স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ খেলা থেমে থাকেনি। আগে থেকেই বোমা হামলার হুমকি ছিল জার্মানির জাতীয় ফুটবল দলের ওপর। কিন্তু ঠিকই ফ্রান্সের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে মুখোমুখি হয় বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানি। ম্যাচে ২-০ গোলে হেরে গেছে সফরকারীরা। তবে ভয়াবহ কা- ঘটে গেছে এর আগেই। ১৯৯৮ বিশ্বকাপ ফাইনালের আয়োজক ভেন্যু স্টেড ডি ফ্রান্সে খেলা শেষে ৮০ হাজার দর্শক ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে প্রবেশ করেন মাঠের ভেতর। কারণ প্রথমার্ধের খেলা চলার সময়েই স্টেডিয়ামের ঠিক বাইরে বোমা বিস্ফোরণ ঘটে। দর্শকরা প্রথম ভেবেছিলেন সাধারণ পটকা, তাই আমলে নেননি তারা। কিন্তু খেলা শেষ হওয়ার পর পুরো বিষয়টা জানতে পারেন তারা। দর্শকদের পুলিশ স্টেডিয়াম থেকে নিয়ে যেতে যেতে মাঝরাত হয়ে গেছে। স্টেডিয়ামের ভেতরে কোন ধরনের হতাহতের ঘটনা ঘটেনি, কিন্তু আতঙ্কের হীমস্রোত ছিল সবখানেই। এদিন সিরিজ বোমা হামলায় ফ্রান্সে প্রাণহানির পরিমাণ প্রায় দেড় শতাধিক এবং আহতের ঘটনা প্রায় দুই শতাধিক। সপ্তাহ শেষেই ফ্রান্সের সঙ্গে ইংল্যান্ডের প্রীতি ম্যাচ। এবার ইংলিশ ফুটবল এ্যাসোসিয়েশন (এফএ) এখন আলোচনায় বসবে ম্যাচটি হবে কিনা সে বিষয়টি নিয়ে। দেশে এমন ঘটনার পর ফ্রান্স খেলতে আসবে কিনা ওয়েম্বলিতে সেটা নিশ্চিত হওয়া দরকার।
এমন ঘটনা নজিরবিহীন। আন্তর্জাতিক ক্রীড়াক্ষেত্রে এমন ধরনের কোন ঘটনা আগে দেখা যায়নি। দর্শকরা আনন্দে উদযাপন করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ফ্রান্স প্রীতি ম্যাচে ২-০ গোলে জিতে গেছে জার্মানির বিরুদ্ধে। কিন্তু সেটা আর হলো না। একের পর এক বিস্ফোরণে কেঁপে উঠলো পুরো ফ্রান্স। প্রথমার্ধের খেলা চলার সময়েই স্টেডিয়ামের বাইরে সশব্দে বোমা ফাটে। কিন্তু দর্শকরা প্রাথমিক অবস্থায় সেটাকে সাধারণ আতশবাজি বা পটকা ভেবেছিলেন। কারণ স্টেডিয়ামের মধ্যে তখন দর্শকদের মধ্যে অন্যরকম এক উত্তেজনা। এর মাঝে বাইরের কোন শব্দ ভালভাবে বুঝে ওঠা প্রায় অসম্ভব। কিন্তু একটু পরেই দর্শকরা জানতে পারেন বোমা বিস্ফোরণে মানুষ মারা গেছে। আর তারপর থেকেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ৮০ হাজার দর্শকের মন থেকে মুহূর্তেই ফুটবলের আনন্দ উবে যায়। শেষ পর্যন্ত স্টেড ডি ফ্রান্সের বাইরের ওই বোমা বিস্ফোরণে মৃত্যুর সংখ্যা ৫, মারাত্মক আহত ১১ ও কম আহত ৩০ জন বলে জানিয়েছে পুলিশ। ফরাসি পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে বিস্ফোরণটি ছিল আত্মঘাতী। এক ব্যক্তি শক্তিশালী বিস্ফোরক বস্তু কোমর-বন্ধনীতে (বেল্ট) রেখেছিলেন এবং সেটাসহ নিজেকে উড়িয়ে দেন বিস্ফোরণ ঘটিয়ে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদ এর একটু আগেই স্টেডিয়াম ত্যাগ করেন সামান্য সময় খেলা দেখে। কারণ তিনি স্টেডিয়ামে থাকাকালীন রাজধানী প্যারিসে বন্দুক হামলার খবর পেয়েছিলেন। কিন্তু খেলা চালিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং শেষ করা হয়েছে। অথচ জানা গেছে বোমা হামলার দিন সকালেই জার্মান ফুটবল দলকে হুমকি দেয়া হয়েছিল। তাদের হোটেল থেকে হেলিকপ্টারে করে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার পর বাইরে অনেক গোলমাল, পুলিশের তৎপরতা এবং এ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন বাজতে শুনেছেন দর্শকরা। অবশ্য আগে থেকেই স্টেডিয়ামের ভেতর ও বাইরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। ম্যাচশেষে স্টেডিয়াম থেকে বের হওয়ার সব পথই বন্ধ করে দিয়েছিলেন নিরাপত্তাকমীরা। সে কারণে মাঠের ভেতর প্রবেশ করেন আতঙ্কিত দর্শকরা। ওই সময় স্টেডিয়াম সংলগ্ন বিভিন্ন হোটেল, রেস্টুরেন্টে তল্লাশিও চালিয়েছে পুলিশ।
জার্মানির বিপক্ষে ম্যাচে বিজয়ী দলের হয়ে গোল দুটি আদায় করেন অলিভার গিরড ও বদলি খেলোয়াড় আঁন্দ্রে পিয়েরে গিগন্যাক। ম্যাচের পর দীর্ঘ সময় স্টেডিয়ামেই কাটিয়েছে জার্মান ফুটবল দল। খেলা শেষ হওয়ার অন্তত ৩০ মিনিট পরও আনুমানিক ২ হাজার দর্শক মাঠে অবস্থান করছিল। এদিন অনুষ্ঠিত অন্যান্য প্রীতি ম্যাচে ইংল্যান্ডের ১৫ ম্যাচে অপরাজিত থাকার ধারাবাহিকতা ভেঙ্গে দিয়েছে স্পেন। সফরকারী ইংলিশদের ২-০ গোলে হারায় স্প্যানিশরা। এছাড়া বেলজিয়াম ৩-১ গোলে ইতালিকে, হল্যান্ড ৩-২ গোলে ওয়েলসকে, সেøাভাকিয়া ৩-২ গোলে সুইজারল্যান্ডকে, লুক্সেমবার্গ ১-০ গোলে গ্রীসকে, চেক প্রজাতন্ত্র ৪-১ গোলে সার্বিয়াকে, পোল্যান্ড ৪-২ গোলে আইসল্যান্ডকে এবং উত্তর আয়ারল্যান্ড ১-০ গোলে লাটভিয়াকে পরাজিত করে।