ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চিকিৎসক সংকটে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ পশু হাসপাতাল

প্রকাশিত: ২৩:১০, ১৭ নভেম্বর ২০১৫

চিকিৎসক সংকটে  ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ পশু হাসপাতাল

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও ॥ ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলায় সোয়া দুই লাখ গবাদিপশুর জন্য মাত্র একজন চিকিৎসক রয়েছেন। এতে করে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গবাদিপশুর সুষম চিকিৎসা বিঘিœত হচ্ছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন কেন্দ্রে (ইউএলডিসি) ভেটেরিনারি সার্জনের একটি পদ বরাদ্দ রয়েছে। ওই পদে একজন চিকিৎসককে নিয়োগ দেওয়া হলেও তিনি গত ১ অক্টোবর থেকে ছয় মাসের একটি প্রশিক্ষণ নিতে চলে গেছেন। এ কারণে পদটি এখন শূন্য। ইউএলডিসিতে বর্তমানে কমর্রত রয়েছেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ইউএলও) আবুল কালাম আজাদ। তিনি মূলত প্রশাসনিক কর্মকর্তা। প্রশাসনিক কাজের ফাঁকে ফাঁকে তাঁকে গবাদিপশুর চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। এতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁকে। প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন কেন্দ্র জানায়, পীরগঞ্জ উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভায় ৯৯ হাজার ৬৩৯টি গরু, ২ হাজার ৯৬৮টি মহিষ, ১ লাখ ১৫ হাজার ৯৪০টি ছাগল এবং ১ হাজার ২০০ ভেড়া মিলে ২ লাখ ২০ হাজার গবাদিপশু রয়েছে। গত কোরবানির ঈদের আগে থেকেই উপজেলার সর্বত্র ব্যাপক হারে গবাদিপশুর খুরারোগের প্রাদুর্ভাব চলছে। এরই মধ্যে এ রোগে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ৫১টি গরু-বাছুরের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার গবাদিপশু। বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রজনন স্বেচ্ছাসেবীরা বলেন, ঈদের আগে থেকে এখন পর্যন্ত উপজেলায় খুরারোগে ২৫ থেকে ২৭ হাজার গবাদিপশু আক্রান্ত হয়েছে। এখনো বিক্ষিপ্তভাবে উপজেলার গবাদিপশুর মধ্যে খুরারোগ দেখা যাচ্ছে। বর্তমানে পীরগঞ্জে গবাদিপশুর চিকিৎসায় একমাত্র প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাই ভরসা। কিন্তু এ কর্মকর্তাকে চিকিৎসা কেন্দ্রে আসা গবাদিপশুগুলো এক হাতে চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সরেজমিনে ইউএলডিসিতে গিয়ে দেখা যায়, চিকিৎসা কেন্দ্রে ৬০ থেকে ৭০ জন কৃষক রোগাক্রান্ত গরু, ছাগল নিয়ে এসেছেন। রোগের পরামর্শ নিতে আর চিকিৎসককে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য দিনক্ষণ ঠিক করতে ধরনা দিয়ে বসে আছেন আরও ২৫ থেকে ৩০ জন। চিকিৎসা কেন্দ্রে আসা গুয়াগাঁও গ্রামের মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমার দুটি গরুর খুরারোগ হয়েছে। চিকিৎসককে বাড়িতে নিতে তিন দিন ধরে ধরনা দিচ্ছি। চিকিৎসক কোনো সময় দিতে পারছেন না। খুরারোগে আক্রান্ত হওয়ায় গরু দুটি হাঁটতেই পারে না। তাই গরু দুটিকে হাসপাতালে নিয়ে আসতে পারছি না।’ পশু চিকিৎসাকেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে গবাদিপশুর কৃত্রিম প্রজননে সহায়তার জন্য এক থেকে দুই মাসের প্রশিক্ষণ পাওয়া নয়জন বেসরকারি কৃত্রিম প্রজনন স্বেচ্ছাসেবী রয়েছেন। এ ছাড়া জাবরহাট ও লোহাগাড়ায় দুজন কৃত্রিম প্রজনন মাঠকর্মী (সরকারি) আছেন। এসব মাঠপর্যায়ের স্বেচ্ছাসেবী ও মাঠকর্মী গবাদিপশুর প্রজননকাজে সহায়তা করে থাকেন। কিন্তু পশু চিকিৎসক-সংকটে গ্রামের মানুষ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কৃত্রিম প্রজননে প্রশিক্ষণ নেওয়া স্বেচ্ছাসেবীদের কাছ থেকে গবাদিপশুর চিকিৎসা নিচ্ছেন। এতে অনেক কৃষকই গবাদিপশুর সুষম চিকিৎসা পাচ্ছেন না। কিন্তু টাকার অপচয় হচ্ছে ঠিকই। চন্দরিয়া গ্রামের আবদুল মজিদ বলেন, ‘১৫ নভেম্বর আমার একটি বাছুর খুরারোগে মারা গেছে। বাড়িতে আরও পাঁচটি গরুর এ রোগ হয়েছে। এত দিনে গ্রাম্য স্বেচ্ছাসেবীর কাছে চিকিৎসা করাতে দুই হাজার টাকা খরচ করলাম। তাও বাছুরটা মরে গেল। এখন ডাক্তারকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য দুদিন থেকে হাসপাতালে ঘুরছি। ডাক্তার সুযোগই পাচ্ছেন না।’ প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, ঈদ থেকে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত ৫৫টি গরু খুরারোগে মারা যাওয়ার খবর পেয়েছেন তিনি। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘একটু কষ্ট করে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলেই সঠিক চিকিৎসা পেলে গরুটা বেঁচে যায়। অথচ গ্রামে স্বেচ্ছাসেবীর কাছে চিকিৎসা নিয়ে কৃষক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। আর অপচিকিৎসার শিকার হয়ে মারা যাচ্ছে অনেক গরু। অনেক ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবীর অপচিকিৎসায় গরু মারা যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।’ প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আমি ভিএস থেকে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হয়েছি। তাই গবাদিপশুর চিকিৎসা সম্পর্কে আমার জানা আছে। আমি অফিসারের মতো বসে থাকলেও পারি। কিন্তু রোগাক্রান্ত গরু-ছাগলের চিকিৎসা না দিলে মানুষ যাবে কোথায়? তবে আমার একার পক্ষে সামলানো সম্ভব হচ্ছে না। প্রশিক্ষণে যাওয়া ভিএসের শূন্য পদে প্রেষণে পীরগঞ্জে একজন পশু চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হলে দুজনে মিলে গরু-ছাগলের চিকিৎসা দিতে পারি।’
×