ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাংকগুলোকে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের আহ্বান

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১৫ নভেম্বর ২০১৫

ব্যাংকগুলোকে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের আহ্বান

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ উড়াল সেতু, ব্রিজসহ বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্পে ব্যাংকগুলোকে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ড. আতিউর রহমান বলেছেন, এজন্য দীর্ঘমেয়াদী সঞ্চয় স্কিম বাড়াতে হবে। স্বল্পমেয়াদি সঞ্চয় দিয়ে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ করাকে চ্যালেঞ্জিং উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দীর্ঘমেয়াদী সঞ্চয় নিশ্চিত করতে হবে। শনিবার দুপুরে রাজধানীর হোটেল রেডিসন ব্লুতে ‘ইন্টারন্যাশনাল সেমিনার অব ব্যাংকিং ইন বাংলাদেশ : দ্য লিপ ফরওয়ার্ড’ শীর্ষক সেমিনারে এ আহ্বান জানান গবর্নর। দেশী-বিদেশী ব্যাংকিং প্রফেশনালদের অংশগ্রহণে আয়োজিত দিনব্যাপী এ সেমিনারের আয়োজন করে এ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ লিমিটেড (এবিবি)। সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, ব্যাংকগুলোকে স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগের পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ করতে হবে। উড়াল সেতু, ব্রিজসহ বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্পে বিনিয়োগ করা দরকার। তিনি বলেন, যদিও দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগে রিটার্ন দেরিতে আসে বিধায় বিপাকে পড়তে হয়। এজন্য স্বল্পমেয়াদি সঞ্চয়ের মতো দীর্ঘমেয়াদী সঞ্চয় স্কিম বাড়াতে হবে। সরকারী ব্যাংকগুলোর মতো দীর্ঘমেয়াদী সেভিংস স্কিম করতে হবে। পেনশন ও প্রভিডেন্ট ফান্ড স্কিমের বাইরে সাধারণ নাগরিকের পেনশন সেভিংস স্কিম এবং বিদেশীদের রেমিটেন্স সেভিংস স্কিম করতে বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারের সঙ্গে কাজ করছে বলেও জানান তিনি। আতিউর রহমান বলেন, ৫ বছরের সঞ্চয় দিয়ে ১০ বছরের জন্য বিনিয়োগ করা চ্যালেঞ্জিং। এটা যে কত বড় চ্যালেঞ্জিং ও টেনশনের তা কিছু সরকারী ব্যাংক বুঝতে পারছে। তাই দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগকে সহজতর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক দীর্ঘমেয়াদী সঞ্চয় তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছে। সঞ্চয় বাড়ানোর জন্য আরএমজি শ্রমিকদের ও প্রবাসী বাংলাদেশীদের পেনশন স্কিমের আওতায় আনার সম্ভাবনার কথা জানান ড. আতিউর রহমান। এজন্য তিনি সঠিক নিয়মকানুন চালুরও কথা বলেন। গবর্নর আরও বলেন, আমরা দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের জন্য বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ইতোমধ্যে ৩০০ মিলিয়ন ইউএস ডলারের ফান্ড গঠন করেছি। নিজস্ব অর্থায়নে আরও ২০০ মিলিয়নের ফান্ড গঠন করার কাজ চলছে। এ সময় তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ১ বিলিয়ন ডলারের বন্ড ইস্যু করবে। যা দিয়ে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ করা হবে। এবিবির চেয়ারম্যান ও ইস্টার্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী রেজা ইফতেখারের সভাপতিত্বে আয়োজিত ওই সেমিনারে ‘সম্পদ ও দায় ব্যবস্থাপনা’ এবং ‘প্রযুক্তি ভূমিকা’ বিষয়ে দুটি পৃথক সেশন অনুষ্ঠিত হয়। সেশন দুটি পরিচালনা করেন বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টারের প্রধান নির্বাহী ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গবর্নর মুহাম্মদ এ. (রুমী) আলী এবং আরএসএ এডভাইজারি লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কে. মাহমুদ সাত্তার। ‘সম্পদ ও দায় ব্যবস্থাপনা’ বিষয়ে মূলপ্রবন্ধ পাঠ করেন স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের আঞ্চলিক প্রধান (দক্ষিণ এশিয়া) প্রশান্ত রঞ্জিত। প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন বাংলাদেশের নির্বাহী আবরার এ আনওয়ার এবং আইএফআইসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম শাহ আলম সরওয়ার। প্রবন্ধ আলোচনায় বক্তারা বলেন, গ্রাহকের চাহিদা পূরণে একটি নির্দিষ্ট সময়ে যুক্তিসঙ্গত ন্যূনতম ব্যয়ে পর্যাপ্ত তারল্য অক্ষুণœ রাখা ব্যাংকের প্রধান লক্ষ্য। সঠিক সময়ে তাৎক্ষণিক ভিত্তিতে বিনিয়োগযোগ্য তহবিল বা ধার-কর্জের মাধ্যমে কিংবা সম্পদ বিক্রির মাধ্যমে পর্যাপ্ত তারল্য সংরক্ষণ করতে হয়। সাধারণত ব্যাংক অধিক পরিমাণে তলবি আমানত এবং স্বল্প সুদবাহী সঞ্চয়ী ও মেয়াদি আমানত সংগ্রহ করতে পছন্দ করে। এসব আমানত সুস্থিত আমানত হিসেবে পরিচিত, যা বাজারের সুদের হারের তারতম্যের সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত সংবেদনশীল নয়। ফলে এসব আমানত ব্যাংকে সংরক্ষিত থাকে। বিভিন্ন উৎস থেকে আহরিত তহবিল সম্পদে পরিণত করার জন্য সম্ভাবনাময় নিরাপদ উপযুক্ত ক্ষেত্রে সুচারুভাবে তহবিল লগ্নী ও বিনিয়োগ করা হয়। দায়-সম্পদের সুসামঞ্জস্য সমতা বিধানের ওপর ব্যাংকের দক্ষ তহবিল ব্যবস্থাপনা নির্ভরশীল। ‘প্রযুক্তি ভূমিকা’ বিষয়ে মূলপ্রবন্ধ পাঠ করেন আর্নেস্ট এ্যান্ড ইয়ং’র পার্টনার এ্যান্ড ন্যাশনাল লিডার আবিজার দেওয়ানজি। এ প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন টেকনোহেভেন’র প্রধান নির্বাহী হাবিবুল্লাহ এন করিম, বেসিস’র যুগ্ম মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল এবং ডাচ বাংলা ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মোঃ শিরিন। বিপর্যয় ব্যবস্থাপনার ওপর বক্তব্য রাখেন স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের বিজনেস কনটিউনিটির আঞ্চলিক প্রধান জেসুয়া জেমস। এছাড়াও সেমিনারে এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মোহাম্মদ হায়দার আলী মিয়া, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মান্নান, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিস এ খানসহ বিভিন্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চেয়ারম্যানরা উপস্থিত ছিলেন।
×