ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সৈয়দ মাজহারুল পারভেজ

সেই অস্ট্রেলিয়া, এই বাংলাদেশে

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১৮ নভেম্বর ২০১৫

সেই অস্ট্রেলিয়া, এই বাংলাদেশে

অস্ট্রেলিয়ার ফুটবল দল ২১তম বিশ্বকাপ ফুটবলের বাছাইপর্বের ফিরতি ম্যাচ খেলে দেশে ফিরে গেছে। যদিও অস্ট্রেলিয়ার আসা না আসা নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই সংশয় ছিল। চলছিল জল্পনা-কল্পনা। শেষ পর্যন্ত সমস্ত জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অস্ট্রেলিয়া এলো, খেলল এবং চলেও গেল। অথচ ক’দিন আগে বাংলাদেশের সঙ্গে এই অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ক্রিকেট সিরিজ বাতিল হওয়ায় এ দেশের ক্রিকেটামোদী দর্শকরা যারপরনাই হতাশ হয়েছিল। অজিদের দেখাদেখি স্প্রিবক উইমেন ক্রিকেট টিমও তাদের সফর বাতিল করে। অস্ট্রেলিয়ার বদলে জিম্বাবুয়ে। জিম্বাবুয়ের এই সফর অনেকটা দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতো। অস্ট্রেলিয়া না আসুক, জিম্বাবুয়ে তো এলো। আমরা তো একটা সিরিজ খেলতে পারলাম। ক্রিকেটে আমাদের গত তিন বছরের উন্নতি বলা যায় অভাবনীয়। গত তিন বছর ধরে আমরা যে বাংলাদেশকে দেখছি এ এক অন্য বাংলাদেশ। ১৯৮৬ সালে দ্বিতীয় এশিয়া কাপে ৩১ মার্চ শ্রীলঙ্কার মোরাতুয়ায় পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক অভিষেকের পর প্রথম ম্যাচ জয়ের জন্য বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হয়েছে বারো বছর। একযুগ পর ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশের ২৩তম ম্যাচে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। প্রথম ম্যাচ জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ। ভারতে অনুষ্ঠিত তিন জাতি ক্রিকেটে হায়দ্রাবাদে স্পিনার রফিকের ব্যাটিং নৈপুণ্যে মেডেন জয় পায় বাংলাদেশ। রফিক খেলেন ৭৭ রানের এক অনবদ্য ইনিংস। স্বভাবতই ম্যান অব দ্য ম্যাচও তিনি। যদিও তিনি একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম ম্যান অব দ্য ম্যাচ নন। তারও আগে বাংলাদেশের নবম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ইডেন গার্ডেনে আতাহার আলী খান দেশের পক্ষে প্রথম ম্যাচসেরার পুরস্কার নেন। সেটা ১৯৯০ সালের কথা। যদিও সে ম্যাচ জিততে পারেনি বাংলাদেশ তবুও আতাহারের লড়াকু অপরাজিত ৭৮ রানের ইনিংসটি বুঝিয়ে দিয়েছিল আজ না পারলেও কাল ঠিকই পারবে বাংলাদেশের দামাল ছেলেরা। এ কথাটা লেখার উদ্দেশ্য হচ্ছে, সেদিন বাংলার টাইগাররা পারেনি ঠিকই তবে সেদিনের পথ ধরে আজ পারছে। আজ আর টাইগারদের ম্যাচ বা সিরিজ অথবা টুর্নামেন্ট জিততে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয় না। আজ ওরা সত্যি সত্যি টাইগার হয়ে উঠছে। এই টাইগারদের আজ ক্রিকেটের পরাশক্তিগুলোও ভয় পাচ্ছে, সমীহ করছে। বিশেষ করে বিশ্বকাপে অসামান্য নৈপুণ্যেও পর গত এক বছর ধরে দেশের মাটিতে পাকিস্তান, ভারত ও দ. আফ্রিকার বিপক্ষে যেভাবে জিতেছে তাতে করে বাংলাদেশকে এখন আর কারোরই সমীহ না করে উপায় নেই। এখন আর বাংলাদেশকে ছোট দল বলে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করার দুঃসাহস দেখাবার হিম্মত কারও নেই। আর সে কারণেই অস্ট্রেলিয়া সন্ত্রাসের অজুহাতে বাংলাদেশ সফর বাতিল করে। বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বড় সন্ত্রাসী