ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিনিয়োগ হচ্ছে না কেন

প্রকাশিত: ০৩:২৫, ১৮ নভেম্বর ২০১৫

বিনিয়োগ হচ্ছে না কেন

রবিবার ঢাকায় ‘বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরাম-২০১৫’-এর উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) বাস্তবায়নে উন্নত দেশসমূহকে আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। অত্যন্ত দরকারি কথা তিনি খোলাখুলি সহজ ভাষায় বলে দিয়েছেন। তার ভাষ্যÑ ‘এসডিজি বাস্তবায়নে আরও সম্পদ চাই। এজন্য আরও সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) প্রয়োজন।’ বাংলাদেশ সামগ্রিক বিচারে উন্নতির ধারায় থাকলেও বিনিয়োগে বিরাজ করছে এক অনাকাক্সিক্ষত স্থবিরতা। প্রশ্ন হচ্ছে- বিনিয়োগ হচ্ছে না কেন? বছর শেষ হয়ে আসছে। বছরের শুরুতে অর্থনীতি কিছুটা হোঁচট খেয়েছিল একটি রাজনৈতিক দলের সন্ত্রাসী কর্মকা-ের কারণে। আগের বছরের ধারাবাহিকতায় চলতি বছরেও রফতানি প্রবৃদ্ধি গতিশীলতা পেয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও শক্তিশালী, বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা বিদ্যমান এবং মূল্যস্ফীতি স্বস্তিজনক পর্যায়ে অবস্থান করছে। জনশক্তি রফতানি এবং প্রবাসী আয়ও বৃদ্ধি হয়েছে। বেসরকারী গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি ২০১৪-১৫ : অন্তর্বর্তীকালীন পর্যালোচনা’ শীর্ষক সেমিনারে উপস্থাপিত মূল প্রতিবেদনে বেশ কিছু পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনটি নিয়ে আলোচনাকালে সিপিডির একজন ফেলো মন্তব্য করেন রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে দেশে বিনিয়োগ বাড়ছে না। বাংলাদেশ যখন বাইরের বিনিয়োগ বাড়ানোকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে এবং সে লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপও গৃহীত হচ্ছে সে সময়ে এ ধরনের মন্তব্য বহির্বিশ্বকে নেতিবাচক বার্তা দিয়ে থাকতে পারে। কিছু বিরুদ্ধতা ও প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে সামনের দিকে। অনেকটা শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকার কারণেই দেশের অর্থনৈতিক কর্মকা- সচল থেকেছে। অর্থনীতির এমন শক্তিশালী অবস্থান বিগত চার দশকে এ মাত্রায় পরিলক্ষিত হয়নি। রাষ্ট্রের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি শিল্প খাত। তেমনি আবার শিল্প খাতের অপরিহার্য চালিকাশক্তি বিদ্যুত। শিল্প খাতের প্রসার ও শিল্প-উৎপাদন বাড়িয়ে শিল্প খাতের সুদিন ফেরাতে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করে চলেছে। বাংলাদেশ যে ক্রমশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নতির স্বাক্ষর রাখতে শুরু করেছে তার বড় উদাহরণ বিদ্যুত খাতে সক্ষমতা অর্জন। সে সক্ষমতার সুবাদেই আজকে শিল্প খাত সম্প্রসারণের সুযোগ তৈরি হয়েছে। অর্থনীতির সব সূচক যখন ভাল অবস্থানে রয়েছে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে, এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ তখন একটা ইস্যু তৈরি করে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম নষ্টের চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে একটি মহল- তা ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে উঠছে। বর্তমান সরকার প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগের জন্য দেশের বিভিন্ন এলাকায় ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে এবং অধিকতর বৈদেশিক বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রমও বাস্তবায়ন করছে। তাই বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীরা নির্দিষ্টভাবে কোন্ বিষয়গুলোকে প্রতিবন্ধকতা বলে গণ্য করছে সেগুলো শনাক্ত হওয়া জরুরী। বিশ্ব পরিসরে বাংলাদেশকে নিয়ে অপপ্রচার রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে বর্তমানে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ভাল। বিনিয়োগের জন্যও যে এটি সুবর্ণ সময় এ যুক্তিগুলো ছোট ও বড় সব স্তরের বিনিয়োগকারীর সামনে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার বিকল্প নেই।
×