ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মুহম্মদ শফিকুর রহমান

বিএনপির সংলাপ কথা নতুন চক্রান্ত

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১৪ নভেম্বর ২০১৫

বিএনপির সংলাপ কথা নতুন চক্রান্ত

সাম্প্রতিক সময়ে কতিপয় দেশী-বিদেশী নাগরিকের হত্যাকা-, হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা, এমনি অনভিপ্রেত ঘটনাবলী জাতিকে শঙ্কিত করে তুলেছে। সব কটি হত্যাকা-ের ধরন এক। আরও কাকে কাকে হত্যা করা হবে তারও তালিকা মিডিয়ায় পরিবেশিত হয়েছে। তবে ব্যাপক জনগোষ্ঠী ভয় পেয়েছে কি পায়নি বা শঙ্কিত হয়েছে কি হয়নি, সেটি বড় কথা নয়, বড় কথা হলো ‘কুমির যে বাড়ি চিনল’। এ পরিস্থিতিতে যেটি লক্ষণীয় তা হলো আওয়ামী লীগসহ স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ রাজনৈতিক শক্তির প্রতিপক্ষ জামায়াত-শিবির-মুসলিম লীগআশ্রয়ী রাজনৈতিক শক্তি বিএনপি, তথাকথিত সুশীল সমাজ নামধারী লম্বা কোর্তা এবং পশ্চিমা পোশাকধারী সুশীল সব এক সুরে কথা বলছে। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন হেজাবি জোট যে সুরে কথা বলছে সুশীলরাও একই সুরে কোরাস গাইছে। এদের এখনকার সেøাগানগুলো (প্রলাপ) আপাতদৃষ্টিতে গণমুখী মনে হলেও ভেতরের টার্গেট একেবারেই ভিন্ন এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিদ্যমান শান্তি-স্থিতিশীলতা বিনষ্টকারী। যেমন দুটি সেøাগান : এক. সংলাপ চাই দুই. জাতীয় ঐক্য চাই খালেদা জিয়া লন্ডন থেকে এবং এখানে দলীয় মুখপাত্র আসাদুজ্জামান রিপন সেøাগান দুটি দেবার পর দেখা গেল লম্বা কোর্তা এবং শুটেড-বুটেড সুশীল বাবুরা আহা বেশ বেশ বলে কোরাস গাইতে শুরু করলেন। সবই চেনা মুখ। এরা পত্র-পত্রিকায় বিবৃতি, কলাম প্রকাশ বা টেলিভিশনের টক শোতে সংলাপ এবং জাতীয় ঐক্যের পরামর্শ প্রদানের আড়ালে বর্তমান রাষ্ট্র প্রশাসন বা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের বিরুদ্ধে প্রোপাগা-ায় নেমেছেন। এই মানুষগুলো স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের সহযোগী অথবা বংশধর। আমাদের স্বাধীনতা অর্জনে এবং দেশের বর্তমান আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির মিছিলে এদের একটি দিনের জন্যও অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়নি। এদের ঠিকুজি অনুসন্ধান করলেও অনেক সাপ বেরিয়ে আসতে পারে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পিতা রাজাকার চখা মিয়ার মতো অপর কোন আলবদর মিয়ার নাম বেরিয়ে আসতে পারে। আমাদের দুর্ভাগ্য, জাতির পিতার কন্যা একালের সবচেয়ে সাহসী দূরদর্শী রাষ্ট্রনায়ক ধরিত্রীর আদরের কন্যা শেখ হাসিনা যখন জাতির আকাক্সক্ষার প্রতিফলন হিসেবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় আনলেন তখনও স্বাধীনতার পক্ষ দাবিদার কেউ কেউ সোনার হরিণ ধরার জন্য রাজপথের পাশ দিয়ে হাঁটছেন। এরা কখনও কাছা মেরে মিলিটারি জিয়ার খাল কাটতে নামছেন কখনও বাম মোর্চার নামে এক মঞ্চে ওঠেন আবার অল্প দিনেই যত দল তারচেয়ে দ্বিগুণ-তিনগুণ নাম নিয়ে মঞ্চ থেকে নামেন। আবার কেউ কেউ নিজের পোশাক পাল্টে অন্য দলের দরজা জানালায় উঁকি মারেন। কিন্তু এদের কারোর কার্যক্রমই স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে না। বিএনপি-জামায়াত জোটের সঙ্গে গলা মিলিয়ে সুশীল বাবুরা যখন সংলাপ-সংলাপ ঐক্য ঐক্য করে গলা ফাটাচ্ছেন তখনও আমাদের স্বাধীনতার পক্ষের সুশীল বাবুরা রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটছেন। রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে যে বাঁচা যায় না এ সত্যটি জেনেও তারা মিছিলে অংশ নিচ্ছেন না। জানি এখন সঙ্কট যাচ্ছে। কিন্তু এ দীর্ঘস্থায়ী নয়। একদিন সেই শঙ্কাও