ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যয়বহুল চিকিৎসা, আইনী জটিলতা

অকালে ঝরে পড়ছে কিডনি বিকল অনেক প্রাণ

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ১৫ নভেম্বর ২০১৫

অকালে ঝরে পড়ছে কিডনি বিকল অনেক প্রাণ

নিখিল মানখিন ॥ দু’টি কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে মোঃ মঞ্জুরুল হাসানের। ডায়ালাইসিস দিয়ে তাকে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। দু’বার ডায়ালাইসিস ও ওষুধের পেছনে প্রতি সপ্তাহে খরচ লাগে প্রায় ১০ হাজার টাকা। জরুরীভিত্তিতে কিডনি প্রতিস্থাপন করানোর জন্য পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। কিন্তু রোগীর পরিবারের পক্ষে এই ব্যয়বহুল চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। পরিবারটির আর্থিক অবস্থা ভাল না। মঞ্জুরুলের পিতা মোঃ আব্দুল হাকিম হাওলাদার ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। কয়েক বছর আগে তিনি মারা যান। মা, ছোট তিন ভাই-বোন, স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে মঞ্জুরুল হাসানের সংসার। চিকিৎসার খরচ মেটানোর পেছনে ইতোমধ্যে সহায়-সম্বল ফুরিয়ে গেছে। মৃত্যু অনিবার্য হয়ে পড়েছে মঞ্জুরুলের। ব্যয়বহুল চিকিৎসা, উন্নত চিকিৎসার সীমাবদ্ধতা এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইনের জটিলতার কারণে মঞ্জুরুলের মতো শত শত কিডনি বিকলরোগী অকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। মৃত্যুর মুহূর্ত দেখার অপেক্ষা করা ছাড়া বিকল্প কোন উপায় থাকছে না রোগীর স্বজনদের। মোঃ নাজমুল হক নামের আরেক ব্যক্তিরও দু’টি কিডনিই অকেজো হয়ে গেছে। তার পিতা মোঃ আব্দুর রাজ্জাক একজন নিম্ন-মধ্যবিত্ত কৃষক। তিনি জনকণ্ঠকে জানান, বেশ কয়েক বছর ধরে তার ছেলে নাজমুলের চিকিৎসা চলছে। সন্তানকে বাঁচানোর আশা ছাড়েননি তিনি। রাজধানীর আয়েশা মেমোরিয়াল হাসপাতালে রোগীকে ডায়ালাইসিস দেয়া হচ্ছে। ডায়ালাইসিস দিয়ে তাকে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। টাকার অভাবে মাঝে মধ্যেই ডায়ালাইসিস দেয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। চিকিৎসকরা কিডনি প্রতিস্থাপনের পরমার্শ দিলেও তা মেটানোর আর্থিক সামর্থ্য আব্দুর রাজ্জাকের নেই। চিকিৎসার পেছনে ইতোমধ্যে সহায়-সম্বল ফুরিয়ে গেছে। কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের হরিণগাছি গ্রামে তাদের বাড়ি। মা-বাবা, ছোট ভাই ও স্ত্রীকে নিয়ে নাজমুল হকের সংসার। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র নাজমুল হক ছাত্রজীবনে সবসময় মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন। প্রতিটি একাডেমিক স্তরে তিনি ‘ফার্স্ট ক্লাস’ পেয়েছেন। তাকে নিয়ে কৃষক পরিবারটির অনেক প্রত্যাশা। পুরো সংসারের হাল ধরবেন তিনি। কিন্তু দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে নাজমুল হক মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। তার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটছে। আর টাকার অভাবে চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে তার চিকিৎসা। এমন কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন মোঃ আব্দুর রাজ্জাক। টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার জলছত্র গ্রামের ৩০ বছর বয়সী হাসান মিয়ার দু’টি কিডনি অকেজো হয়ে গেছে। কিডনি প্রতিস্থাপন করানোর তাগিদ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। কিন্তু কিডনিদাতা পাওয়া যাচ্ছে না। তার বড় ভাই হেলাল মিয়া জনকণ্ঠকে জানান, সহায়-সম্পত্তি বিক্রি করে ৬ লাখ টাকা যোগাড় করেছি। কিন্তু কিডনিদাতা পাওয়া যাচ্ছে না। সরাসরি রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয় ছাড়া অন্য কারও কাছ থেকে কিডনি গ্রহণ নিষিদ্ধ বলে জানিয়ে