সরকার মা ইলিশের নিরাপদ প্রজননের জন্য গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ভোলা ও পটুয়াখালীর নদীগুলোতে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। কিন্তু সে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এক শ্রেণীর জেলেরা অবাধে মা ইলিশ শিকার করছে। নদী পাহারা দেয়ার জন্য জেলা, উপজেলা প্রশাসন, মৎস্য বিভাগ, পুলিশ ও কোস্টগার্ডকে দায়িত্ব দেয়া হলেও পর্যাপ্ত সুবিধা না থাকায় তারা যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। তারা ভাড়া করা ট্রলার নিয়ে দায়সারাভাবে অভিযান চালাচ্ছেন। যার ফলে কোন সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। মোবাইলের মাধ্যমে অভিযানের খবর জেলেদের কাছে আগেভাগে পৌঁছে যাচ্ছে। স্থানীয় প্রভাবশালী নেতারাও মাছ শিকারের সঙ্গে জড়িত থাকায় প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিতে পারছে না। সরকার মা ইলিশ ও জাটকা ইলিশ শিকারে জেলেদের উৎসাহিত না করতে বিভিন্ন ধরনের সুবিধা দিলেও কোন কাজ হচ্ছে না। বাস্তব চিত্র হচ্ছে ভিন্ন। সুবিধা গ্রহণ করেও জেলেরা নদীতে গিয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে মা ইলিশ ও জাটকা ইলিশ শিকার করছেন। তাই মা ইলিশের নিরাপদ প্রজননকালীন সময় ও জাটকা ইলিশ শিকার বন্ধ করতে হলে সরকারকে বাস্তবমুখী বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা নিতে হবে। জাতীয় মাছ ইলিশ রক্ষার স্বার্থে আমি সরকারের নীতি-নির্ধারকদের বলতে চাই, ইলিশের প্রজননকালীন সময় সঠিকভাবে নির্ণয় করতে পঞ্জিকার সহায়তা নেয়া যেতে পারে। আশ্বিনী পূর্ণিমার ২-৩ দিন আগে ও ২-৩ দিন পরে মা ইলিশের ডিম ছাড়ার প্রকৃত সময়। এ বছর ওই পূর্ণিমার দিন হচ্ছে ২৭ অক্টোবর। যে কারণে সরকার ঘোষিত অবরোধের এ সময়টায় বেশিরভাগ মা ইলিশ ডিম ছাড়বে না। তাই অবরোধের তারিখ এগিয়ে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত দেয়া উচিত ছিল। গত বছর এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় ৫ অক্টোবর থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত। দেখা গেছে, এ নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়ে যাওয়ার এক সপ্তাহ পরেও জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে মা ইলিশ ধরা পড়েছে। এসব মাছের পেটভর্তি ডিম ছিল। নিষেধাজ্ঞা আরোপের কমপক্ষে দুই থেকে চারদিন আগ থেকে সংশ্লিষ্ট এলাকায় জেলেদর একত্রিত করে বা গ্রুপ করে নদীর কাছাকাছি এলাকার কোন স্কুল বা সাইক্লোন সেন্টারে রাখতে হবে। নিষেধাজ্ঞা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা নির্দিষ্ট জায়গায় থাকবে। তাদের ভরণপোষণ সরকার বহন করবে। সকাল, দুপুর ও রাতে তিনবেলা নির্দিষ্ট একটি সময় জেলেদের পরিচয়পত্রের নম্বর অনুযায়ী হাজিরা বা রোল কল করতে হবে। এ সময় যেসব জেলে অনুপস্থিত থাকবেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনী ব্যবস্থা নিতে হবে। এসব কাজে স্বচ্ছতার জন্য প্রয়োজনে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনীর সহযোগিতা নেয়া যেতে পারে। তা হলেই মা ইলিশ ও জাটকা ইলিশ রক্ষা করা সম্ভব হতে পারে।
কামরুজ্জামান বাচ্চু
বাউফল
শীর্ষ সংবাদ: