ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আইসিটি খাতে ৩০ হাজার দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলা হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১৫ নভেম্বর ২০১৫

আইসিটি খাতে ৩০ হাজার দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলা হচ্ছে

ফিরোজ মান্না ॥ যুক্তরাজ্যভিত্তিক ‘আর্নস্ট এ্যান্ড ইয়ং’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান দেশে আইসিটি খাতে ৩০ হাজার দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার কার্যক্রম শুরু করেছে। লিভারেজিং আইসিটি ফর গ্রোথ, এমপ্লয়মেন্ট এ্যান্ড গবর্নেন্স (এলআইসিটি) প্রকল্প ও আর্নস্ট এ্যান্ড ইয়ং যৌথভাবে প্রশিক্ষণের কাজটি করবে। ৩০ হাজারের মধ্যে ১০ হাজার আইটি (তথ্যপ্রযুক্তি) ও সায়েন্স গ্র্যাজুয়েটকে দেয়া হবে ‘টপ আপ আইটি প্রশিক্ষণ’। বাকি ২০ হাজারকে উচ্চ মাধ্যমিক ও গ্র্যাজুয়েটকে দেয়া হবে ফাউন্ডেশন স্কিল প্রশিক্ষণ। টপ আপ আইটি প্রশিক্ষণ গ্রহণকারীদের মধ্য থেকে কমপক্ষে ৬০ শতাংশ তরুণ-তরুণীকে দেশ এবং বিদেশের বিভিন্ন আইটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেবে আর্নস্ট এ্যান্ড ইয়ং। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, সরকার যখন ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার নিরন্তর প্রচেষ্টা বাস্তবায়নের পথে তখন ৩০ হাজার তরুণ-তরুণীকে বিশ্বমানের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। দেশের আইটি শিল্পে দক্ষ মানবসম্পদের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে সরকার মানসম্মত প্রশিক্ষণের ওউপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে। সে কারণে এলআইসিটি প্রকল্প ৩০ হাজার আইটি পেশাজীবী তৈরিতে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান আর্নস্ট এ্যান্ড ইয়ংকে নিয়োগ দিয়েছে। আমার বিশ্বাস, এসব আইটি প্রশিক্ষিত তরুণ-তরুণী পাঁচ বছরে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে এক বিলিয়ন ডলারের রফতানির লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। আর্নস্ট এ্যান্ড ইয়ংয়ের পারফর্মেন্স ইম্প্রুভমেন্ট পার্টনার আনুরাগ মল্লিক বলেন, মানসম্মত প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করার জন্য আর্নস্ট এ্যান্ড ইয়ং যুক্তরাষ্ট্রভিক্তিক শীর্ষস্থানীয় প্রশিক্ষণদাতা প্রতিষ্ঠান ইনফো প্রো লার্নিংয়ের সঙ্গে যৌথভাবে ৩০ হাজার তরুণ-তরুণীকে প্রশিক্ষণের কর্মসূচী বাস্তবায়ন করবে। একই সঙ্গে প্রশিক্ষণের জন্য উন্নত কারিকুলাম প্রণয়নে ইউরোপ এবং আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতা নেয়া হবে। প্রশিক্ষণ শেষে মূল্যায়নের ভিত্তিতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের সার্টিফিকেট প্রদান করা হবে। আর্নস্ট এ্যান্ড ইয়ংয়ের সরকারী খাত ন্যাশনাল লিডার গৌরভ তানেজা বলেন, বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ করার জন্য সম্পৃক্ত হতে পেরে আমরা গর্বিত। আমার বিশ্বাস, এ দেশের গ্র্যাজুয়েট তরুণ-তরুণীদের তথ্যপ্রযুক্তিতে প্রশিক্ষণ দিয়ে এ খাতে আমরা চমৎকার কাজের পরিবেশ তৈরি করতে পারব। এলআইসিটি প্রকল্পের যাত্রা শুরুর আগে প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন কম্পোনেন্টের ‘কস্ট বেনিফিট এ্যানালাইসিস’ (সিবিএ) করে বিশ্বব্যাংক। সচিত্র প্রতিবেদনে বলা হয়, উন্নত প্রশিক্ষণের ফলে প্রকল্পের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে একদিকে যেমন মেয়াদ শেষে ৩০ হাজার তরুণ-তরুণীর প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান হবে, অন্যদিকে এক লাখ ২০ হাজার তরুণ-তরুণীর পরোক্ষ কর্মসংস্থান হবে। এলআইসিটি প্রকল্পের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কনজারভেটিভ হিসেবে এদের মধ্যে প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান হওয়া প্রত্যেকের প্রতি বছর আয় হবে কমপক্ষে তিন হাজার মার্কিন ডলার। পরোক্ষ কর্মসংস্থান হওয়া প্রত্যেকে একই সময়ে কমপক্ষে দেড় হাজার মার্কিন ডলার আয় করতে পারবেন। পাঁচ বছর মেয়াদী এ প্রকল্পে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলা ও আইসিটি খাতে রফতানি বৃদ্ধি, ডাটা সেন্টারের সম্প্রসারণ, ই-গবর্নমেন্টের ভিত্তি প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন কম্পোনেন্টের বাস্তবায়নে বিশ্বব্যাংক ৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দিয়েছে। এলআইসিটি প্রকল্প পরিচালক মোঃ রেজাউল করিম বলেন, ৩০ হাজার তরুণ-তরুণী প্রশিক্ষণ থেকে কী অর্জন করল তা মূল্যায়ন করে তাদের বিশ্বমানের সার্টিফিকেট দেয়া হবে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারবে। আউটসোর্সিংয়ে বাংলাদেশের তরুণ-তরুণীরা অনেক দূর এগিয়ে গেছে। তারা এখন ঘরে বসেই আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে। দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আউটসোর্সিয়ের পরিমাণও বেড়েছে। আউটসোর্সিংয়ের সম্ভাবনা নিয়ে তথ্যপ্রযুক্তিবিদরা এখন আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ভারতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের তরুণ-তরুণীরা আউটসোর্সিং করতে পারবে। বর্তমান বিশ্বে ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোর্সিং আধুনিক ও সম্মানজনক পেশার স্বীকৃতি পেয়েছে। ঘরে বসে দেশের অনেক তরুণ-তরুণী আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ভাল অঙ্কের টাকা আয় করছে। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে আইসিটিতে ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ভারত, ফিলিপিন্স পাকিস্তান ও বাংলাদেশের তরুণ-তরুণীরা আউটসোর্সিংয়ের কাজ আগ্রহের সঙ্গে করছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, দেশকে তরুণরাই এগিয়ে নিয়ে যাবে। তারা এখন তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ হয়ে গড়ে উঠছে। আগামী দিনে এই তরুণরাই দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবে। ইন্টারনেট খুলে দিয়েছে সব বন্ধ দরজা। এখন বিশ্ব চলে এসেছে হাতের মুঠোয়। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমেই দেশে উন্নয়ন ঘটবে। এই খাতে প্রতি বছর পাঁচ থেকে ছয় শ’ কোটি টাকা আয় হতে পারে। বাংলাদেশের আউটসোর্সিংকর্মীদের দক্ষতা অন্য যে কোন দেশের সঙ্গে তুলনা করা যায়। এ বছর ইন্টারনেট ব্যবহারের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বে ৫৪তম অবস্থানে রয়েছে।
×