দিয়েছেন দেশের চিকিৎসকরা। রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়ের কারও কিডনি মিল পাওয়া যাচ্ছে না। যেসব দেশে অবাধ কিডনিদাতা গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে, সেসব দেশে যেতে হলে আরও টাকা লাগবে। এভাবে চিকিৎসার নানা জটিলতায় পড়ে তার ভাই মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে জানান মোঃ হেলাল মিয়া। টাকার অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে সিরাজগঞ্জের রবিউলের চিকিৎসা। তার দুটি কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে। জরুরীভিত্তিতে কিডনি প্রতিস্থাপন করানোর পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। কিন্তু রোগীর পরিবারের পক্ষে এই ব্যয়বহুল চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। রবিউলের বাড়ি সিরাজগঞ্জ শহরের ধানবান্ধি মহল্লার জিএম হিলালী রোডে। তিনি সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বিভাগের অস্থায়ীভিত্তিক পিয়নের চাকরি করেন। পরিবারটির আর্থিক অবস্থা ভাল না। বর্তমানে টাকার অভাবে উন্নত চিকিৎসা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। রবিউল ও সেলিনা পারভিনের সংসারে রয়েছে তিন সন্তান। চিকিৎসার পেছনে সহায়-সম্বল ফুরিয়ে গেছে। এভাবে কিডনি বিকল হলেই রোগীর মৃত্যু যেন ঠেকানো যাচ্ছে না। দেশে ২ কোটি মানুষ কিডনি রোগে ভুগছে ॥ দেশে প্রায় ২ কোটি লোক কোন না কোন ধরনের কিডনি রোগে ভুগছে। আক্রান্তের শতকরা ৭৫ ভাগ রোগী কিডনি নষ্ট হওয়ার আগে এ মরণব্যাধির অস্তিত্ব ধরতে পারেন না। কিডনি বিকল রোগীর চিকিৎসা এত ব্যয়বহুল যে, মাত্র শতকরা ৭ থেকে ১০ ভাগ লোকের চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার সামর্থ্য আছে। দেশে প্রতিবছর ২৫ হাজার লোকের কিডনি বিভিন্ন কারণে হঠাৎ করে অকেজো হয়ে যায়। প্রতিবছর কিডনিজনিত রোগে প্রায় ৪০ হাজার লোক মারা যায়। দেশে এখন পর্যন্ত ‘নিকট’ আত্মীয় ছাড়া অন্য কারও কিডনি নেয়া হয় না। ইচ্ছে করলেই একজন আরেকজনকে কিডনি দিতে পারেন না। তাই নিয়মিত কিডনি পরীক্ষা করানোর জন্য পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। এমন অবস্থার মধ্য দিয়ে আজ পালিত হচ্ছে কিডনি সচেতনতা সপ্তাহ। দেশে কিডনি রোগ চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকলেও খুব ব্যয়বহুল। প্রতিস্থাপন কার্যক্রম চালু থাকলেও সফলতার মাত্রা খুব বেশি সন্তোষজনক নয়। দেশের সব চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা নেই। সীমিত চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে ডায়ালাইসিসি ও প্রতিস্থাপন কার্যক্রম চালু রয়েছে। কিডনি রোগের উপসর্গ ও চিকিৎসা সম্পর্কে অধ্যাপক ডাঃ শহিদুল ইসলাম সেলিম দীর্ঘদিন ধরে কিডনি রোগ ও প্রতিকার নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। তিনি জনকণ্ঠকে জানান, বিভিন্ন কারণে কিডনি অকেজো হয়ে পড়ে। এদের মধ্যে কারও কারও কিডনি হঠাৎ করে অকেজো হয়ে যায়। বাংলাদেশে ডায়রিয়া, অতিরিক্ত বমি, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, বিভিন্ন রকম ইনফেকশন, ম্যালেরিয়া, প্রসবকালীন জটিলতা, সাংঘাতিক ধরনের নেফ্রাইটিস, বিভিন্ন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও কিডনির পাথরের কারণে হঠাৎ করেও কিডনি অকেজো হয়ে যায়। এ ধরনের কিডনি অকেজো হয়ে যাওয়ার ভাল দিক হচ্ছেÑ এগুলো অনেক ক্ষেত্রেই প্রতিরোধ করা যায়। