ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তবুদ্ধির প্রতিপক্ষ একাত্তরের পরাজিত শক্তি

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ১৯ নভেম্বর ২০১৫

মুক্তবুদ্ধির প্রতিপক্ষ একাত্তরের পরাজিত শক্তি

নাহিদা ইয়াসমিন বাংলাদেশে আজ মুক্তবুদ্ধির চর্চা হুমকির সম্মুখীন। এই সমস্যা আজকের বলাটাও ঠিক নয়। বাংলাদেশ সৃষ্টির সময় থেকেই মুক্তবুদ্ধির চর্চা হুমকির মুখে ছিল। যারা মুক্তবুদ্ধিধারীদের পছন্দ করেন না, বলা যায় তাদের নিজেদের জন্য হুমকি মনে করেন, তারা মুক্তবুদ্ধির চর্চাকে ভয় পান। আর এ কারণেই তারা মুখোমুখি যুদ্ধ করার সাহস না দেখিয়ে পিছন থেকে আঘাত করে। যুক্তির সামনে যুক্তি উপস্থাপনে অপারগ বলে চাপাতিই তাদের সম্বল। প্রথমত ভেবে দেখা যায় মুক্তবুদ্ধির চর্চার ওপর কেন এই হুমকি। কারণ যারা শুধু বুদ্ধির চর্চা করে না মুক্তবুদ্ধির চর্চা করে তারা অযৌক্তিক কাজ এবং ধারণাগুলোকে খুব সহজেই খ-ন করতে পারে। মানুষের কাছে সহজভাবে তুলে ধরতে পারে। যা সাম্প্রদায়িক, ধর্ম ব্যবসায়ীদের বেঁচে থাকার জন্য হুমকিস্বরূপ। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সাম্প্রদায়িক, ধর্ম ব্যবসায়ী যদি হয় মুদ্রার এপিঠ, তবে অপরপিঠ হলো বাংলাদেশ বিরোধী, বাঙালী জাতীয়তাবাদ, বাঙালী সংস্কৃতি বিরোধী। আর এইসব বর্ণচোরারা সবসময়ই ধর্মকে পুঁজি করে রাজনীতি করছে, ব্যবসা করছে এবং সামাজিক সংগঠন করছে। সাধারণ মানুষকে বোকা বানাচ্ছে। আর তাদের এ কাজের কঠিন অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় মুক্তবুদ্ধির চর্চাকারীরা। কারণ মুক্তবুদ্ধির মানুষদের বোকা বানানো কঠিন। তৃতীয়ত, লক্ষ্য করলে দেখা যায়, বাংলাদেশে যারাই এ ধরনের হত্যার শিকার হয়েছেন বা আহত হয়েছেন বা হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন, এদের প্রত্যেকে কোন না কোনভাবে ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন বা আছেন। আর ইতিহাস বলে এই যুদ্ধাপরাধীর দল জামায়াতে ইসলাম। যাদের মূল উদ্দেশ্য ধর্ম প্রতিষ্ঠা নয়, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা। তাই তাদের লেজে যখন আগুন লাগবে তারা যে বসে থাকবে না, এটাত ইতিহাস থেকেই জানি। এ কথাটা যেদিন বাংলাদেশের প্রত্যেকটি মানুষ বুঝবে সেদিন বাংলাদেশ থেকে সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা এবং জামায়াত নির্মূল হবে। চতুর্থত, আমাদের সমাজের একটি শিক্ষিত শ্রেণীর মানসিকতা, যা জামায়াতের থেকেও ক্ষতিকর। এরা প্রত্যেকটি খুনের পর বলার চেষ্টা করেন যে, যারা খুন হয়েছেন তাদের নামে দেয়া অপবাদ ঠিক নয়, তারা নাস্তিক নন, তারা ধর্মবিরোধী নন। যেমন প্রকাশক দীপনের মৃত্যুর পর অনেকেই বলতে শুরু“করলেন, দীপন যেমন অভিজিত রায়ের বই প্রকাশ করেছেন তেমনি অনেক ইসলাম ধর্মের ওপর লেখা বইও প্রকাশ করেছেন। তাহলে কি ধরে নেব যে যদি দীপন ইসলাম ধর্মের ওপর লেখা কোন বই না প্রকাশ করত, তবে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করাটা জায়েজ হয়ে যেত? এই চিন্তা চেতনার শিক্ষিত লোকজনের জন্যই বাংলাদেশে জামায়াত-শিবির যুগে যুগে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে এবং তাদের বিচার শুরু করতে এতটা বছর সময় লেগেছে। এই মানুষগুলো সবসময় দুই নৌকায় পা দিয়ে চলে আর সুবিধা ভোগ করে। এরাও আরেক প্রকারের ভ-। পঞ্চমত, যদি ধরেও নেই অনলাইন লেখকরা ধর্মবিরোধী কথা লেখে ও প্রকাশ করে। এতে আমাদের ইমানদার মনে যদি আঘাত লাগে তবে পালটা যুক্তি কেন দেয়া হয় না? সুস্থ যুক্তিতর্কের আলোচনাই তো জ্ঞানের জানালাগুলো খুলে দেবে। আর আমাদের ইমান কি এতই ভঙ্গুর যে কারও লেখায়, কারও বই প্রকাশে তা ভেঙ্গে যাবে? আর আদৌ কি এইসব খুনের মূল উদ্দেশ্য ধর্মানুভূতি বনাম মুক্তবুদ্ধি? না এইসব হত্যার পিছনের গল্প একটাই- ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার? তাই যতদিন এদেশ থেকে যুদ্ধাপরাধী, জামায়াত, শিবিরের মূলোৎপাটন করা না যাবে ততদিন ধর্মানুভূতির নামে মৌলবাদের মুখোশ পরে মুক্তবুদ্ধি চর্চাকারীদের হত্যা করা হবে। আরামবাগ, ঢাকা থেকে
×