ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সপ্তম সাক্ষীর জবানবন্দী

বড় মিয়া, আঙ্গুর মিয়ার নেতৃত্বে রাজাকাররা রজবকে হত্যা করে ॥ যুদ্ধাপরাধী বিচার

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১৬ নভেম্বর ২০১৫

বড় মিয়া, আঙ্গুর মিয়ার নেতৃত্বে রাজাকাররা রজবকে হত্যা করে ॥ যুদ্ধাপরাধী বিচার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতারকৃত হবিগঞ্জের দুই সহোদর মহিবুর রহমান ওরফে বড় মিয়া, মুজিবুর রহমান ওরফে আঙ্গুর মিয়া ও আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের সপ্তম সাক্ষী মোঃ আল্লাদ মিয়া সবুজ মিয়া জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দীতে তিনি বলেছেন, রাজাকাররা একাত্তরের ২৬ অক্টোবর জেনারেল এমএ রবের বাড়িতে আগুন দেয়। এরপর হিন্দুপাড়ায় ১৫-১৬টি ঘরে আগুন দিয়ে যাওয়ার সময় পাক আর্মিরা মঞ্জব আলীর স্ত্রী ও আমার বোন আগর চান বিবিকে ধর্ষণ করে। মহিবুর ও মজিবুরের নেতৃত্বে রাজাকাররা রজব আলীকে গুলি করে হত্যা করে। এছাড়া আকল আলীকে ধরে নিয়ে যায়। তার সন্ধান আজও পাওয়া যায়নি। জবানবন্দী শেষে আসামিপক্ষের আইনজীবী তাকে জেরা করেছেন। পরবর্তী সাক্ষ্যর জন্য ১৯ নবেম্বর দিন ধার্য করা হয়েছে। অন্যদিকে নেত্রকোনার সাত আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমার সময় বাড়িয়ে আগামী ১৫ জানুয়ারি জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ প্রদান করেন। জবানবন্দী ও জেরার সময় প্রসিকিউশন পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সিমন, ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল ও রিজিয়া সুলতানা চমন। অন্যদিকে সাক্ষীকে জেরা করেন এ্যাডভোকেট মাসুদ রানা ও আব্দুস শুকুর। সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেছেন, রাজাকাররা রজব আলীকে গুলি করে হত্যা করে। প্রসিকিউশনের সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, আমার নাম মোঃ আল্লাদ মিয়া। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৭০ বছর। আমার ঠিকানা গ্রাম- এরালিয়া বেড়িপাড় উত্তরপাড়া, থানা- বানিয়াচং, জেলা- হবিগঞ্জ। একাত্তরে আমার বয়স ছিল আনুমানিক ২৫-২৬ বছর। তখন আমি আমাদের গ্রামের মক্তবে পড়াতাম। একাত্তরের ২৬ অক্টোবর সকাল আনুমানিক সোয়া দশটার দিকে আসামি মহিবুর রহমান ওরফে বড় মিয়া, মজিবুর রহমান ওরফে আঙ্গুর মিয়া ও আব্দুর রাজ্জাকসহ আরও কয়েকজন রাজাকারসহ ১৫-১৬ জন পাকিস্তানী আর্মি খাড়াউড়া গ্রামে জেনারেল এমএ রব সাহেবের বাড়িতে আগুন দেয়। আমি ওই আগুনের ধোঁয়া আমাদের বাড়ি থেকে দেখতে পাই। এরপর তারা মুক্তিযোদ্ধা কমলা মিয়ার বাড়িতে যায়। সেখানে গিয়ে অনেককে মারপিট করে এবং কমলা মিয়ার বাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। সাক্ষী বলেন, এরপর আসামিরা তাদের সহযোগী রাজাকার ও পাকিস্তানী আর্মিদের নিয়ে নৌকাযোগে আমাদের গ্রামের উত্তরপাড়ায় নুরুজ্জামানের বাড়িতে গিয়ে তার পাঁচটি ঘরে আগুন দেয়। এরপর তারা মঞ্জব আলীর বাড়িতে যায়। সেখানে আর্মিরা মঞ্জব আলীর স্ত্রীকে ধর্ষণ করে। এরপর তারা ওই বাড়ি থেকে ৭-৮টি বাড়ির উত্তরে আমাদের বািড়তে যায়। তখন আমি ভয়ে আমাদের ঘরের পূর্বপাশে একটি ঘরের বাইরে লুকিয়ে থাকি। আসামিরা পাকিস্তানী আর্মিদের বাড়ির ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়। নেত্রকোনার ৭ আসামি ॥ একাত্তরে সংঘটিত মনবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে নেত্রকোনার ৭ আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমার সময় বাড়িয়ে আগামী ১৫ জানুয়ারি জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। রবিবার রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মোঃ আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য পুনরায় এই দিন ধার্য করেন। রবিবার আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর তাপস কান্তি বল। মামলার প্রধান আইনজীবী মোখলেছুর রহমান বাদল ও প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নির অনুপস্থিতিতে ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল এ শুনানি করেন। অপরদিকে আসামিদের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী এ্যাডভোকেট গাজী এমএইচ তামিম।
×