ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আর্সেনিক সিনড্রোম

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ১৭ নভেম্বর ২০১৫

আর্সেনিক সিনড্রোম

আর্সেনিক এক মারাত্মক বিষের নাম। এই বিষ শরীরে প্রবেশ করলে ক্যান্সারসহ অন্যান্য গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। টিউবওয়েলের পানিতে আর্সেনিকের মাত্রা অত্যধিক থাকার নমুনা প্রচুর। দেশের কয়েকটি অঞ্চলের পানিতে আর্সেনিকের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়েও বেশি। বাংলাদেশসহ যেসব দেশে ভূগর্ভস্থ আর্সেনিকের মাত্রা বেশি সেসব দেশে গুরুতর জনস্বাস্থ্য হুমকি রয়েছে। এসব মোকাবেলায় তথা আর্সেনিক ঝুঁকি প্রশমন এখনও তেমন গুরুত্ব পেয়েছে, বলা যায় না। আর্সেনিক আক্রান্তরা যে যথাযথ চিকিৎসা সুবিধা পায়, তা বলা যায় না। তাছাড়া আর্সেনিক সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে যথাযথ সচেতন করা হয় না বলে মানুষ আর্সেনিক দূষিত পানি পান করে আসছে অবলীলায়। সঠিক ধারণার অভাবে এই পানি পরিহার বা বিশুদ্ধকরণের কাজটি করা হয় না। তাই ধীরে ধীরে রোগাক্রান্তরা মৃত্যুমুখে পতিত হয় ধুঁকে ধুঁকে। কিন্তু আক্রান্তরা চিকিৎসার অভাবে যন্ত্রণাদগ্ধ জীবন পাড়ি দেয়। কোন সুনির্দিষ্ট কারণ স্পষ্ট না হলেও মাতৃগর্ভে থাকাকালে মায়ের ওপর আর্সেনিকের প্রভাব পড়ে এবং এটাই স্বাভাবিক। বিষক্রিয়া গর্ভশিশুর মধ্যে সঞ্চারিত হয়। তবে ভিন্ন প্রভাব পাওয়া গেছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রের (আইসিডিডিআরবি) এক গবেষণায়। বলা হয়েছে, মাতৃগর্ভে থাকাকালে মায়ের ওপর আর্সেনিকের প্রভাব ১ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার সঙ্গে বিশেষভাবে সম্পর্কিত। যদিও গবেষকরা এর সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাননি। গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরে আর্সেনিকের প্রভাবের সঙ্গে কম বয়সী শিশুদের পানিতে ডুবে মৃত্যুর কোন সম্পর্ক আছে কিনা জানার জন্য এই গবেষণা করেন। চাঁদপুরের মতলব উপজেলায় প্রতিষ্ঠানের ‘ফিল্ড সাইটে’ এই গবেষণা চালানো হয়। গবেষকরা ২০০২ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ১১ হাজার ৪শ’ ১৪ জন মায়ের গর্ভে জন্ম নেয়া শিশুর জন্ম ও মৃত্যু সংক্রান্ত তথ্য ও উপাত্ত বিশ্লেষণ এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার ১৩ হাজারেরও বেশি টিউবওয়েলের পানির আর্সেনিকের ঘনত্ব পরীক্ষা করেছেন। জন্মের পর থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত শিশুদের পর্যবেক্ষণের আওতায় রাখা হয়। তবে গবেষণায় কিছু সম্ভাব্য ঝুঁকির কারণ যেমন সঠিক তত্ত্বাবধানের অভাব, অরক্ষিত জলাধার ইত্যাদি বিবেচনায় রাখা হয়নি। গবেষণায় অবশ্য এটা মিলেছে যে, আর্সেনিক গর্ভফুল বা প্লাসেন্টা ভেদ করে গর্ভের সন্তানকে আক্রান্ত করতে পারে। এমনকি আর্সেনিক বুদ্ধিবৃত্তিক ও স্নায়ুর বিকাশ ব্যাহত করে। যে সব শিশু মাতৃগর্ভে থাকাকালীন আর্সেনিকে আক্রান্ত হয়েছিল; তা তাদের স্বতঃস্ফূর্ত চলাচলের ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে থাকতে পারে। যার ফলে পানিতে ডোবার ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশের ৩ দশমিক ৫ কোটিরও বেশি মানুষ যে পানি ব্যবহার করছে, তাতে আর্সেনিকের ঘনত্ব দেশের জাতীয় মান এবং বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশকৃত মাত্রার চেয়ে বেশি। গবেষকরা এটাও বলছেন, ভবিষ্যতে পানিতে ডোবা প্রতিরোধ প্রকল্প পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের জন্য এই গবেষণার ফলাফল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। অভীষ্ট ফলাফল হয়ত অর্জন করা সম্ভব হবে না। যদি না গর্ভাবস্থায় আর্সেনিকের প্রভাব কমানো যায়। দেখা যাচ্ছে, এই গবেষণার ফলাফল অন্য এক দৃষ্টিকোণ নির্দেশ করছে। আর্সেনিকের সঙ্গে পানিতে ডোবার সম্পর্কের মাত্রা এবং ভয়াবহতা নিরূপণ করার জন্য এপিডেমিওলজিক্যাল গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে আর্সেনিকের মাত্রা অত্যধিক। আর্সেনিকমুক্ত পানি পান করার জন্য নানামুখী পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে। কিন্তু সুফল সর্বার্থে মেলেনি। আর্সেনিকমুক্ত পানির জন্য সর্বাগ্রে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া জরুরী হয়ে পড়েছে।
×