ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

জিম্বাবুইয়ে তিন উইকেটে জয়ী

টি২০ সিরিজ ড্র

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১৬ নভেম্বর ২০১৫

টি২০ সিরিজ ড্র

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ হিরো হয়ে গেলেন জিম্বাবুইয়ের নেভিল মাদজিভা। আর ভিলেন হয়ে গেলেন বাংলাদেশের নাসির হোসেন। বাংলাদেশের ১৩৫ রান তাড়া করতে গিয়ে শেষ ওভারে জিততে ১৮ রান প্রয়োজন পড়ে জিম্বাবুইয়ের। মাদজিভা একাই এ রান করে ফেললেন! যিনি ওভারটি করলেন তিনি আর কেউ নন; নাসির। রবিবার দ্বিতীয় ও শেষ টি২০ ম্যাচে বাংলাদেশ ৩ উইকেটে হেরেও গেল। জিম্বাবুইয়ে সিরিজে ১-১ সমতা আনল। ওয়ানডের পর টি২০তেও জিম্বাবুইয়েকে হোয়াইটওয়াশ করার স্বপ্ন সফল হল না বাংলাদেশের। ওয়ানডেতে ৩-০ ব্যবধানে হারলেও দুই ম্যাচের টি২০ সিরিজ হারল না জিম্বাবুইয়ে। টস জিতে বাংলাদেশ আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয়। এনামুল হক বিজয়ের ৪৭ রানে ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৩৫ রান করে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান করেন তামিম ইকবাল (২১)। বল হাতে টিনাসে পানিয়াঙ্গারা ৩টি, নেভিল মাদজিভা ও গ্রায়েম ক্রেমার ২টি করে উইকেট নেন। এ রান অতিক্রম করতে গিয়ে শেষ বলে খেলা শেষ হয়। ব্যাট হাতেও মাদজিভা দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখান। শেষ ওভারে ১৮ রান নেয়ার সঙ্গে তার করা অপরাজিত ২৮ রানে ১৯.৫ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৩৬ রান করে জিতে যায় জিম্বাবুইয়ে। আল আমিন একাই ৩ উইকেট নেন। তামিম প্রথম টি২০’র নৈপুণ্য দ্বিতীয় টি২০তে বজায় রাখতে পারেননি। ২১ রান করেই আউট হয়ে যান। ২০১১ সালের ২৯ নবেম্বর পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বশেষ টি২০ ম্যাচ খেলেছিলেন ইমরুল। প্রায় চারবছর পর স্বল্পওভারের ফরমেটে আবার ব্যাট হাতে নামেন। কিন্তু ১০ রানের বেশি করতে পারেননি। বাংলাদেশ ৮ ওভারে ৫৯ রান করে। বিপদ যেন ঘনিয়ে আসতে থাকে। এমন সময়ে বিজয় ও মুশফিকুর রহীম এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখান। কিন্তু ৫৯ রানে গিয়ে মুশফিকও (৯) আউট হয়ে যান। দল বিপদেই পড়ে যায়। আরও ২ ওভারে ১০ রান স্কোরবোর্ডে যোগ হয়। মুশফিকের আউটের পর সাব্বির রহমান রুম্মন ব্যাট হাতে নামেন। বিজয়ের সঙ্গে সাব্বির দারুণ জুটি গড়েন। আগের জুটিগুলোর যে অবস্থা, সেই অনুযায়ী বিজয়-সাব্বির ৩৯ রানের জুটি গড়েন যেটি বাংলাদেশ ইনিংসের সেরা জুটিও হয়ে থাকে। দলের ৯৮ রানের সময় সাব্বির (১৭) এলবিডাবলিউ হয়ে গেলে এ জুটি ভেঙ্গে যায়। ১০০ রান করতে বাংলাদেশকে ১৪.৫ ওভার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। একের পর এক উইকেট পড়তে থাকে। তবে স্কোরবোর্ডে রানও জমা হতে থাকে। বিজয় যে তখনও উইকেটে থাকেন। ১২২ রানের মধ্যে আরও ৩টি উইকেটের পতন ঘটে। নাসির হোসেন ব্যাট হাতে নামেন। ৩ রান করে সাজঘরে ফেরেন। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে ভরসা করা হয় তখন। তিনিও ৮ রান করে আউট হয়ে যান। ভরসার প্রতিদান দিতে পারেননি। মাশরাফিতো রানের খাতা খোলার আগেই আউট হয়ে যান। ১৩০ রানে গিয়ে আরাফাত সানিও (৫) সাজঘরে ফিরেন। তখন আর ১ ওভার বাকি থাকে বাংলাদেশ ইনিংসের। বোঝাই যাচ্ছিল ১৫০ রান আর হচ্ছে না। সবার দৃষ্টি তখন বিজয়ের দিকেই চলে যায়। ৪৪ রান করে ফেলেন বিজয়। দলের হাল একাই ধরা এ ব্যাটসম্যান শেষ পর্যন্ত কি অর্ধশতক করতে পারবেন? এমন প্রশ্ন যখন ওঠে। মুহূর্তেই বিজয়ও আউট হয়ে যান। পারলেন না অর্ধশতক করতে। আর ৩ রান যোগ করে ৪৭ রান করে রান আউট হয়ে যান বিজয়। এরপরও প্রশংসা পান বিজয়ই। একাই যে দলকে টেনে নিয়ে গেছেন। দলে সবাই যখন আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকছেন তখন এমন ইনিংস তার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেবে। শেষ পর্যন্ত দল শেষ ওভারে আর মাত্র ৫টি রান যোগ করতে পারেন। জিম্বাবুইয়ের ইনিংসের শুরুতেই ধাক্কা দেন আল আমিন। ৭ রানের সময়ই সিকান্দার রাজাকে (৫) আউট করে দেন। দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে সিকান্দারকে আউট করে শন উইলিয়ামসকেও পরের বলে বোল্ড করে দেন। হ্যাটট্রিকের সুযোগ তৈরি করেন। কিন্তু হ্যাটট্রিক আর হয়নি। জিম্বাবুইয়েকে চেপে ধরার কাজটি ঠিকই করে যান বোলাররা। ১৫ রানে চাকাবভাকে (৪) আউট করে দেন মুস্তাফিজুর রহমান। আর ১৮ রান যোগ হতেই ক্রেইগ এরভিন (১৫) রানআউট হয়ে যান। এরপর উইকেট পড়ছিলই না। জিম্বাবুইয়ের রানের চাকাও সচল থাকে। এমনই অবস্থা হয়ে যায়, ২৭ বলে জিততে ৪২ রান লাগে জিম্বাবুইয়ের। প্রথম টি২০’র মারমুখী ব্যাটসম্যান ম্যালকম ওয়েলার ও লুক জঙ্গে মিলে বাংলাদেশকে ভয়ই ধরিয়ে দেন। ৫৫ রানের জুটিও গড়ে ফেলেন দুজন। এমন সময় আবার ত্রাতা হয়ে আসেন আল আমিন। জঙ্গেকে (৩৪) আউট করে দিয়ে বড় জুটিটি ভাঙ্গেন। মনে হচ্ছিল বাংলাদেশ জিতে যাবে। শেষ ওভারে গিয়ে যখন ১৮ রান লাগে তখনও ভরসা থাকে। ওয়েলার ব্যাটিংয়ে থাকেন। কিন্তু তাই বলে ১৮ রানই নিয়ে নেবেন ওয়েলার! সব বোলারের ওভার শেষ হয়ে যাওয়ায় নাসির শেষ ওভারটি করেন। প্রথম বলেই ওয়েলারকে আউট করেন। তখন স্টেডিয়ামে দর্শকদের সে কি আনন্দ! সবার ভেতরই আনন্দ কাজ করে। বোধহয় জিতেই যাচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু মাদজিভা এ কি ব্যাটিং করলেন। দ্বিতীয় বলে ছক্কা হাঁকান। তৃতীয় বলে ২ রান নেন। চতুর্থ বলে চার মারেন। আর পঞ্চম বলে গিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে ম্যাচই জিতিয়ে দেন! সবাই হতভাগ হয়ে যায়। মুহূর্তেই নিস্তব্ধ হয়ে যায় মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম। বাংলাদেশ হেরে যায়। সেই সঙ্গে সিরিজে সমতাও আনে জিম্বাবুইয়ে।
×