ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানী হরিকল বিবর্তনে এখন সরিকল হাট

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ১৪ নভেম্বর ২০১৫

রাজধানী হরিকল বিবর্তনে এখন সরিকল হাট

এক সময় দা, কাঁচির জন্য বিখ্যাত সরিকল হাট দীর্ঘ পাঁচ শ’ বছর অতিক্রম করে আজও তার আপন ঐতিহ্যকে মাথা উঁচু করে ধরে রেখেছে। প্রাচীন বাংলার ১২টি জনপদের মধ্যে অন্যতম এ উন্নত জনপদের রয়েছে নানা ইতিহাস। বরিশালের গৌরনদী উপজেলার সীমান্তবর্তী ও বাবুগঞ্জ উপজেলার পার্শ্ববর্তী এলাকায় সরিকল হাটের অবস্থান। অতীতের মতো এখনও সপ্তাহের প্রতি মঙ্গল ও শুক্রবার এখানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী এবং কাঁচামালের পাশাপাশি গো-হাট বসে। নামকরণ : কবি ও সাহিত্যিক শিকদার রেজাউল করিমের লেখা বৃহতি গৌরনদীর ইতিহাস থেকে জানা গেছে, হারি জনগোষ্ঠী থেকে হরিকল নামকরণ করা হয়। ৯শ’ খ্রিস্টাব্দে চন্দ্রদ্বীপের রাজা তোরইচন্দ্র লক্ষের রাজধানী ছিল হরিকল। পরবর্তীতে ১৩শ’ খ্রিস্টাব্দে সুলতানী আমলে সরিখাইল থেকে সরিকলের নামকরণ হয়। যা বর্তমান গৌরনদী উপজেলার সরিকল বন্দর বা সরিকল হাট নামে পরিচিত। বর্তমান সরিকল হাটের দু’শ’গজ পশ্চিম পার্শ্বে বুর্জগখোলায় সুলতানী আমলে (বারবাক শাহ্ সুলতান) দুর্গ ছিল। ১৬শ’ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট জাহাঙ্গীরের শাসনকালে সরিকল দুর্গের সেনা নায়ক ছিলেন এতদাঞ্চলের কৃতিমান পুরুষ ছবি খাঁ। ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে নবাব সিরাজ-উদ দৌলা নিহত হওয়ার পর এ অঞ্চলের জমিদার সৈয়দ ইমান উদ্দিনের নেতৃত্বে দীর্ঘ ১৩ বছর ইংরেজদের সঙ্গে এখানে যুদ্ধ হয়। বৃহতি গৌরনদীর ইতিহাস থেকে আরও জানা গেছে, প্রায় পাঁচ শ’ বছর পূর্বে সরিকল এলাকার জনগোষ্ঠীর নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর চাহিদা মেটাতে বর্তমান সরিকল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পেছনে ক্ষুদ্র পরিসরে হাট বসানো হয়। পরবর্তীতে জায়গা সঙ্কুলান না হওয়ায় ১৭শ’ খ্রিস্টাব্দে নবাবী আমলে এ হাটের স্থান পরিবর্তন করে প্রায় ২শ’ গজ দক্ষিণ পার্শ্বে আড়িয়াল খাঁ-ঘ-েশ্বর নদীর তীরে স্থানান্তর করা হয়। কালের বিবর্তনে এ হাটের পরিধি বৃদ্ধি পেয়ে এখন প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকা দখল করেছে। হাটের বৈশিষ্ট্য : প্রাচীনকাল থেকে এ হাটের ঐতিহ্য কামারদের তৈরি দা, বটি, ছুরি, কাঁচি ইত্যাদি। সে ঐতিহ্য আজও ধরে রাখা হয়েছে। এ হাটের কামারদের তৈরি দা, বটি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করা হয়। আগেকার দিনে সন্ধ্যার পরে হাট বসলেও আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখন সকাল থেকেই হাটে বিকিকিনি শুরু হয়ে যায়। সপ্তাহের প্রতি মঙ্গল ও শুক্রবারের এ হাটে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী, কাঁচামাল, মৌসুমী জিনিসপত্র পাট, ধান, গম, তুলা, ডালসহ গরু-ছাগলের হাট বসে। প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এ হাটে পাঁচ শতাধিক স্থায়ী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও হাটের দিন আরও পাঁচ শতাধিক অস্থায়ী দোকান বসে। দু’ উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় সরিকল হাটের অবস্থান হওয়ায় হাটের দিন ছাড়াও প্রতিদিন এখানে প্রচুর লোকের সমাগম হয়। Ñখোকন আহম্মেদ হীরা বরিশাল থেকে
×