ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থনৈতিক অঞ্চলে সহায়তা বাড়াচ্ছে দাতারা

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১৫ নভেম্বর ২০১৫

অর্থনৈতিক অঞ্চলে সহায়তা বাড়াচ্ছে দাতারা

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়নে সহায়তা বাড়াচ্ছে বিশ্বব্যাংক ও ডিএফআইডি। ফলে মাল্টি সেক্টরাল অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি ও উন্নয়নের মাধ্যমে শিল্পায়নের দ্রুত প্রসার করে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ সংক্রান্ত বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়ন প্রকল্প-প্রথম পর্যায় বাস্তবায়নে সংস্থা দুটি ৭৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা সহজ শর্তে ঋণ সহায়তা দিয়েছিল। সেটি থেকে ৪০ কোটি ৪ লাখ টাকা বাড়িয়ে বর্তমানে মোট দাঁড়াচ্ছে ১১৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। এ সংক্রান্ত একটি সংশোধনী প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব কাজী শফিকুল আজন জনকণ্ঠকে বলেন, এ প্রকল্পের অগ্রগতিতে সন্তুষ্ট হয়েই উন্নয়নসহযোগীরা অতিরিক্ত অর্থায়ন করছে। তবে প্রথম দিকে আইন-কানুনের ক্ষেত্রে কিছু জটিলতা ছিল সেগুলো কেটে গেছে। ফলে এ প্রকল্পে অর্থায়ন আরও বৃদ্ধি পাবে বলেই আশা করছি। তিনি জানান, এটি বিশ্বব্যাংকের সহজ শর্তের আইডিএ ঋণ, যা পরিশোধে ৬ বছর গ্রেস পিড়িয়ডসহ ৩৮ বছর সময় পাবে বাংলাদেশ। এর বিপরীতে দশমিক ৭৫ শতাংশ সার্ভিস চার্চ দিতে হবে। সূত্র জানায়, সরকার অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি ও উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্বারোপ করছে। এ অবস্থায় ২০১০ সালে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা ও বেজার সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এ লক্ষ্যে গৃহীত প্রকল্পে সহায়তা করার বিষয়ে বিশ্বব্যাংক ও ডিএফআইডি সম্মত হয়। এই ধারাবাহিকতায় উন্নয়নসহযোগী সংস্থা বিশ্বব্যাংক ও ডিএফআইডির অর্থায়নে মোট ৮১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা (এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল ২ কোটি ২৫ লাখ ও উন্নয়নসহযোগীদের ৭৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা) ব্যয়ে ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এটি বাস্তবায়ন করছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আওতায় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ। প্রকল্পটি ২০১৪ সালের ৩ জুন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদিত হয়। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নের এ পর্যায়ে এসে সর্বশেষ রেট সিডিউল অনুযায়ী পূর্ত কাজের ব্যয় প্রাক্কলন, বিভিন্ন ভৌত কাজের হ্রাস বা বৃদ্ধি, কিছু নতুন উপ-অঙ্গ অন্তর্ভুক্ত করে প্রথম সংশোধনীর প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য হুমায়ুন খালিদ পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর গত ২৬ আগস্ট পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সংশোধনী প্রস্তাবটি অনুমোদনযোগ্য বলে বিবেচিত হয়। পিইসি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংশোধনী প্রস্তাব (আরডিপিপি) পুনর্গঠন করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। ওই সভার অন্যতম সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রস্তাবিত প্রকল্পটির শিরোনাম বাংলায় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়ন প্রকল্প-প্রথম পর্যায় (১ম সংশোধিত) করা হয়েছে। এটির প্রক্রিয়াকরণ শেষ হয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির আগামী সভায় অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে, দেশের সুষম উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন অঞ্চলে মাল্টি প্রডাক্ট শিল্প কারখানার প্রসার ঘটবে। অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি ও উন্নয়ন হবে। অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির জন্য বরাদ্দ জমিতে বা ইতোমধ্যেই ইকোনমিক জোনস তৈরি হয়েছে এমন অঞ্চলে দেশী-বিদেশী উদ্যোক্তাদের জন্য প্রয়োজনীয় ভৌত অবকাঠামো তৈরি ও ইউটিলিটি সরবরাহ করা হবে। এগুলোর করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি ও ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে শিল্পের প্রসার ঘটবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রকল্পটির আওতায় যেসব কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে সেগুলো হচ্ছে ভূমি উন্নয়ন, অফিস ভবন ও ডরমেটরি নির্মাণ, সীমানা প্রাচীর, সংযোগ সড়ক তৈরি, সেতু বা কালভার্ট তৈরি, পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা করা, বিদ্যুত সরবরাহ ও গ্যাস সংযোগ স্থাপন এবং কম্পিউটার ও ফার্নিচার ইত্যাদি সংগ্রহ করা হবে। সূত্র জানায়, এর আগে শ্রমঘন ছয় খাতে দেড় কোটি কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। একে কাজে লাগাতে ৫টি পরামর্শ দিয়েছিল সংস্থাটি। এর ওপর ভিত্তি করে একটি কর্মকৌশল তৈরি করছে সরকার। এ বিষয়ে ইতোমধ্যেই ১৭টি মন্ত্রণালয় ও সংস্থার কাছ থেকে মতামত নেয়া হয়েছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি, অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন ও উচ্চতর প্রবৃদ্ধি কর্মকৌশল সংক্রান্ত এক সভায় কর্মসংস্থান সৃষ্টির এ বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। এ নিয়ে মুখ্য সচিবকে প্রধান করে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। তবে এ উদ্যোগটি যতটা দ্রুত হওয়া দরকার ততটা দ্রুত হচ্ছে না বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, শ্রমিকদের দাম বাড়ায় চীন থেকে আগামী দশ বছরে ৮০ মিলিয়ন কর্মসংস্থান বেরিয়ে যাবে। এর মধ্যে আমরা হিসাব করেছি বাংলাদেশে শ্রমঘন শিল্পে ১৫ মিলিয়ন কর্মসংস্থান সম্ভব। কিন্তু এর জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। এর জন্য বিনিয়োগ দরকার। অবকাঠামো, জমি, দক্ষ শ্রমিক, অর্থায়ন ও জ্বালানি এগুলোর প্রয়োজন। এর সবগুলো এক সঙ্গে করে অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির ওপর বেশি জোর দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, থাইল্যান্ডে যেখানে ৩০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল, চীনে ৩ হাজার এবং ফিলিপাইনে ৩০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল রয়েছে সেখানে বাংলাদেশে কার্যকর রয়েছে মাত্র ৩টি এক্সপোর্ট পসেসিং জোন (অর্থনৈতিক অঞ্চল নয়)। কাজেই অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করে কাক্সিক্ষত কর্মসংস্থান তৈরির ব্যাপক সুযোগ রয়েছে।
×