ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যানার ফেস্টুন বিলবোর্ডের শহর মুন্সীগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৮:২১, ১৪ নভেম্বর ২০১৫

ব্যানার ফেস্টুন বিলবোর্ডের শহর মুন্সীগঞ্জ

স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ ॥ মুন্সীগঞ্জের দু’পৌরসভায় নির্বাচনের আগাম প্রচারনার ধুম পরেছে। তফসিল ঘোষনা আগের এমন প্রচারনাই অভাস দিচ্ছে এবারের পৌর নির্বাচন হবে কত জমজমাট। আগে থেকেই কোমর বেঁেধ মাঠে নেমেছেন সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। নানা উপলক্ষে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে মফস্বল শহর দু’টি। দিন দিন এর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বিরাট আকারের রংবেরংয়ের বিল বোর্ড আর বাহারী সব ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টারে জানান দিচ্ছে প্রার্থীতা। যেন নির্বাচনের ভোট যুদ্ধের আগে প্রতিযোগিতা চলছে প্রচারনার। অনেক সম্ভাব্য প্রার্থী ব্যানার-পোস্টারের বাইরে ভোটারের দুয়ারে যাওয়া শুরু করেছে। কেউ কেউ বিভিন্ন মহল্লায় উঠান বৈঠক, সভা-সমাবেশ-মতবিনিময় করেছে। পাশাপশি নির্বাচনের জন্য ভোটারদের কাছে দোয়া ও সমর্থন চাচ্ছেন, দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতির ফুল ঝুড়িও। জেলার দু’টি পৌরসভা হচ্ছে জেলা শহরের “মুন্সীগঞ্জ পৌরসভা” এবং সদর উপজেলারই পার্শ্ববর্তী বন্দর নগররী “মিরকাদিম পৌরসভা”। দু’টি পৌরসভাই প্রথম শ্রেণির। যদিও নাগরিক সুবিধা নেই তৃতীয় শ্রেণিরও। সব সমস্যা সমাধানের নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রার্থীরা এখন মাঠে। এই দু’ পৌরসভার মেয়র পদে ১০ জন সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। আর দলীয় ব্যানারে এই নির্বাচন ঘোষণা আসার পর পাল্টে গেছে চিত্র। দলীয় মনোনয়ন লাভে প্রভাবশালী নেতাদের মন জয়ে শুরু হয়েছে দৌড়ঝাপ। অনেক প্রার্থী ভোটারদের মন জয়ের চেয়ে লবিংয়ে এগিয়ে থাকার লড়াই নিয়েই ব্যস্ততা বেশী। মুন্সীগঞ্জ পৌরসভায় মেয়র পদে ছয় সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। এরমধ্যে সরকার দলীয় আওয়ামী লীগের ব্যানারে রয়েছেন তিন জন। এর মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ মো. মহিউদ্দিনের পুত্র কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির উপ সম্পাদক গত পৌর নির্বাচনে অল্প ভোটে হেরে যাওয়া ফয়সাল বিপ্লব, শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহতাব উদ্দিন কল্লোল, আমরা মুত্তিযোদ্ধার সন্তান সংগঠনের সভাপতি রেজাউল ইসলাম সংগ্রাম। অন্যদিকে বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাাশী শহর বিএনপি সভাপতি ও বর্তমান মেয়র একেএম ইরাদত হোসেন মানু, শহর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেক পৌর কাউন্সিলর মো. শহীদুল ইসলাম এবং সাবেক যুব দল নেতা সুলতান আহমদ । মিরকাদিম পৌরসভায় সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীর তালিকা চার জনের। এরমধ্যে আওয়ামী লীগের দু’জন হলেন- সদ্য আওয়ামী লীগে যোগদান করা বর্তমান মেয়র শহীদুল ইসলাম শাহিন এবং জেলা আওয়ামী লীগের মানব উন্নায়ন সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মনসুর আহম্মেদ কালাম। এছাড়া সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় আরও রয়েছেন মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পাটি (জেপি-মঞ্জু) কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হোসেন রেনু। পৌরসভাটিতে মহাজোটের এই তিন প্রার্থীর প্রাচারনা সরব। তবে এখানে বিএনপি প্রর্থীর উল্লেখযোগ্য জানান না দিলেও সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে মিরকাদিম পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল রহমান বকুলের নাম শোনা যাচ্ছে। মুন্সীগঞ্জ ও মিরকাদিম পৌরসভার ১২ জন করে মোট ২৪টি কাউন্সিলর পদের বিপরীতে দেড় শতাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী মাঠে নেমেছে। কাউন্সিলর প্রার্থীদের ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টারের পসরাও কম নয়। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ছাড়াও অলিগলি ঠেকে গেছে সম্ভাব্য এই প্রার্থীদের প্রচারনায়। ওয়ার্ড নাম্বার উল্লেখ করে সম্ভাব্য কাউন্সলর প্রার্থীরা এসব প্রচার সাটাচ্ছেন। ঈদ, পূজো শেষ হলেও শহর দু’টির রাস্তাঘাটে তোরনে ঝুলছে এসব ধর্মীয় উৎসবের শুভেচ্ছা সম্বলিত ব্যানার। পিছিয়ে নেই সম্ভাব্য নারী প্রার্থীারও। আগাম এসব নির্বাচনী প্রচারনা প্রসঙ্গে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ফয়সল কাদেরের জানান, তফসিল ঘোষনা না হওয়ায় এব্যাপারে আইনী ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। তবে তফসিল ঘোষনার পর থেকে এ বিষয়টি আমলে আনা হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, অপরিকল্পিত শতশত ব্যনার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড আর পোস্টারের শহরের পরিচ্ছন্নতা বিনষ্ট করেছে। শ্রীহীন পরিবেশ এখন শহর দু’টির। পৌর এলাকার বাইরেও গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ও রাস্তার দশাও একই। এব্যাপারে পৌরসভাসহ অন্যান্য কর্তৃপক্ষও নিরব। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দায়িত্বশীলরা জানিয়েছেন, তৃনমূল পর্যায়ের মতামতের ভিত্তিতেই যোগ্য প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয়া হবে। আর দলীয় কোন্দর মেটাতের কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। গেল নির্বাচনে দলীয় কোন্দলের কারণে ক্ষমতাসীন দল দুটো পৌরসভায়ই পরাজয় বরণ করে। সে তাই এবার ক্ষমতাসীনরা বেশী সর্তক লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে দলীয় কোন্দল এবার আরও প্রকট আকারণ ধারণ করেছে। তাই গেলবারের মত সেই সুবিধা কাজে লাগাতে বিএনপি প্রস্তুতি নিচ্ছে। জেলা নির্বাচন অফিসের দেয়া তথ্যমতে, মুন্সীগঞ্জ পৌর সভার ভোটার ৪৬ হাজার ২৩ জন। এরমেধ্যে নারী ভোটার ২২ হাজার ৫১৮ এবং পুরুষ ভোটার ২৩ হাজার ৫০৫। মিরকাদিম পৌরসভার ভোটার সংখ্যা ৩৩ হাজার ৫৫৯ জন এর মধ্যে নারী ভোটার ভোটার ১৬,১৩৫ এবং পুরুষ ভোটার ১৭ হাজার ৪২৪ জন। নির্বাচনী তফসীল ঘোষণার পর মফস্বল শহর মুন্সীগঞ্জে এবং প্রাচীন নৌ বন্দর মিরকাদিমের পৌর নির্বাচনের ঢেউ আছরে পরবে আরও তোরেজোরে। তবে এখানে প্রার্থীদের অর্থ বৃত্ত ও প্রভাবের কারণে নির্বাচনী আইন লঙ্খণের আশঙ্কা রয়েছে।
×