ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলা সম্পর্কে ফরাসী প্রধানমন্ত্রী

পরিকল্পনা হয়েছে সিরিয়ায়

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ১৭ নভেম্বর ২০১৫

পরিকল্পনা হয়েছে সিরিয়ায়

প্যারিসে হামলার পরিকল্পনা সিরিয়ায় করা হয়েছে এবং সেখান থেকেই এর সব আয়োজন করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন ফরাসী প্রধানমন্ত্রী ম্যানুয়েল ভালস। পাশাপাশি ফ্রান্সে ও ইউরোপের অন্যান্য দেশেও নতুন সন্ত্রাসী হামলা চালানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে ফরাসী কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে বলেও জানিয়েছেন তিনি। আরটিএল রেডিওর সঙ্গে রবিবার এক সাক্ষাতকারে ভালস আরও বলেন, ফ্রান্স কোন একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে লড়ছে না, বরং একটি ‘সন্ত্রাসী সেনাবাহিনীর’ সঙ্গে লড়ছে। তিনি বলেন, আমরা জানি, শুধু ফ্রান্সের বিরুদ্ধে না, অন্য ইউরোপীয় দেশের বিরুদ্ধেও হামলার পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে এবং তৈরি করা হচ্ছে। প্যারিসে সংঘটিত ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে দ্রুত চলমান তদন্তে রবিবার কিছু ক্লু ক্রমশ ধরা পড়ে অস্ত্রশস্ত্র ভরা একটি গাড়ি প্যারিসের উপকণ্ঠে দেখতে পাওয়া যায়, সিরিয়ার ইসলামিক স্টেট (আইএস) এবং হামলাকারীদের মধ্যে যোগাযোগ ছিল বলে ক্রমবর্ধিত প্রমাণ মেলে, ব্যাপক ষড়যন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ সন্দেহভাজন হোতা হিসেবে বেলজিয়ামে বসবাস করত এমন তিন ভাইয়ের খোঁজখবর নেয়ার চেষ্টা জোরদার করা হয়। খবর নিউইয়র্ক টাইমস অনলাইন ও ওয়েবসাইটের। অনেক দিক দিয়ে তদন্ত চালু রয়েছে এবং বিপজ্জনক বলে বর্ধিত এক সন্দেহভাজনের খোঁজে ব্যাপক তল্লাশি চলছে। ক্রমশ প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে যে, আট হামলাকারীর মধ্যে অন্তত একজন সিরিয়ায় গিয়েছিল। আইএসের প্রধান আস্তানা সিরিয়াতে অবস্থিত। অন্যরা প্যারিসে ওই ভয়াবহ হামলা চালানোর আগে আইএসের জানা সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করছিল তদন্তকারীরা একথা জানান। কর্মকর্তারা এ সম্ভাবনা নিয়েও তদন্ত করছেন যে, হামলাকারীদের সঙ্গে যোগ দিতে এক সিরীয় নাগরিককে পাঠানো হয়েছিল এবং সে হাজার হাজার শরণার্থীর সঙ্গে মিশে গিয়ে ইউরোপে ঢুকেছিল। ওই হামলায় ১৩২ জন নিহত এবং শতশত আহত হয়। কর্তৃপক্ষ বলছে, হামলাকারীদের কয়েকজন ফ্রান্সে হামলা চালানোর প্রস্তুতি নেয়ার সময় বেলজিয়ামে নির্বিঘেœ বসবাস করছিল। ইউরোপীয় কর্মকর্তারা বলেন, একজন হামলাকারী ইসমাইল ওমর মোস্তফাই ফরাসী নাগরিক। সে ২০১২ সালে তুরস্ক গিয়েছিল এবং তারপর সম্ভবত সিরিয়াতে যায়। ইউরোপীয় কর্মকর্তারা বলেন, প্যারিস হামলাকারীরা কোন ধরনের সাংকেতিক ভাষা ব্যবহার করেছিল, তবে তারা এর কোন প্রমাণ দিতে পারেননি। এক ফরাসী কর্মকর্তা বলেন, কোন কোন হামলাকারী শৃঙ্খলার পরিচয় দেয় এবং