ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাহাদুরাবাদ ঘাটে রেল ফেরি বন্ধ ১৫ বছর ধরে

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১৪ নভেম্বর ২০১৫

বাহাদুরাবাদ ঘাটে  রেল ফেরি বন্ধ ১৫ বছর ধরে

নিজস্ব সংবাদদাতা, গাইবান্ধা, ১৩ নবেম্বর ॥ বালাসীঘাট ও জামালপুর জেলার বাহাদুরাবাদ ঘাটের যমুনা নদীর রেল ফেরির সার্ভিসটি ১৫ বছর ধরে বন্ধ। ফলে বালাসী-বাহাদুরাবাদ ফেরিঘাটের মাধ্যমে ময়মনসিংহ, জামালপুর ও দেওয়ানগঞ্জ হয়ে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের ১৩ জেলার রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে। ফলে দুর্ভোগে পড়েছে লাখ লাখ রেলযাত্রী। ওই সমস্ত এলাকায় যেতে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর যাত্রীদের ঘুরপথে টাঙ্গাইল ঢাকা হয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। ১৯৩৮ সালে ঢাকার সঙ্গে দেশের উত্তরাঞ্চলের রেল যোগাযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলায় তিস্তামুখ ঘাট ও জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জের বাহাদুরাবাদ ঘাটে যমুনা নদীতে রেল ফেরির সার্ভিস চালু করা হয়। তৎকালীন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ জেলার সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তর রংপুর জেলার গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, দিনাজপুর, পঞ্চগর ও ঠাকুরগাঁও জেলাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে যাত্রী ও মালামাল পারাপারের জন্য যোগাযোগ গড়ে তুলতে এ ফেরি সার্ভিসটি চালু করা হয়। এরপর থেকেই এ ঘাট দিয়ে স্বল্পব্যয়ে অল্প সময়ে যাত্রী পারাপার, কৃষিপণ্য, ডিজেল, সার সরবরাহসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামাল পরিবহন করা হতো। ১৯৯০ সালের পর যমুনা নদীর নাব্যতা সঙ্কটের কারণে ফেরি সার্ভিসটি তিস্তামুখঘাট থেকে বালাসীঘাটে স্থানান্তর করা হয়। বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের আগে দিনাজপুর থেকে রংপুর হয়ে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার বালাসীঘাট পর্যন্ত ট্রেনে যাতায়াত করত এতদাঞ্চলের মানুষ। এছাড়াও সান্তাহার, বগুড়া, বোনারপাড়া হয়েও ট্রেনে এ ঘাট দিয়ে মানুষ চলাচল করত। কিন্তু বঙ্গবন্ধু সেতু চালুর পর থেকে যাত্রীবাহী লোকাল, মেইল ট্রেন ও আন্তঃনগর একতা, তিস্তা, করতোয়া ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। তবে কিছুদিন মালবাহী ওয়াগন চলাচল করলেও ওয়াগন ফেরি বন্ধ থাকায় তা নিয়মিত চলাচল করে না। বছরের অধিকাংশ সময়ই ওয়াগন ফেরি চলাচল বন্ধ থাকে। এতে রাজধানীর সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের শত বছরের রেল যোগাযোগের একাংশের পরিসমাপ্তি ঘটে। ফলে রেলের বোনারপাড়া থেকে তিস্তামুখ ঘাটের এবং ত্রিমোহনী থেকে বালাসীঘাটের রেললাইনের মূল্যবান যন্ত্রাংশ নষ্ট ও চুরি হয়ে যাচ্ছে। বেহাত হচ্ছে রেলের কোটি কোটি টাকার ভূমি। এছাড়াও বসে বসে বেতন ভাতা উত্তোলন করছেন ফেরি বিভাগের কয়েক শ’ কর্মচারী। একটি সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সালে যমুনা সেতু চালুর পর যমুনা নদীর ভাঙ্গন ও নাব্য হ্রাসের অজুহাতে গাইবান্ধার বালাসীঘাট এবং জামালপুরের বাহাদুরাবাদ ঘাটের মধ্যে রেলওয়ে ফেরি সার্ভিস বন্ধ করে দেয়া হয়। এ ফেরি সার্ভিসটি বন্ধ থাকায় রাজধানী ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চলের ১৩ জেলার পণ্য সরবরাহ এবং যাত্রী পারাপারে বহু সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। পাশাপাশি বালাসী ও বাহাদুরাবাদঘাটকে কেন্দ্র করে উপার্জনশীল কুলি, শ্রমিক, হোটেল ব্যবসায়ী, কর্মচারীসহ অসংখ্য মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। রেলওয়ে সূত্র জানায়, যমুনা নদীতে অসংখ্য চর জেগে ওঠায় নদীর নাব্য অনেক কমে গেছে। তাই ফেরি সার্ভিসটি বন্ধ রাখা হয়েছে। এদিকে গত ২০১৩ সালে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান ওই এলাকা পরিদর্শনে এসে ফেরি সার্ভিসটি পুনরায় চালুর ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু এরপর দুই বছর পেরিয়ে গেলেও ফেরি সার্ভিস এখনও চালু করা হয়নি। এছাড়াও গত ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ওই দুই ঘাটের সংযোগ চ্যানেল পরিদর্শন করে রেল ফেরি চালুর ঘোষণা দেন; তাও কার্যকর হয়নি। অপরদিকে বালাসী-বাহাদুরাবাদঘাটের মধ্যে যোগাযোগ চালুর জন্য গাইবান্ধাবাসী দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন।
×