ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘উন্মুক্ত সীমান্ত কেবল অবাস্তবই নয়, বিপজ্জনকও বটে’

ইউরোপের জন্য অশনি সঙ্কেত

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ১৬ নভেম্বর ২০১৫

ইউরোপের জন্য অশনি সঙ্কেত

শার্লি হেবদো পত্রিকার কার্যালয়ে এবং এক ইহুদী সুপার মার্কেটে গত জানুয়ারির হামলা প্রমাণ করে যে, ইসলামী চরমপন্থীরা নিজেদের ফ্রান্সের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত বলে মনে করে। ওই ধারণাকে অগ্রাহ্য করেছিলেন এমন কোন কোন ফরাসী নেতাসহ প্রত্যেকের কাছে এটি এখন স্পষ্ট যে, ফ্রান্স এখন ইসলামী চরমপন্থীদের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত। প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ শনিবার এমনটিই বলেন। ভাষ্য লন্ডনের টেলিগ্রাফ অনলাইনের। যেহেতু শত্রু এরই মধ্যে দেশের ভেতরেই রয়েছে তাই এ লড়াই অপ্রীতিকর, কঠিন ও বিতর্কিত হবে। প্যারিস হামলার সময় নিহত আট সন্ত্রাসী শত্রু দলের একেবারেই ক্ষুদ্রাংশ মাত্র। রক্ষণশীল ফরাসী পত্রিকা লা ফিগারোর ওয়েবসাইটে প্যারিসের কেন্দ্রস্থলেই যুদ্ধ চলছে বলে ঘোষণা করা হয়। ফরাসী জনগণের বিরাট অংশ এ মনোভাবের অংশীদার, কারণ এসব ভয়াবহ ঘটনার ফলে তাদেরই মানসিক অবস্থা কঠোর হয়ে উঠেছে। সর্বোপরি আমরা অবশ্যই অনুধাবন করব যে, যদিও এ নৃশংসতা ফ্রান্সের পরিস্থিতিতে গভীর পরিবর্তন আনবে, কিন্তু এটি ইউরোপের অবশিষ্টাংশের জন্য, ব্রিটেন এবং সমগ্র পাশ্চাত্য সভ্যতার জন্য এক অশনি সঙ্কেত। আমরা সবাই ইসলামী চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে লিপ্ত। প্যারিসে যত সহজে ১২৮ ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে, তত সহজেই তাদের লন্ডন, বার্লিন, আমস্টারডাম বা রোমে হত্যা করা যেত। ফরাসী রাজনীতিকরা এখন পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছেন যে, এসব হামলা এ সন্ত্রাসবাদের হাত থেকে তাদের দেশের আত্মরক্ষার উপায় পাল্টে দিতে পারে। ইউরোপের রাজনৈতিক নেতাদেরও অবশ্যই তাই করা উচিত। ফ্রান্সে যে এসব হামলা ঘটল, তার কারণ কেবল দেশটির সিরীয় যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা নয়। এর কারণ এটিও যে, ফরাসী নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক আট চরমপন্থীকে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া থেকে ঠেকাতে সক্ষমতার পরিচয় দেয়নি। অথচ ফরাসী গোয়েন্দারা ২,০০০ সন্দেহভাজন ইসলামপন্থীর তৎপরতার ওপর নজর রাখছিলেন বলে জানা যায় এবং ফরাসী সন্ত্রাস দমন বিশেষজ্ঞরা কোন হামলার আশঙ্কা করছিলেন। শিক্ষণীয় বিষয় হলো, প্রেসিডেন্ট ওলাঁদ যে মুহূর্তে এ ভয়ঙ্কর বাস্তবতা বুঝতে পারেন, সেই মুহূর্তেই তিনি প্রথমে ফরাসী সীমান্ত বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশ দেন। ব্রিটেনসহ তার ইউরোপীয় অংশীদারদের কেউ কেউ মাসের পর মাস ধরে ফ্রাঙ্কো-জার্মান অক্ষশক্তিকে বলে এসেছে যে, লোকজনের অবাধ চলাচলের আদর্শ আর বাস্তবায়নযোগ্য নয়। যখন ইসলামপন্থী সন্ত্রাসবাদ অজ্ঞাত ছিল, তখন ওই আদর্শের ধারণা করা হয়েছিল। এখন এটি কেবল বাস্তবায়নের অযোগ্যই নয়, বিপজ্জনকও বটে। ওলাঁদ স্বীকার করেছেন যে, এসব হামলায় উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বিদেশ থেকে মদদ দেয়া হয়েছিল। এটি প্রমাণিত হতে পারে যে, সন্ত্রাসীরা ফরাসী নাগরিক ছিল এবং তাদের প্যারিস এবং লিও ও মার্সেইয়ের মতো অন্যান্য শহরের উপকণ্ঠে বসবাসরত বিরাট অসন্তুষ্ট মুসলিম সম্প্রদায় থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল। কিন্তু তাদের মদদদাতা নেটওয়ার্ক এবং শুক্রবার রাতে তাদের ব্যবহৃত মারাত্মক অস্ত্রের চালানের জন্য সীমান্ত খোলা থাকা খুবই সহায়ক হয়েছিল। সেই পথও এখন অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। এসব হামলা ফ্রান্সের রাজনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। আগামী মাসে দেশের আঞ্চলিক নির্বাচন। এ নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া ওলাঁদের দুর্বল ও অসফল সমাজতান্ত্রিক সরকারের পক্ষে কঠিন, মনে হয় অসম্ভব হয়ে পড়বে। ফরাসী পর্যবেক্ষকরা চরম ডানপন্থী ম্যারিন লা পেন ২০১৭ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম দফায় জয়ী হবেন, কিন্তু দ্বিতীয় দফায় সম্ভবত নিকোলাস সারকোজি বা অন্য রিপাবলিকান, রক্ষণশীল, প্রতিদ্বন্দ্বী অঁলা জুপ্পের কাছে পরাজিত হবেন বলে দীর্ঘদিন ধরে প্রত্যাশা করে এসেছেন। সোশ্যালিস্ট পার্টির রাজনীতিকরা বা রিপাবলিকানরা এ লড়াই চালাতে যথেষ্ট সক্ষম নন বলে বিবেচিত হলে ফ্রন্ট ন্যাশনালের নেত্রী ম্যারিন লা পেন কল্পনাতীতভাবেই ভাল করতে পারেন। তিনিই একমাত্র উঁচুমাপের রাজনীতিক, যিনি ফ্রান্সে বিরাটসংখ্যক মুসলিমের অস্তিত্বের এবং ফরাসী সমাজের সঙ্গে তাদের একীভূত হওয়ার ব্যর্থতার বিপদ সম্পর্কে অনবরত সতর্কবাণী উচ্চারণ করে এসেছেন।
×