ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদার

সারাদেশে সর্বোচ্চ সতর্কতায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনী

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ১৮ নভেম্বর ২০১৫

সারাদেশে সর্বোচ্চ সতর্কতায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনী

শংকার কুমার দে ॥ যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের রিভিউয়ের রায় বুধবার, একই দিনে আরেক যুদ্ধাপরাধী বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী (সাকা চৌধুরী) রিভিউয়ের শুনানি, অস্ট্রেলিয়া ফুটবল দলের বাংলাদেশ সফর, ঢাকায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত স্বরাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক, বাংলাদেশে ডাচ্ রানীর সফর- ‘একই সময়ে আলোচিত পাঁচ ঘটনার নিরাপত্তা বিধান করা বিদেশীদের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার সুবর্ণ সুযোগ।’ ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ভয়াবহ হামলা হতাহতের ঘটনায় যখন বিশ্বজুড়ে ইসলামিক স্টেট (আইএস) আতঙ্ক, তখন বাংলাদেশে একই সময়ে আলোচিত পাঁচ ঘটনার নিরাপত্তা বিধান করা হয়েছে নজিরবিহীন। এ জন্য নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হয়েছে রাজধানী ঢাকা, আর সারাদেশে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে আইন-শৃৃঙ্খলা বাহিনীকে। বিশেষ করে হাইকোর্ট এলাকা, বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম, হোটেল সোনারগাঁও, হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর এলাকা ও কুটনৈতিক এলাকাসহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যাপক জোরদার করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ খবর জানা গেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানান, বিজিবি, র‌্যাব, এপিবিএন, পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ২০ হাজার সদস্যকে মোতায়েন ও সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে। এ ছাড়াও প্রস্তুত রাখা হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষায়িত ইউনিট স্পেশাল ওয়েপন এ্যান্ড টেকটিশ (এসডব্লিউএটি-সোয়াত), বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, সোয়াট ও ক্রাইসিস রেসপন্স টিম, ডগ স্কোয়ার্ড। এ ছাড়াও আপদকালীন মুহূর্ত মোকাবেলায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ছাড়াও একাধিক সিভিল টিম থাকছে। মহিলা পুলিশের অন্তত একাধিক টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। রাজধানী ঢাকায় বসানো হচ্ছে সিসি টিভি ও গোপন মুভি ক্যামেরা। বেশকিছু পয়েন্টে আর্চওয়ে মেটাল ডিটেক্টর বসানো হবে। কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে থাকছে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও ভবনগুলো। জঙ্গীসহ উগ্র মৌলবাদী রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর নজরদারি করা হচ্ছে। বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিদের নিরাপত্তাও জোরদার করা হয়েছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানান, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে মানবতা বিরোধী অপরাধের মৃত্যুদ- সাজাপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল যুদ্ধাপরাধী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের চূড়ান্ত রায় ঘোষণা এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী (সাকা চৌধুরী) রায়ের শুনানিকে নাশকতা চালানোর আশঙ্কার কথা প্রকাশ করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। নাশকতা, ভাংচুর, বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে পারে জামায়াত-শিবির, যুদ্ধাপরাধী ও জঙ্গীগোষ্ঠী। এ জন্য বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা-সহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর আগে জামায়াতের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় ঘোষণার পর জামায়াত-শিবির যেভাবে দেশব্যাপী নাশকতা চালিয়েছে তার পুনরাবৃত্তি যাতে বিএনপি না ঘটাতে পারে সেই জন্য আগাম আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই প্রথমবারের মতো কোন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতার যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে হাইকোর্ট ভবন এলাকায় নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। তিন স্তরের নিরাপত্তায় র‌্যাব, সোয়াত, পুলিশ, গোয়েন্দা, দাঙ্গা পুলিশ, বোম ডিসপোজাল ইউনিটসহ পুলিশের নিñিদ্র নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হবে। জলকামান, এপিসি, পিপার স্প্রে, টিয়ারগ্যাসসহ সব ধরনের প্রযুক্তির ব্যবহার করার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ডিএমপি সূত্র জানান, হাইকোর্ট ভবনের চতুর্দিকে র‌্যাব, সোয়াত, পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা, দাঙ্গা পুলিশ সদস্যরা ঘিরে রাখবে। হাইকোর্ট ভবনের গেটে ও আশপাশের এলাকায় বিপুলসংখ্যক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হবে। পুলিশের নিরপত্তা বেষ্টনীর আওতায় আনা হয়েছে হাইকোর্ট ভবন এলাকাটি। এ ছাড়াও রাজধানী ঢাকার মোড়ে মোড়ে তল্লাশী, চেকপোস্ট বসানো, সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। রাজধানীর প্রবেশ পথগুলো ছাড়াও পল্টন, বিজয়নগর, কাকরাইল, মগবাজার, ফার্মগেট, মহাখালী, তেজগাঁও, সাতরাস্তা, শাহবাগ, আরামবাগ, মালিবাগ, শাহজাহানপুর, প্রেসক্লাব, দৈনিক বাংলার মোড়, শাপলা চত্বর, কমলাপুর, বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেট, উত্তর গেটসহ বিভিন্নস্থানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা টহল দেবে। পুলিশের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, দুই বিদেশী হত্যাকা-, হোসনি দালানের তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতিতে গ্রেনেড হামলা, দুই পুলিশ হত্যাকা-, এক প্রকাশক হত্যাকা- ও অপর প্রকাশক, লেখক ও ব্লগারদের ওপর হামলা করে ছুরিকাঘাত করার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও বিদেশী দেশগুলোর প্রতিক্রিয়ার পর দেশের ভেতরে একই সঙ্গে পাঁচ পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। একই সময় এসব ঘটনার নিরাপত্তা বিধান আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য এক দিকে যেমন চ্যালেঞ্জ, অপর দিকে বিদেশী রাষ্ট্রগুলোর কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার একটা সুবর্ণ সুযোগও বটে।
×