ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আগামীকালের মধ্যেই বিধিমালা চূড়ান্ত করতে হবে

পৌর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে পারছে না ইসি

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ১৮ নভেম্বর ২০১৫

পৌর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে পারছে না ইসি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ডিসেম্বরে পৌরসভা নির্বাচন নির্ভর করছে সংশোধিত আইন ও বিধিমালার ওপর। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ডিসেম্বরের পৌরসভা নির্বাচন করতে হলে আগামী সপ্তাহেই তফসিল ঘোষণা করতে হবে। তার আগে আগামীকাল বৃহস্পতিবারের মধ্যেই আইন মন্ত্রণালয় থেকে বিধিমালা চূড়ান্ত করতে হবে। অথচ সংশোধিত স্থানীয় সরকার আইন এখনও সংসদে পাস হয়নি। আইন পাস না হওয়ায় আটকে আছে বিধিমালা চূড়ান্তকরণের কাজ। এ কারণে প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে পারছে না ইসি। কমিশন জানিয়েছে, আগামী সপ্তাহে মেয়াদ উত্তীর্ণ পৌরসভার তফসিল দেয়া না গেলে নির্বাচন পিছিয়ে দিতে হবে। গত ১২ অক্টোবর দলভিত্তিক স্থানীয় সরকার পরিষদ নির্বাচনের প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেয়া হয়। এরপর গত ৩ নবেম্বর সংশোধিত আইনটি অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হয়। কিন্তু অধ্যাদেশ জারির পরও নতুন করে আইনে সংশোধনী এনে আবার তা মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেয়া হয়। বর্তমানে আইনটি সংসদে পাসের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় সরকারমন্ত্রী এর আগে জানান, আজ বুধবার সংসদে এ আইনটি পাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সংশোধিত আইন পাসের পর পৌরসভা নির্বাচন বিধিমালায় কিছু পরিবর্তন এনে চূড়ান্ত করতে হবে। এ কারণে আইন পাসের আগে বিধিমালা চূড়ান্ত হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। এ অবস্থায় পৌরসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েও হাত গুটিয়ে বসে আছে নির্বাচন কমিশন। তারা জানিয়েছে, বিধিমালা না আসায় ইসি কোন কাজ করতে পারছে না। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদ ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন, নির্বাচনী বিধিমালা নির্বাচন কমিশনের (ইসি) হাতে না আসা পর্যন্ত পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে না। বিধিমালা এখনও মন্ত্রণালয়ে আছে। এটা না আসলে আমরা কোন কাজ করতে পারছি না। বিধিমালা হাতে আসলেই আমরা কাজ শুরু করব। ইসি কর্মকর্তারা বলেন, বিধিমালা চূড়ান্ত হলেও এরপর তা গেজেট আকারে প্রকাশ করতে হবে। বিধিমালার গেজেট প্রকাশের পরই কেবল তফসিল ঘোষণা করা সম্ভব হবে। তারা বলছেন বৃহস্পতিবার আইন মন্ত্রণালয় থেকে বিধিমালা চূড়ান্ত করে তা ইসিতে পাঠালে আগামী সপ্তাহের প্রথম দিকেই পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার সম্ভাবনা রয়েছে। আর এ ক্ষেত্রে ডিসেম্বরে শেষে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ইসির হাতে পর্যাপ্ত সময় থাকবে। আর যদি বৃহস্পতিবার বিধিমালা চূড়ান্ত করা সম্ভব না হয় সেক্ষেত্রে সঠিক সময়ে নির্বাচন করা ইসির পক্ষে সম্ভব হবে না। পিছিয়ে যাবে পৌরসভা নির্বাচন। ইসির উপসচিব (আইন) মহসিনুল হক বলেন, বৃহস্পতিবার বিধিমালা চূড়ান্ত হবে কিনা তা নির্ভর করছে আইন মন্ত্রণালয়ের ওপর। বিধিমালা