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা করলে অনেকের কিডনি পুনরায় স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা ফিরে পায়। এদেশে প্রতিবছর প্রায় ২৫ হাজার লোকের কিডনি বিভিন্ন কারণে অকেজো হয়ে যায়। সঠিক চিকিৎসা করলে প্রায় শতকরা ৭০ ভাগ রোগীর কিডনি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। হঠাৎ করে কিডনি অকেজো হওয়াকে প্রতিরোধ করতে হলে বিশুদ্ধ খাবার ও পানি পান করতে হবে। রক্তক্ষরণ হলে সঙ্গে সঙ্গে রক্ত দিতে হবে। ইনফেকশন হলে তার সঠিক সময়ে চিকিৎসা করতে হবে। তিনি আরও জানান, প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে কিডনি প্রতিস্থাপন খুবই ব্যয়বহুল। প্রাইভেট হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করাতেই প্রায় ৩ লাখ টাকার মতো খরচ হয়। কিডনি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেলে কিডনি প্রতিস্থাপনের আগ পর্যন্ত রোগীকে ডায়ালাইসিস করাতে হয়। প্রতি সপ্তাহে তিনবার ডায়ালাইসিস করাতে হয়। বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালে প্রতি ডায়ালাইসিসের খরচ ৮শ’ টাকা হলেও প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে লাগে তিন হাজার টাকা থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা। বিভিন্ন দেশে চিকিৎসা ব্যয়ের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, নিজেরা কিডনি দেয়ার পরও সিঙ্গাপুরে ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা, থাইল্যান্ডে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা এবং ভারতে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা লাগে সংযোজনের জন্য। অধ্যাপক ডাঃ মোঃ শহিদুল ইসলাম সেলিম জানান, কিডনি প্রতিস্থাপনের দু’দিন আগে থেকে পরবর্তী সারাজীবন ধরে রোগীকে নিউরাল ও সেলসেপ্ট নামে দু’টি ওষুধ খেয়ে যেতে হয়। ওই দু’টি ওষুধ বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়ে থাকে। কিডনি প্রতিস্থাপন ভালভাবে সম্পন্ন হলেও ওই দু’টি ওষুধ নিয়মিত না খেলে রোগীর মৃত্যু অনিবার্য হয়ে পড়ে। আর প্রতিটি নিউরাল (১০০ এমজি) দাম ১৫০ টাকা এবং প্রতিটি সেলসেপ্টের দাম ১১০ টাকা। এছাড়া কিডনি ভালভাবে মিল না হলে সাইমুলেট নামে দু’টি ইনজেকশন দিতে হয়। প্রতিটি ইনজেকশনের দাম পড়ে দেড় লাখ টাকা। সারাজীবন ব্যবহার করতে হওয়ার কারণে ওই দু’টি ওষুধ নিয়মিত খেতে পারে না অনেক দরিদ্র পরিবার। তাই ওই দু’টি ওষুধের ওপর থেকে আমদানি কর উঠিয়ে দিলে কিডনি প্রতিস্থাপন করা অনেক রোগী উপকৃত হবে। জটিল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন ॥ বিধিমালা চূড়ান্ত না হওয়ায় কিডনি বিকল রোগীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বর্তমানে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপন আইন ১৯৯৯ নামে একটি আইন আছে। ওই আইনে সরাসরি রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয় ছাড়া অন্য কারও কাছ থেকে কিডনি গ্রহণ নিষিদ্ধ। অপেক্ষাকৃত বেশি টাকার মালিকরা কিডনি বিকল রোগী বাঁচাতে অনাত্মীয় দাতা নিয়ে বিদেশে চলে যাচ্ছেন। যাদের টাকা নেই, রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়ের মধ্যে দাতা নেই, তাদের জন্য অপেক্ষা করছে নির্মম মৃত্যু। কিডনি প্রতিস্থাপনের খসড়া বিধিমালা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আঙিনায় আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ঘুরপাক খাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। দেশে স্বল্পসংখ্যক কিডনি সংযোজনের প্রধান অন্তরায় নিকট আত্মীয় কিডনি স্বল্পতা। কাজেই কিডনিদাতার স্বল্পতা কাটিয়ে উঠতে হলে ব্রেন ডেথ তথা মৃত ব্যক্তির কিডনি সংযোজনের ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এ জন্য সামাজিক সচেতনতা ও শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে। কিডনি প্রতিস্থাপনের সুযোগ দেশে সীমিত হয়ে পড়ায় অনেকে বিদেশ ছুটছেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কিডনি বিশেষজ্ঞরা আরও জানান, আত্মীয় ছাড়া কিডনি দান করা আইন ও নীতিগতভাবে ঠিক নয় এবং অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। কিডনিদাতার জেনেটিক্যাল সর্ম্পক