থাকবে না এ বিশ্বাস আমাদের আছে। তবুও বলব এখন কারোই ঘরে থাকার সময় নয়। যে বাঙালী দীর্ঘ স্বাধীনতার নেতৃত্ব দিয়েছেন, যে বাঙালী জীবনবাজি রেখে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছেন, যারা যুদ্ধ করতে করতে শহীদ হয়েছেন তার বংশধর যারা যারা আছেন; সেদিন যে মা-বোন সম্ভ্রমের বিনিময়ে স্বাধীনতা এনেছেন তার স্বজন যারা আছেন; সেদিন যারা জীবন বাঁচাতে দেশত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন, যারা দেশত্যাগ করতে পারেননি প্রতিটি মুহূর্তে আতঙ্কে কাটিয়েছেন, এবাড়ি ওবাড়ি করে বেঁচেছেন- আজ সময় এসেছে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের মতোই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জঙ্গীবাদ, সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী মিছিল ও মোর্চায় শরিক হওয়ার। এর কোন বিকল্প নেই। ভুলে যাওয়া উচিত নয় চারদিকে হায়েনার দল ওঁৎ পেতে আছে। এ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে হবে, আমাদের সন্তান তথা নতুন প্রজন্মের তরুণদের জীবন নিরাপদ করতে হবে। একাত্তরে পাকি হানাদার ও তাদের এদেশীয় সহযোগীরা মিলে গণহত্যা চালিয়েছে, মা-বোনদের সভ্রমহানি করেছে; ঘাতক বাহিনী বানিয়ে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে- আজ এত বছর পর যখন সেসব মানবতাবিরোধী কর্মকা-ের বিচার চলছে তখনই একাত্তরের সেই পরাজিত শক্তি আবার মাঠে নেমেছে। সেদিনের মতো আজও তরুণ লেখক-বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হচ্ছে। সেদিন যেমন ধর্মের নামে অধর্ম করা হয়েছে আজও সেই একইভাবে পবিত্র ইসলামের নাম নিয়ে অধর্ম করা হচ্ছে। ইসলাম যা সমর্থন করে না তাই করা হচ্ছে। বাংলাদেশের বাইরে পাকিস্তান-আফগানিস্তানে তালেবান; ইরাক থেকে শুরু করে তুরস্ক-সিরিয়া-মিসরে আন্তর্জাতিক জঙ্গীগোষ্ঠী আল কায়েদা বোকো হারাম এক হয়ে সিরিয়াকে ধ্বংস স্তূপে পরিণত করেছে। লাখ লাখ নারী শিশুর জীবনহানি ঘটেছে। সেই লোকগুলোই আজ তাদের কর্মকা- আরও বিস্তৃত করতে চাইছে। তবে বাংলাদেশে আসার কোন প্রয়োজন তাদের নেই। এখানে না আসলে কি হবে, এখানে তো জামায়াত-শিবির রয়েছে। তারা লাখ লাখ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে বাইরে লবিস্ট নিয়োগ দিয়েছে। তারাই এখানে কল্পিত আইএস নামে বিবৃতি দিচ্ছে। আইএস না থাকলেও এখানে হিযবুল মুজাহিদীন, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, হামযা ব্রিগেড প্রভৃতি সন্ত্রাসী জঙ্গীরা এখানে তৎপর। তাদের অর্থ-অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করছে রাবেতা আলম ইসলামসহ তথাকথিত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন। এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের কুৎসিত চেহারা এবার উন্মোচিত। এ্যামনেস্টির অজানা নয় যে, বিশ্ব ইতিহাসের জঘন্যতম মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে। তৎকালীন পাকিস্তানী হানাদার মিলিটারি জান্তা ও তাদের এদেশীয় দোসর জামায়াত-শিবির-মুসলিম লীগ মাত্র ৯ মাসে যত মানুষ হত্যা করেছে যত নারীকে নির্যাতন করেছে যত মানুষকে ঘরহারা করেছে, ততদিনে তত মানুষ হত্যা, ধর্ষণ নির্যাতনের ঘটনা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও ঘটেনি। সেদিন যারা এসব ঘটনা ঘটিয়েছিল বাংলাদেশে অর্থাৎ মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধ করেছিল আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে তাদের বিচার চলছে। জঘন্য যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরী, মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুজাহিদ, মীর কাশেম আলী প্রমুখের বিচার চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আর অমনি এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মাঠে নেমেছে। তাদের ধৃষ্টতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে তারা ঐ সব যুদ্ধাপরাধীর বিচার বন্ধ করা হোক চেয়ে থেমে থাকেনি, মুক্তিযোদ্ধাদের বিচার চেয়ে বিবৃতি দিয়েছে? ধৃষ্টতা আর কাকে বলে? শোনা যায় পাকিস্তানের জনৈক আব্বাস বিবৃতি প্রদানে ভূমিকা রেখেছে। দ্বিতীয়ত. ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) আমাদের জাতীয় সংসদকে কটাক্ষ করে বলেছে, বর্তমান পার্লামেন্ট হলো ‘পুতুল নাচের নাট্যশালা।’ যদিও এখন তারা এক বিবৃতি দিয়ে ধানাই-পানাই করছে। তৃতীয়ত. লন্ডনে ষড়যন্ত্রের কেন্দ্র বানিয়ে খালেদা-তারেক-চৌধুরী মঈনুদ্দিন ব্যারিস্টার রাজ্জাকরা নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন। ট্রেন ছেড়ে চলে যাবার পর এখন বলছে সঙ্কট নিরসনে সংলাপ করতে হবে। জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। লন্ডন থেকে নির্দেশিত হয়ে সুশীল বাবু ইফতিখার আসিফ-মজুমদাররা আবার মাঠে নেমেছে, আহা বেশ বেশ বলে। চতুর্থত. প্রবীণ শিক্ষাবিদ প্রফেসর এমাজউদ্দীন বলেছেন, দেশে ভয়াবহ ঘটনা ঘটে যেতে পারে। এখানে একটা কথা বলা দরকার, তবে কি এমাজউদ্দীন জানেন কি ঘটতে যাচ্ছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার। পঞ্চমত. দু’জন বিদেশী নাগরিককে (ইতালীয় ও জাপানী) হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ-বিজিবির পর এবার একজন মিলিটারি পুলিশের ওপর আক্রমণ চালানো হয়েছে। ষষ্ঠত. পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধ করার মতো খোঁড়া অজুহাত তুলে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট টিম বাংলাদেশে খেলতে আসল না। সাউথ আফ্রিকান মহিলা ক্রিকেট টিমও না। সম্ভবত ব্লগার হত্যা তো চলছেই। এখন আবার নতুন হিটলিস্ট প্রকাশ করা হয়েছে, যাতে প্রফেসর আনিসুজ্জামান, প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, প্রফেসর মুনতাসীর মামুন, মুহম্মদ জাফর ইকবাল, আবেদ খান, শাহরিয়ার কবির প্রমুখের মতো বুদ্ধিজীবীদের নাম রয়েছে। এই হিট লিস্ট নতুন নয়। এর আগেও এদের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। সবার ওপরে হিটলিস্টের শীর্ষে রয়েছেন শেখ হাসিনা। এরই মধ্যে ১৯বার তার ওপর হামলা করা হয়েছে। আল্লাহর অশেষ কৃপায় তিনি আজও বেঁচে আছেন, সুস্থ আছেন এবং জাতির আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক অগ্রযাত্রার দ্রুতগতির মিছিলে সাহসীও দূরদর্শী নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন। মনে হয় তাঁর জন্ম এবং বেঁচে থাকা এ জন্যই। এতক্ষণ যে বিষয়গুলো উল্লেখ করলাম তা সবই একসূত্রে গাঁথা। আর তার লক্ষ্য হলো বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের বিপরীতে টেনে নিয়ে বেনামে হলেও একটা মিনি পাকিস্তান বানানো, যার শুরু ৯০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত গোলাম আযম (মৃত) স্বাধীনতার চূড়ান্ত পর্যায়ে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে প্রথমে পাকিস্তান ও পরে লন্ডনে ঘাঁটি গেড়ে তথাকথিত ‘পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার আন্দোলন’ শুরু করেছিলেন। আগেই বলেছি সেই ঘাঁটি এখন চালাচ্ছেন যুদ্ধাপরাধ বিচার ট্রাইব্যুনালে দ-প্রাপ্ত চৌধুরী মঈনুদ্দিন, আশরাফুল ইসলাম, তারেক রহমান, হালে যোগ দিয়েছেন ব্যারিস্টার রাজ্জাক। সর্বশেষ মিলিত হয়েছেন খালেদা জিয়া। পাশাপাশি মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে বিদেশে লবিস্টও নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। প্রশ্ন হলো সংলাপ কার সঙ্গে কার? ঐক্য কার সঙ্গে কার? রাজাকারের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধার ঐক্য হয় না, হতে পারে না। যাদের হাতে ৩০ লাখ শহীদ ও পাঁচ লাখ ধর্ষিতা শহীদ মা-বোনের রক্ত তাদের সঙ্গে রাজাকার পাকিস্তানীদের সঙ্গে ঐক্য যেমন হয় না, তেমনি যাদের হাতে সাম্প্রতিককালের পেট্রোলবোমায় নিহত-আহত পোড়া মানুষের গন্ধ, তাদের সঙ্গে কিভাবে ঐক্য হবে? হ্যাঁ, জাতীয় ঐক্য দরকার। দেশের সার্বিক সমৃদ্ধির জন্য তা অপরিহার্য। সে ঐক্য তো আছেই। