ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অব্যাহত প্রচেষ্টা চালান

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১৭ নভেম্বর ২০১৫

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অব্যাহত প্রচেষ্টা চালান

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ দেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষিবিজ্ঞানীদের প্রতি অব্যাহত প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, নৈতিক মূল্যবোধ, দেশপ্রেম ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা বিবেচনায় রেখে কৃষক ও কৃষির উন্নয়নে আপনাদের কাজ করে যেতে হবে। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সোমবার শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। খবর বাসস’র সমাবর্তন অনুষ্ঠানে মোট ২ হাজার ৬২৫ জন শিক্ষার্থী ডিগ্রী গ্রহণ করেন। ২২ জন শিক্ষার্থী তাদের অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য স্বর্ণপদক লাভ করেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এসএইউ পদ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডিগ্রী প্রদান করা হয়। দেশে জনজীবনে স্বস্তি, উচ্চশিক্ষায় তার সমর্থন এবং উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে স্বীকৃতি হিসেবে তাকে এই ডিগ্রী দেয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরে তার কাছে এই ডিগ্রী হস্তান্তর করবে। রাষ্ট্রপতি বলেন, কৃষি আজ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর। পৃথিবীর সব দেশেই গবেষণার মাধ্যমে কৃষিকে নবতর স্তরে নিয়ে যাবার প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে। ফলে কৃষি উন্নয়নে গবেষণার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। সেক্ষেত্রে জনগণের খাদ্য চাহিদা, ভূমির অপ্রতুলতা, বিদ্যমান জলবায়ু ও পরিবেশ মাথায় রেখে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। টেকসই ও কৃষিবান্ধব প্রযুক্তি কৃষকদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার পাশাপাশি তারা যাতে নবতর প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারে, সে জ্ঞানও তৃণমূল পর্যায়ে বিস্তৃত করতে হবে। রাষ্ট্রপতি দেশ ও জনগণের চাহিদা সামনে রেখে যুগোপযোগী কৃষি গবেষণা ও সম্প্রসারণ কার্যক্রম বৃদ্ধির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতি আহ্বান জানান। রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষি ও কৃষকের অবদান অসামান্য। এজন্য তিনি দেশের সকল কৃষককে আন্তরিক অভিনন্দন জানান। রাষ্ট্রপতি বলেন, কৃষক মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দেশের কৃষিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ষোল কোটি মানুষের আহারের সংস্থান করছেন। কৃষিপণ্য রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে। কৃষকরা সত্যিকার দেশপ্রেমিক, জাতির প্রকৃত বন্ধু। তিনি বলেন, আজ যারা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রী নিয়ে বের হচ্ছেন, কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে তাদের মেধাকে কাজে লাগাবেন, কৃষকের পাশে দাঁড়াবেন। রাষ্ট্রপতি বলেন, কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণ। দেশের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা, অর্থনীতি, সামাজিকতা, সংস্কৃতি, উৎসব পার্বণ সবই কৃষিকে ঘিরে। গ্রামে উৎপাদনশীলতা, আয়, কর্মসংস্থান, খাদ্য ও পুষ্টির সংস্থান, কৃষিভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠান কাঁচামাল সরবরাহ, রফতানি বাণিজ্যে অবদান রাখাসহ সামগ্রিক গ্রামীণ অর্থনীতিতে কৃষি ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। রাষ্ট্রপতি বলেন, একবিংশ শতাব্দীর এমন একটি সময়ে আপনারা দেশের একটি সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ থেকে কৃষিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেছেন, যখন বিশ্বব্যাপী জ্ঞানের সকল শাখায় বিস্ময়কর অগ্রগতি সাধিত হচ্ছে। এ অবস্থায় নিজ বিষয়ে হালনাগাদ থেকে নতুন নতুন উদ্ভাবন ও গবেষণার মাধ্যমে কৃষিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। অর্জিত জ্ঞান, দক্ষতা এবং উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে কৃষিক্ষেত্রে এক নতুন বিপ্লব সাধনে তারা সক্ষম হবে বলে রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করেন। রাষ্ট্রপতি বলেন, দেশে কৃষি সনাতনী প্রথা হলেও আজ তাতে বিজ্ঞানের ছোঁয়া লেগেছে। কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রপাতির প্রয়োগ, সার ও কীটনাশকের ব্যবহার, কৃষিবিজ্ঞানীদের নতুন নতুন উচ্চফলনশীল জাত ও কৌশল উদ্ভাবন, কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার, কৃষকদের দক্ষ করা, সরকারের কৃষিবান্ধব নীতির কারণে কৃষি উৎপাদন অনেক বেড়েছে। স্বল্প আয়তনের দেশে ১৬ কোটি মানুষের খাদ্যের যোগানসহ বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। স্বল্প পরিসরে হলেও বাংলাদেশ আজ বিশ্বে খাদ্য রফতানি করছে। এ ঘটনাকে তিনি স্বাধীন বাংলাদেশে একটি বিশাল অর্জন বলে উল্লেখ করে এজন্য কৃষক, কৃষিবিজ্ঞানী, শিক্ষক, গবেষক, সম্প্রসারণ কর্মী, কৃষিশিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান, এসএইউ’র ভিসি অধ্যাপক মোঃ সাদত উল্লা এবং প্রো-ভিসি অধ্যাপক শহিদুর রশীদ ভূইয়া বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে জাতীয় ইমেরিটাস বিজ্ঞানী কৃষিবিদ ড. কাজী এম বদরুদ্দোজা সমাবর্তন বক্তব্য রাখেন।
×