যেমন- মা-বাবা, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী, মামা, চাচা হতে হবে। রক্তের গ্রুপ ও টিস্যু একই হলে ভাল হয়। কিডনিদাতার বয়স অবশ্যই ১৫ বছরের উপরে এবং ৬৫ বছরের নিচে হতে হবে। আর ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, লিভার ও কিডনি রোগ থাকা চলবে না এবং দু’টি কিডনিই সম্পূর্ণভাবে ভাল থাকতে হবে। কিডনিদাতাকে স্বেচ্ছায় কিডনি দান করতে হবে, জোর জবরদস্তি করা চলবে না। কিডনিদাতার পরীক্ষা করে সব কিছু নিরাপদ জেনেই তার একটি কিডনি নেয়া হয় এবং একটি কিডনি নিয়েই স্বাভাবিক ও সুস্থ জীবনযাপন করা যায়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজনের বিষয়টি খুবই জটিল ও স্পর্শকাতর। এটি নিয়ন্ত্রণে শক্তিশালী আইনের দরকার রয়েছে। বিদ্যমান আইনে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের অর্থ মানবদেহের কিডনি, হৃৎপি-, যকৃত, অগ্নাশয়, অস্থি, অস্থিমজ্জা, চক্ষু, চর্ম ও টিস্যুসহ মানবদেহে সংযোজনযোগ্য যে কোন অঙ্গ বা প্রত্যঙ্গ। কঠোর হস্তে নিয়ন্ত্রণ না করলে সংযোজনের নামে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের অবৈধ ব্যবসা শুরু হয়ে যায়। একটি বিশেষ চক্র সাধারণ মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ে কেনাবেচা করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়, যা একদিকে আইনগত দ-নীয় অপরাধ, অন্যদিকে মানবাধিকার লঙ্ঘন। এসব সমস্যা থাকার পরও বিদ্যমান আইনে কিছুটা পরিবর্তন আনা দরকার। বর্তমানে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপন আইন ১৯৯৯ নামে একটি আইন আছে। ওই আইনে সরাসরি রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয় ছাড়া অন্য কারও কাছ থেকে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গ্রহণ নিষিদ্ধ। অপেক্ষাকৃত বেশি টাকার মালিকরা রোগী বাঁচাতে অনাত্মীয় দাতা নিয়ে বিদেশে চলে যাচ্ছেন। যাদের টাকা নেই, রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়ের মধ্যে দাতা নেই, তাদের জন্য অপেক্ষা করছে নির্মম মৃত্যু। দেশে স্বল্পসংখ্যক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজনের প্রধান অন্তরায় নিকট আত্মীয়ের স্বল্পতা। কাজেই অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দাতার স্বল্পতা কাটিয়ে উঠতে হলে ব্রেন ডেথ তথা মৃত ব্যক্তির অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজনের ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে বলে জানান অধ্যাপক প্রাণ গোপাল দত্ত। বিদ্যমান আইনের বিশেষ অংশ উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, বর্তমান আইনে মানবদেহের যে কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ক্রয়-বিক্রয় বা তার বিনিময়ে কোন প্রকার সুবিধা লাভ এবং সেই উদ্দেশ্যে কোন প্রকার বিজ্ঞাপন প্রদান বা অন্য কোনরূপ প্রচারণা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সুস্থ ও সাধারণ জ্ঞানসম্পন্ন যে কোন ব্যক্তি তার দেহের এমন কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যা বিযুক্তির কারণে তার স্বাভাবিক জীবনযাপনে ব্যাঘাত সৃষ্টির আশঙ্কা নেই, তা তার কোন নিকট আত্মীয়ের দেহে সংযোজনের জন্য দান করতে পারবেন। মৃত ব্যক্তির অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিযুক্তকরণে বিদ্যমান আইনে স্বাধীনতা নেই। কোন ব্যক্তি যদি তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কারও দেহে সংযোজনের উদ্দেশ্যে উইল করে থাকেন এবং উক্তরূপ উইলের অবর্তমানে ওই ব্যক্তির ব্রেইন ডেথ ঘোষণার পর তার কোন আইনানুগ উত্তরাধিকারী যদি ওই ব্যক্তির দেহ হতে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিযুক্ত করার জন্য লিখিত অনুমতি প্রদান করেন, তাহলে ওই মৃত ব্যক্তির অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন করানো যাবে।
×