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তি ও সাধারণ জনগণের ঐক্য। যারা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বিপক্ষে পাকিস্তানীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে গণহত্যা, নারী নির্যাতনের জঘন্য মানবতাবিরোধী কার্যক্রমে লিপ্ত ছিল বা এখনও আছে বা তাদের বংশধর যারা এখনও অসাম্প্রদায়িক বুদ্ধিজীবীসহ সাধারণ মানুষের ওপর হামলা চালাচ্ছে, হত্যা করছে, তাদের সঙ্গে ঐক্য নেই। কোনদিন হবে না। এটাই বাংলাদেশের সঠিক রাজনীতি। প্রয়োজনটাই বা কোথায় তাদের সঙ্গে ঐক্যের? সর্বোপরি আমাদের নতুন প্রজন্ম যারা ইতোমধ্যেই দেশপ্রেমের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে, তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশকে গড়ে তুলছে। গত ক’বছরে সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী গত কয়েক বছরে সাড়ে ৩ কোটি মানুষ মধ্যবিত্তের কাতারে উঠে এসেছে। উন্নয়নের সকল সূচকে আশপাশের সকলকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে। ঐক্য না থাকলে কি তা হতো? তাছাড়া ওদের ঐক্য ও সংলাপের সেøাগানও আরেকটি চক্রান্ত। সংলাপে বসাতে পারলেই হলো। মাঝপথে সংলাপ থেকে ওঠে গিয়ে বলতে পারবে আওয়ামী লীগের একগুঁয়েমির কারণে সংলাপ ব্যর্থ হয়েছে, ঐক্য প্রচেষ্টা সফল হয়নি। আওয়ামী লীগ তথা মহাজোট এই ফাঁদে পা দেবে কেন? খুব বেশি দিনের কথা নয়। বিগত ৫ জানুয়ারি ২০১৪-এর নির্বাচনের প্রাক্কালে শেখ হাসিনা পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়ে এমনও বলেছিলেন আসুন সর্বদলীয় সরকার গঠন করে একটি ক্র্যাডিবল নির্বাচন করি। এমনকি খালেদা জিয়ার উদ্দেশে এমনও বলেছিলেন যে, তিনি চাইলে স্বরাষ্ট্র-পররাষ্ট্রসহ যে যে মন্ত্রণালয় পছন্দ নিতে পারবেন। খালেদা সাড়া দেননি, বরং গোটা ২০১৩ সালে দেশব্যাপী জ্বালাও- পোড়াও চালিয়েছেন, কারণ তার আঁচল জামায়াত-শিবিরের হাতে। তারপর মানুষ হত্যা করে, পুলিং অফিসার হত্যা করে, স্কুল ঘর (পুলিং সেন্টার) জ্বালিয়ে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন চালিয়েও যখন নির্বাচন ঠেকাতে পারলেন না, তখন ক্ষ্যামা দিয়ে ঘুরে বসলেন। একেবারে বসে থাকলেন না। এবার ঘর থেকে বেরিয়ে গুলশানের দলীয় কার্যালয়ে ওঠলেন। পণ করলেন সরকারের পতন এবং ক্ষমতার সিংহাসনে না বসা পর্যন্ত ঘরে ফিরবেন না। শেখ হাসিনাকে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিলেন। শেখ হাসিনা ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আলোচনায় বসার জন্য টেলিফোন করলেন। উত্তরে খালেদা ঝাঁঝালো কণ্ঠে যা যা বলেছেন জনগণ শুনেছে। আমরা বলতে চাই না, সুশীল বাবুরা শুনেছেন কিনা জানি না। আবার জ্বালাও পোড়াও শুরু করলেন ম্যাডাম। একটানা ৯২ দিন পেট্রোলবোমা মেরে শত শত সাধারণ মানুষ শ্রমজীবী জনগোষ্ঠীকে হত্যা করা হলো। তারপরও যখন ক্ষমতার সিংহাসনে (তিনি সিংহাসনে বসতে পছন্দ করেন, যদিও ঐতিহ্য নেই) বসতে পারলেন না, তখন কিছুদিন ক্ষ্যামা দিয়ে এবার লন্ডন গিয়ে জঙ্গী ঘাঁটিতে বসলেন। নতুন ষড়যন্ত্র হিসেবে দাবি তুললেন ‘সংলাপ’-এর। বুল শিট। ঢাকা ॥ ১২ নবেম্বর ২০১৫ লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও সভাপতি, জাতীয় প্রেসক্লাব
×