কর্মকা-ের পরেও অস্ট্রেলিয়া অনেক দেশেই খেলেছে। তা নিয়ে অনেক লেখালেখিও হয়েছে। সুতরাং চর্বিত চর্বনে গিয়ে লাভ নেই। অস্ট্রেলিয়া ফুটবল দল যে বাংলাদেশে এসেছে এ তো সেই বাংলাদেশ। ক’দিন আগে যে বাংলাদেশে সন্ত্রসী কর্মকা-ের অপবাদ দিয়ে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল তাদের সফর বাতিল করেছিল। সেই দুই বিদেশী হত্যার পর বাংলাদেশে আর কোন সন্ত্রাসী কর্মকা- ঘটেনি তা নয়। তারপরও অস্ট্রেলিয়া ফুটবল দল এসেছে। তাদের আসতে হয়েছে। মোদ্দা কথা হচ্ছে, ভয়! ভয় পেয়েছিল অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল। ৫ বার বিশ্বকাপ জয়ের পর বাংলাদেশের তো একটি দলের কাছে হারাটা তাদের ইগোতে লাগবে তাই তাারা আসেনি। লাগাটাই স্বাভাবিক। সেই অস্ট্রেলিয়ারই ফুটবল দল যখন বাংলাদেশে খেলতে আসে তখন কিছু কথা থেকেই যায়। প্রশ্ন ওঠে ফিফা আর আইসিসির ক্ষমতা নিয়ে। ফিফা যেটা করে দেখাল আইসিসি সেটা পারেনি। ফিফা আর আইসিসির ক্ষমতার পাথর্ক্যটা স্পষ্ট হয়ে যায়। আজ অস্ট্রেলিয়ার ফুটবল দল যদি বাংলাদেশে খেলতে না আসত তাহলে তাদের ২০১৮ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিতব্য ২১তম বিশ্বকাপ ফুটবলে অংশ নেয়ার সুযোগ হাত ছাড়া হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর সেটা হোক অস্ট্রেলিয়া তা চায় না। কেননা, ফিফা অস্ট্রেলিয়াকে তোয়াক্কা করে না। অস্ট্রেলিয়ার কোন আবেদন-নিবেদন ফিফার কান পর্যন্ত পৌঁছাবে না। আর তাই সে সুযোগটা হাতছাড়া করতে রাজি নয় অস্ট্রেলিয়া। কারণ তারা জানে এশিয়া জোন থেকে তাদের বিশ্বকাপের চূড়ান্তপর্বে খেলা অনেকটাই নিশ্চিত। ফলে তারা এসেছে। এখন আর কোন অজুহাত দেখাতে চায়নি তারা। কিন্তু আইসিসি প্রমাণ করেছে যে তাদের ক্ষমতা এতটা বেশি নয় যে তারা শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে অস্ট্রেলিয়া, ভারত বা ইংল্যান্ডের মতো বড় দলের বিপক্ষে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে। সেটা পারলে তো এ বছর অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ১১তম বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সেমি-ফাইনালে খেলতে পারত বাংলাদেশ। পারেনি। কারণ ভারতের বিপক্ষে রায় দেয়ার ক্ষমতা আইসিসির ছিল না। ফলে বিশ্বকাপসহ বার বার বাংলাদেশ ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশ সফল বাতিল করায় আরও একবার ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হতে হলো। অস্ট্রেলিয়া না আসার কারণে দ. আফ্রিকার প্রমীলা দলও বাংলাদেশ সফর বাতিল করে। ফলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি খানিকটা হলেও কমে যায়। আর সেটা অস্ট্রেলিয়ার কারণে। বাংলাদেশের অনেক ক্ষতিও হয়ে গেছে। একটা উজ্জীবিত দলের গতিতে ছেদ পড়েছে। আর পড়েছে বলেই জিম্বাবুয়ের কাছে শেষ টি-২০ ম্যাচে হারতেও হয়েছে। এরপর সেই অস্ট্রেলিয়ার ফুটবল দল যখন এই বাংলাদেশে খেলতে আসে তখন অবাক না হয়ে পারা যায় না। একেই বুঝি বলে ‘স্ব-বিরোধীতা।’ এমন নীতি কোন শুভ ফল বয়ে আনতে পারে না। হয়ত ফুটবলেও একদিন এমন দিন আসবে যখন ক্রিকেটের মতো ফুটবলেও হারার ভয়ে অনেক দেশ আসতে চাইবে না। সে দিনের অপেক্ষায় রয়েছে গোটা বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ। লেখক : সাহিত্যকর্মী [email protected]
×