এতে তাদের সামরিক প্রশিক্ষণ ছিল বলে মনে হয়। ষড়যন্ত্রটি বেশ পরিকল্পনা মাফিক এবং একটি সংগঠিত দলের সহায়তা নিয়ে সাজানো হয়েছিল। সব হামলাকারীকে শনাক্ত করা এবং তারা কিভাবে ষড়যন্ত্রটি বাস্তবায়ন করেছিল, সেই সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করাই তদন্তকারীদের এখনকার চ্যালেঞ্জ। ফরাসী কর্মকর্তারা বলছেন, ছয় হামলাকারী আত্মঘাতী বোমায় নিহত হয় এবং সপ্তম ব্যক্তি পুলিশের সঙ্গে গুলি বিনিময়ে মারা যায়। নিহতদের একজনকে মোস্তফাই বলে শনাক্ত করা হয়। অন্যদের খোঁজে তদন্তকারীরা বেলজিয়ামের দিকে দৃষ্টি দিয়েছেন। সেখানকার কর্তৃপক্ষ ব্রাসেলসের এক দরিদ্র এলাকা মোলেনবিক থেকে কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে। মোলেনবিকে অনেক আরব অভিবাসীর বাস এবং অতীতের কয়েকটি সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে এলাকাটির সংশ্লিষ্টতা ছিল। তদন্তকারীরা মোলেনবিকের তিন ভাইকে প্যারিস হামলায় গুরুত্বপূর্ণ সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করে। বেনজীয় প্রসিকিউটরা একটি ক্যাফেতে আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী হিসেবে ইব্রাহিম আবদুস সালাম নাগের এক ব্যক্তিকে শনাক্ত করেন। তার এক ভাই মোহাম্মদকে শনিবার মোলেনবাস থেকে আটক করা হয়। তৃতীয় ভাই সালেহ আবদুস সালামের (২৬) খোঁজে ফরাসীরা ব্যাপক তল্লাশি চালাচ্ছে। সে ওই হামলার পরপরই পুলিশের হাতে পড়ে ফসকে যায় বলে মনে হয়। প্যারিস প্রসিকিউটরের দফতরের মুখপাত্র বলেন, আমরা তাকে রাস্তায় আটক করে কাগজপত্র পরীক্ষা করে দেখি। সে তার কাগজপত্র দেখায়। তাকে গ্রেফতার করা উচিত বলে আর কাগজপত্রে কোন ইঙ্গিত ছিল কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি ‘কিছুই না’ বলেন। বেলজিয়ামের ফেডারেল প্রসিকিউটর রবিবার জানান, প্যারিস হামলায় ব্যবহৃত দুটি গাড়ি গত সপ্তাহে বেলজিয়ামে ভাড়া করা হয়। একটি ছিল ধূসর রংয়ের ভক্সওয়াগন পোলো। এটি তিন হামলাকারীর দ্বারা ব্যবহৃত হওয়ার পর বাতাক্কা হলের কাছে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। ওই তিন জন সেখানে মারা যায়। ধারেকটি কালো সিট লিও গাড়ি পূর্ব প্যারিসের উপকণ্ঠে রবিবার ভোরে দেখতে পাওয়া যায়। সেটির ভিতর তিনটি কালাশনিকাভ রাইফেল ছিল। এটি প্যারিসের কেন্দ্রস্থল থেকে বন্দুকধারীদের পালিয়ে যাওয়া গাড়ি ছিল বলে অনুমান করা হয়। তদন্তকারীরা এক আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীর দেহাবশেষের পাশে একটি সিরীয় পাসপোর্ট দেখতে পান। রবিবার গ্রিক কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেন যে, ওই পাসপোর্ট নিয়ে আহমদ আল মোহাম্মদ (২৫) নামে কোন ব্যক্তি ৩ অক্টোবর গ্রীসের লেবস দ্বীপে অবতরণ করে। পরে সে ক্রোয়েশিয়া ও সার্বিয়া যায়। তবে সে অন্যতম বন্দুকধারী ছিল কিনা সে ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ এখনও নিশ্চিত নয় বলে এক ইউরোপীয় কর্মকর্তা জানান।
×