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। শ্রীলঙ্কার হাইকমিশনার জশোযা গুনাসেকারা বলেন, শ্রীলঙ্কার শান্তির জন্য অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের প্রয়োজন। শ্রীলঙ্কায় দীর্ঘদিন গৃহযুদ্ধ অবসানের পর রাজনৈতিক সমঝোতার কারণেই দেশটি এখন অর্থনৈতিক, সামাজিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ে সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা একই পরিবারের সদস্যের মতো। এ দুই দেশের মানুষের জীবন-ধারণ, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে মিল রয়েছে। শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধ বন্ধ করতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো ঘটনা ঘটেছে কিনা সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে গুনাসেকারা বলেন, সন্ত্রাসীরা তিন দশক ধরে শ্রীলঙ্কার বুদ্ধিজীবীসহ নিরীহ মানুষকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে, দেশের অর্থনৈতিক কর্মকা- স্থবির করে দিয়েছিল। অর্থনৈতিক কর্মকা- ধ্বংস করাও মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে তিনি মন্তব্য করেন। গৃহযুদ্ধের সময় দেশটির সংখ্যালঘু তামিল বিদ্রোহীদের ওপর গণহত্যায় শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ রয়েছে সে ব্যাপারে কোন মন্তব্য করেননি তিনি। বাংলাদেশের শীর্ষ কোম্পানিগুলোকে শ্রীলঙ্কায় বিনিয়োগের আহ্বান জানান হাইকমিশনার গুনাসেকারা। তিনি বলেন, তার দেশে ম্যানুফ্যাকচারিং, সার্ভিস, পর্যটন ও পর্যটন সম্পর্কিত বিভিন্ন খাত, অবকাঠামো, উচ্চশিক্ষা, দক্ষতা বৃদ্ধি, কৃষি, ওষুধসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে সমুদ্রপথে নৌ-যোগাযোগ বাড়ালে উভয় দেশই লাভবান হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের যোগাযোগ বাড়াতে হবে। এ দুই বন্দরের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য ইতোমধ্যেই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান। হাইকমিশনার বলেন, পৃথিবীর অন্যতম সক্ষমতাসম্পন্ন বন্দর হচ্ছে কলম্বো বন্দর। বাংলাদেশ বন্দর বিষয়ে সক্ষমতা অর্জন করতে শ্রীলঙ্কার কাছে সাহায্য নিতে পারে। শ্রীলঙ্কার হাইকমিশনার জানান, বঙ্গোপসাগর অঞ্চল শ্রীলঙ্কার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। শ্রীলঙ্কা সার্ক, বিমসটেক ও আইওআরএর উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য বাস্তবায়নে অঙ্গীকারাবদ্ধ। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে শ্রীলঙ্কা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে বলেও জানান তিনি। বর্তমানে নেপাল ও ভারতের মধ্যে নেতিবাচক সম্পর্কের বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে হাইকমিশনার বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার সকল দেশই একটি পরিবার। তাই কোন দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে তিনি মন্তব্য করবেন না বলে জানান। শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন প্রকল্প থেকে চীনা বিনিয়োগ প্রত্যাহারের বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রীলঙ্কার হাইকমিশনার বলেন, প্রকল্পগুলো চীন রিভিউ করছে। বিভিন্ন প্রকল্পের পরিবেশগত দিকও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কোন প্রকল্প থেকেই চীন এখনও বিনিয়োগ প্রত্যাহার করেনি। তবে গণমাধ্যমে অনেক সময়ই এসব নিয়ে চটকদার খবর পরিবেশিত হয় বলে তিনি জানান। বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধিতে জোর দেন শ্রীলঙ্কার হাইকমিশনার। তিনি বলেন, দুই দেশের জনগণের মধ্যে আরও যোগাযোগ বাড়াতে হবে। এছাড়া শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশী পর্যটন বাড়ানোরও উদ্যোগও নেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। হাইকমিশনার বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার বাণিজ্য হচ্ছে বছরে দেড়শ’ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশে শ্রীলঙ্কার বিনিয়োগ তিনশ’ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশের উন্নয়নে শ্রীলঙ্কার বিনিয়োগ ভূমিকা রাখছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ব্যাংকিং, বিদ্যুত ও তৈরি পোশাক শিল্পে শ্রীলঙ্কা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়ে হাইকমিশনার বলেন, শ্রীলঙ্কার বহু প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছে। ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানসহ অনেক প্রতিষ্ঠানের এই দেশে বিনিয়োগ রয়েছে। সামনে এই বিনিয়োগ আরও বাড়বে। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেনÑ ডিক্যাব সভাপতি মাসুদ করিম ও সাধারণ সম্পাদক বশির আহমদ।
×