হাতে না পাওয়া পর্যন্ত বলা সম্ভব হচ্ছে না কবে নাগাদ এটি চূড়ান্ত হবে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, সময়সীমা সংক্রান্ত বাধ্যবাধকতার কারণে দেশের প্রায় আড়াই শ’ পৌরসভার নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করতে হবে। এ নির্বাচন সঠিক সময়ে করা না গেলে নানা ধরনের আইনগত জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। বিশেষ করে পৌরসভাার মেয়াদ শেষ হলে সেখানে প্রশাসক নিয়োগের মতো জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। আবার জানুয়ারিতে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করতে হবে। সেক্ষেত্রে পৌরসভা নির্বাচন পিছিয়ে গেলে বিদ্যমান ভোটার তালিকা দিয়ে পৌরসভা নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। তখন নতুন ভোটার অন্তর্ভুক্ত করে ভোটার তালিকা প্রস্তুত করতে হবে। এছাড়াও ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে দেশব্যাপী এসএসপি পরীক্ষা। সেক্ষেত্রে ভোট কেন্দ্র নিয়ে সমস্যা হতে পারে। মার্চ থেকে জুলাই পর্যন্ত কয়েক দফায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। পৌরসভা নির্বাচন পিছিয়ে গেলে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন পিছিয়ে দিতে হবে। তারা বলেন, বৃহস্পতিবার বিধিমালা ইসির হাতে আসলেও ডিসেম্বরের নির্বাচনের জন্য ইসি প্রায় ৪০ দিন হাতে সময় পাবে। প্রার্থীদের যথেষ্ট সময় দিয়ে নির্বাচন পরিচালনা করা সম্ভব হবে। তা নাহলে পৌরসভা নির্বাচন পিছিয়ে দিতে হবে। নির্বাচন কমিশনার জাবেদ আলী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন ডিসেম্বরে নির্বাচন করতে হলে আগামী সপ্তাহে পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে হবে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে বিধিমালা কমিশনের হাতে না এলে এ নির্বাচন নিয়ে আগাম কিছু বলা সম্ভব হবে না। এ অবস্থায় দলভিত্তিক পৌর নির্বাচনের সংশোধিত বিধিমালার চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে আইন মন্ত্রণালয়ের দিকে তাকিয়ে রয়েছে নির্বাচন কমিশন। সংশোধিত বিধিমালা ভেটিংয়ের জন্য গত ৫ নবেম্বর আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এরই মাঝে স্থানীয় সরকার পরিষদ আইনের অধ্যাদেশ রহিত করে তা বিল আকারে সংসদে উপস্থাপন করা হয়েছে। এখন বিধি চূড়ান্ত হওয়ার আগে সংসদে আইন পাসের পরই কেবল এ আইনের আলোকে নির্বাচন করতে হবে ইসির। এ কারণে থেমে আছে বিধি চূড়ান্ত হওয়ার কাজ। জানা গেছে, সংশোধিত আইন পাসের পর ওই আইনের আলোকে সংশোধিত বিধিমালায় পরিবর্তন এনে তার চূড়ান্ত অনুমোদন করতে হবে। এতদিন ধরে স্থানীয় নির্বাচন নির্দলীয়ভাবে হলেও সম্প্রতি আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয় সরকার। এর ফলে রাজনৈতিক নেতাদের সংসদ নির্বাচনের মতোই নৌকা, ধানের শীষ, লাঙলের মতো প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়। ডিসেম্বরে পৌর নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা থাকায় এ ক্ষেত্রে সংসদ বসার জন্য অপেক্ষা না করে অধ্যাদেশ জারি করে আইন কার্যকর হয়। কিন্তু আইনটিতে নতুন করে সংশোধনী এনে মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের ফলে অধ্যাদেশ রহিত করা হয়। ফলে সংশোধিত আইনটি এখন সংসদে পাসের অপেক্ষায় রয়েছে। আইন পাসের পরই কেবল ইসি পৌরসভা নির্বাচনের উদ্যোগ নিতে পারবে।
×